নেতাজির জন্মদিনে গান লিখলেন উত্তমকুমার, সুরও দিলেন

তিনি বাঙালির ম্যাটিনি আইডল। এখনও বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর মতো নায়ক আসেনি – এ-কথা বলে থাকেন অনেকেই। মহানায়ক উত্তমকুমারের ক্যারিশমা ও জনপ্রিয়তার কথা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু দেশপ্রেমিক উত্তমকুমার? কেমন ছিলেন তিনি? তাঁর কৈশোরে, ভারত যখন পরাধীন, তখন উত্তম কী করেছিলেন, সে-তথ্য হয়তো অনেকেরই জানা নেই।

১৯৪২। উত্তমকুমার তখন ১৬ বছরের কিশোর। অবশ্য তখনও ‘উত্তম’ হননি তিনি। অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়। দেশে তখন রাজনৈতিক ডামাডোল। মহাত্মা গান্ধী ডাক দিয়েছেন ভারত ছাড়ো আন্দোলনের। মেদিনীপুরে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারালেন মাতঙ্গিনী হাজরা। ভবানীপুরে বসে কিশোর অরুণ খবর রাখছেন সবেরই। ভেতরে-ভেতরে ফুঁসছেন। নিজের মতো করে প্রতিবাদ ও দেশপ্রেমের পথও খুঁজে নিচ্ছেন তিনি।

কী ছিল সেই পথ? পরবর্তীকালের স্মৃতিচারণে উত্তম কুমার জানিয়েছেন নিজেই। বন্ধুদের জুটিয়ে ভবানীপুরে প্রভাতফেরি করতেন তাঁরা মাঝেমধ্যেই। হাতে থাকত ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা। আর দেশাত্ববোধক গান লিখে সুর দিতেন উত্তম নিজেই। পথে-পথে ঘুরে সবাই মিলে গাইতেন সেই গান।

উত্তম ও তাঁর বন্ধুরা প্রভাতফেরি বের করেছিলেন ১৯৪৫-এর ২৩ জানুয়ারিও। নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজ তখন লড়ছে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। সে-বছর সুভাষের জন্মদিনে উত্তমকুমার লিখলেন একটি গান। সুরও দিলেন তাতে। প্রভাতফেরীতে দল বেঁধে গাইলেন গানটি –

সুভাষেরই জন্মদিনে গাইব নতুন গান
সেই সুরেতে জাগবে মানুষ
জাগবে নতুন প্রাণ

কিছুদিন পরে, একে একে ধরা পড়ল আইএনএ-র সৈন্যরা। লালকেল্লায় তাঁদের বিচার। উকিল ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রয়োজন প্রচুর টাকা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফান্ড তোলা হতে লাগল আইএনএ-র জন্য। পিছিয়ে থাকেননি উত্তমও। সে-সময় উত্তম ‘লুনার ক্লাব’ নামের একটি ক্লাবের সদস্য ছিলেন। সেই ক্লাবের পক্ষ থেকে একটি চ্যারিটি শো-এর আয়োজন করলেন তাঁরা। মঞ্চস্থ হল বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’। নাটক থেকে আয় হল প্রায় ১৭০০ টাকা। সেই টাকা তুলে দেওয়া হয়েছিল সতীশচন্দ্র বসুর হাতে।

পরবর্তীকালে, উত্তম যখন মহানায়ক, ‘সব্যসাচী’ সিনেমায় একজন বিপ্লবীর ভূমিকায় অভিনয় করার সময় তাঁর কি মনে পড়েছিল সেই দিনগুলোর কথা? না, উত্তম এ-ব্যাপারে জানাননি কিছু। তবে স্মৃতিচারণে কৈশোরের দিনগুলো সম্পর্কে লিখেছিলেন – ‘আমাদের একমাত্র সহায় তখন নেতাজী। আমরা তখন নতুন আশার বাণীতে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি।’

আর পাঁচটা বাঙালির মতো, মহানায়কও যে আচ্ছন্ন ছিলেন সুভাষে, এ-ব্যাপারে কোনও সন্দেহ আছে কি?

More From Author See More