পা দিয়ে তির ছুঁড়ে বিশ্বজয়, প্যারালিম্পিকেও আমেরিকার ভরসা সেই তীরন্দাজই

দূরত্ব ২৪৮ মিটার। ধনুকের ছিলা থেকে ছুটে যাওয়া তিরেই বুলস আই। ২০১৫ সালে এমনই এক আশ্চর্য বিশ্বরেকর্ড তৈরি করেছিলেন মার্কিন তিরন্দাজ ম্যাট স্টাটজম্যান। কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় হল, একটিও হাত নেই তাঁর। শুধু কাঁধ আর পায়ের ব্যবহারেই এই কঠিনতম চ্যালেঞ্জকে পার করে গিয়েছিলেন ম্যাট। যে রেকর্ড ভাঙতে পারেননি সক্ষম ব্যক্তিরাও।

বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ প্যারালিম্পিক তারকা তিনি। আসন্ন প্যারালিম্পিকেও এবার ছাড়পত্র জোগাড় করে নিলেন ম্যাট। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ায় আয়োজিত ট্রায়ালে কম্পাউন্ড আর্চারি বিভাগে যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি। আর তাঁকে ঘিরেই এখন মেডেলজয়ের স্বপ্ন দেখছে গোটা মার্কিন মুলুক। 

তবে এই লড়াই খুব একটা সহজ ছিল না। ছোট থেকেই যে তাঁর নেই দুটো হাতই। কাজেই কর্মসংস্থান পাওয়াই দুষ্কর হয়ে উঠেছিল ম্যাটের। সেইসঙ্গে পাড়া-প্রতিবেশীদের তীর্যক কথার শিকার হতে হত হামেশাই। কিন্তু ঘরে বসে থাকলে তো আর অন্ন জুটবে না পরিবারের সদস্যদের মুখে। তাই জীবন নির্বাহের জন্য বিকল্প হিসাবে তিরন্দাজিকেই বেছে নিয়েছিলেন ম্যাট। 

না, কোথাও প্রথাগতভাবে তির চালানো শেখেননি তিনি। বরং, খিদের জালা মেটাতে শিকারের জন্যই নিজেই আয়ত্ত করেছিলেন ধনুকচালনা। হাত না থাকলেও পা দিয়েই ধনুক ধরার কায়দা রপ্ত করেছিলেন ম্যাট। আর তির ছোঁড়ার জন্য ব্যবহার করতেন তাঁর কাঁধ আর চিবুককে। বিষয়টা কতটা কঠিন তা বুঝিয়ে বলা বেশ মুশকিল। তবে ক্রমাগত অনুশীলনের মাধ্যমেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছেছেন ম্যাট স্টাটজম্যান। 

আরও পড়ুন
অলিম্পিকের স্বাস্থ্যবিধি অবৈজ্ঞানিক, দাবি স্বাস্থ্যবিদদের

প্রথমে হরিণ শিকার করেই সংসার চালাতেন তিনি। বহুপরে তাঁকে আবিষ্কার করেন ক্যালিফোর্নিয়ার এক তীরন্দাজ। পাল্টে যায় জীবনটাই। জাতীয়স্তর থেকে অল্পদিনের মধ্যেই ম্যাট হয়ে ওঠেন আন্তর্জাতিক তারকা। ২০১২ সালে লন্ডন প্যারালিম্পিকে পান রৌপ্যপদক। তাছাড়াও অ্যারিজোনা কাপ, প্যারাপান গেমস-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় মেডেল রয়েছে তাঁর নামে। রয়েছে দু’দুটি বিশ্বরেকর্ডও। সবথেকে বেশি দূরত্ব থেকে লক্ষ্যভেদ ছাড়াও ৫০-মিটার রাউন্ডে ১৪৪০ পয়েন্টের মধ্যে ১৩৯৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করে বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন ম্যাট। এবং দুটি বিশ্বরেকর্ডই কিন্তু প্রতিবন্ধী বিভাগে নয়। 

আরও পড়ুন
অলিম্পিক বন্ধের দাবিতে লক্ষাধিক স্বাক্ষর সংগ্রহ জাপানিদের

২০২১-এর প্যারালিম্পিক যেন নিজেকে প্রমাণ করার আরও একটা সুযোগ ম্যাটের কাছে। ‘আর্মলেস আর্চার’-খ্যাত ৩৮ বছরের বয়সী তীরন্দাজ নিজেও ফুটছেন আত্মবিশ্বাসে। চলছে কঠিন থেকে কঠিনতম অনুশীলন। প্রস্তুতি। আর তাঁর সাফল্যের প্রহর গুনছে গোটা মার্কিন প্রদেশ…

আরও পড়ুন
অলিম্পিকের আগে ক্রোয়েশিয়াই আস্তানা ভারতীয় শুটিং দলের

Powered by Froala Editor