হেনস্থার শিকার কেরালার প্রথম রূপান্তরকামী প্রার্থী অনন্যা, সরে দাঁড়ালেন নির্বাচন থেকে

অনন্যা কুমারী অ্যালেক্স। গত মাস থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল এই নামটাই। কেন না, কেরালা তথা ভারতের প্রথম রূপান্তরকামী প্রার্থী হিসাবে বিধানসভা নির্বাচন যুদ্ধে নেমেছিলেন তিনি। লিখিত হয়েছিল এক নতুন ইতিহাস। তবে ভোট শুরু হওয়ার ঠিক তিনদিন আগেই সরে দাঁড়ালেন নির্বাচনী প্রচার থেকে। অভিযোগ, রূপান্তরকামী হওয়ার কারণে লাগাতার হেনস্থার শিকার হয়ে চলেছেন তিনি।

ডেমোক্রেটিক সোশ্যাল জাস্টিস পার্টি (ডিজেএসপি)-র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন অনন্যা। মালাপুপুর জেলার ভেঙ্গারা আসনে হেভিওয়েট ইউডিএফ প্রার্থী পি কে কুণালিকুট্টির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনি। তারপরেও বেশ কিছু প্রাক-নির্বাচনী সমীক্ষা এগিয়ে রেখেছিল অনন্যাকে। তা সত্ত্বেও শেষ মুহূর্তে কেন এই ভোলবদল?

অনন্যা সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান, তাঁকে প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করানোর পিছনে রয়েছে বৃহত্তর চক্রান্ত। সংখ্যালঘু ভোট আদায় করাই ছিল রাজনৈতিক দলটির উদ্দেশ্য। প্রচার করতে হবে বোরখার আড়ালে থেকে। নিজের দলের রাজনৈতিক নেতারাই এমনটা চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁকে। তা অস্বীকার করায়, চলতে থাকে লাগাতার হেনস্থা। এমনকি ফোনে মৃত্যুর হুমকিও পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ অনন্যার। এখানেই শেষ নয়। বিরোধী প্রার্থীকে অকথ্য ভাষায় আক্রমণের জন্যও বার বার জোর করা হয় তাঁকে। তবে নীতিবিরুদ্ধ যে কোনো কাজ করতে অনিচ্ছুক, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেন অনন্যা।

পেশাগতভাবে একজন সফল সজ্জাশিল্পী। তাছাড়া মডেল এবং সংবাদ-উপস্থাপক হিসাবেও কাজ করেছেন বছর আঠাশের অনন্যা। কর্মক্ষেত্রেও বারবার শিকার হয়েছেন বৈষম্যের। রূপান্তরকামী এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অবস্থা সমাজে ঠিক কোথায়, তা সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন অনন্যা। গত মাসে ডিজেএসইপি প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দিলে তা সাদরে গ্রহণ করেন তিনি। লক্ষ্য ছিল এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের বহু-প্রত্যাশিত সাম্যাধিকার প্রতিষ্ঠা। তবে স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এমনটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজনৈতিক দলটি, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে অনন্যার কথায়। 

আরও পড়ুন
আমাজন-ফ্লিপকার্টে কাজ পাবেন রূপান্তরকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও

আগামী ৬ এপ্রিল থেকে ভোট কেরালায়। কাজেই, মনোনয়ন প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক তারিখ পেরিয়ে গেছে। এখন আর সরকারিভাবে সুযোগ নেই প্রার্থীপদ থেকে সরে দাঁড়ানোর। তবে ব্যক্তিগতভাবে সমস্তরকম প্রচার থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, ডিজেএসপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথাও ঘোষণা করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

শিক্ষার হারে ভারতের সবথেকে এগিয়ে থাকা রাজ্য কেরালা। সেখানেই এমন উদাহরণ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে ভারতের রাজনৈতিক অবস্থাকে। রাজনীতির ময়দান থেকে যেন পুরোপুরি মুছে যাচ্ছে সৌজন্য, নৈতিকতা। কোনদিকে যাচ্ছে দেশের পরিস্থিতি? উত্তর জানা নেই…

আরও পড়ুন
কেরালার নির্বাচনে প্রথম রূপান্তরকামী প্রার্থী, ইতিহাস তৈরির পথে অনন্যা

Powered by Froala Editor