ছোটো একটাকার কয়েনেই চলছে কেনাকাটা, আশ্চর্য বাজার বৈচিগ্রামে

কয়েক বছর আগেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাজারে এনেছে ছোটো একটাকার কয়েন। আকারে আয়তনে ঠিক আগের ৫০ পয়সার কয়েনের মতো। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তকমা আঁটা থাকলেও দেশের সর্বত্র এই কয়েনের বিনিময় শুরু হয়নি। গ্রামাঞ্চলে তো বটেই, কলকাতা শহর ছাড়িয়ে একটু মফঃস্বলের দিকে গেলেই দোকানিরা এই ছোটো কয়েন নিতে অস্বীকার করে। তর্কাতর্কি করেও কোনো লাভ নেই। গ্রামের মানুষের কাছে এই নতুন টাকাও তাই অচল। কিন্তু এই 'অচল' টাকাই যে দুর্দিনের দিনে কাজে আসবে সেকথা কে জানত!

হাওড়া-বর্ধমান মেইন লাইনে পান্ডুয়ার কিছু দূরের স্টেশন বৈচিগ্রাম। হুগলি জেলার এই গ্রামেই বসেছে এক অভিনব বাজার। বাজারের মূল উদ্দেশ্য অবশ্য লকডাউনের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য করা। এই পরিস্থিতিতে দিন আনি দিন খাই মানুষদের হাতে সামান্য রেশন তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন অনেকেই। তবে কেবল চাল, ডাল, আলু দিয়ে আর কতদিন চলবে! খানিকটা সব্জি না হলে কি আর প্রতিদিনের খাবার চলে? তাছাড়া বাঙালির সন্ধ্যায় একটু মুড়ি! এই সবই মিলবে বৈচিগ্রামের এই বাজারে। তবে এক্ষেত্রে বিনামূল্যে নয়। বরং মূল্য হিসাবে দিতে হবে ছোট এক টাকার কয়েন। অন্য কোনো টাকা দেওয়া যাবে না।

গ্রামের কিছু যুবক মিলে তৈরি করেছে 'আটচালা গ্রুপ'। এই দলের উদ্যোগেই সপ্তাহে তিনদিন; মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার বসছে এই বাজার। এই অভিনব বাজারের উদ্যোগ সম্পর্কে দলের কর্ণধার প্রীতম মুখার্জি জানিয়েছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও গ্রামেগঞ্জে অচল ছোটো একটাকার কয়েনকে চালু করতেই মূলত এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া অনেকে আছেন, চরম দারিদ্র্যের মধ্যেও বিনামূল্যে কিছু নিতে যাঁদের আত্মসম্মানে বাঁধবে। তাঁদেরও বোঝানো সম্ভব হচ্ছে যে, তাঁরা রীতিমতো মূল্য দিয়েই জিনিস কিনছেন।

বৈচিগ্রামের যুবকদের এই উদ্যোগ ইতিমধ্যে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে। বাজারে ভিড়ও হচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই। এবং বিক্রেতারা নিয়ম মেনে মাস্ক এবং গ্লাভস পরে জিনিস বিক্রি করছেন। ক্রেতাদের জন্যও মাস্ক বাধ্যতামূলক। সেইসঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার দিকেও দৃষ্টি রেখেছেন দলের সদস্যরা। এই মহামারীর পরিস্থিতিতে এমন নানা উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে বাংলার যুবকদের। তাঁদের এইসমস্ত উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার বিষয়। সেইসঙ্গে সমাজ সম্পর্কে গভীর ভাবনাচিন্তার ছাপও দেখা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই।

(ছবি - প্রতীকী)