অলিম্পিকের আয়োজনে আশ্রয়হীন বহু মানুষ, অন্য দৃশ্য টোকিও-র পথে

যদিও অস্থায়ী, তবু ঝাঁ চকচকে স্টেডিয়াম। ঝকঝক করছে খেলোয়াড়দের থাকার জায়গা। হবে নাই বা কেন? অলিম্পিক বলে কথা। সারা পৃথিবী থেকে কম খেলোয়াড় তো আসেনি। আর শুধুই কি খেলোয়াড়? কত দেশের কত সংবাদমাধ্যম এসে উপস্থিত হয়েছে। সবার চোখের সামনে আলোয় ঝলমল করছে টোকিও। হ্যাঁ, একটা শহরের মতো শহর বটে। কিন্তু এই আলোর আড়ালেই যে লুকিয়ে রাখা হয়েছে এক অন্ধকারকে। তার খবর অবশ্য অনেকেই রাখেন না। সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা বিবিসি-র দৌলতে উঠে এসেছে সেই অন্ধকারের ছবি। যেখানে ঘরহীন মানুষগুলো ভেসে চলেছেন। মাথা গোঁজার মতো একটা পার্ক বা দোকানের শেড বা ফুটপাতও নেই। কারণ আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের নজরের আড়ালে রাখতে হবে তাঁদের।

পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত শহরদের মধ্যে একটা টোকিও। এই বিষয়ে অবশ্য সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে আশ্রয়হীন মানুষের সংখ্যা পৃথিবীর কোনো শহরেই কম নয়। আর টোকিও-তে তো নয়ই। কয়েকশো মানুষের প্রতিদিনের আশ্রয় কোনো নির্দিষ্ট পার্কের গাছতলার নিচে একটি বেঞ্চ, বা কোনো দোকানের শেড। কিন্তু জাপানের মতো উন্নত শহরে মানুষ যে এভাবে দিনের পর দিন বেঁচে রয়েছেন, একথা আন্তর্জাতিক মহল থেকে লুকিয়ে রাখতেই হবে। আর তাই ২০১৩ সালে ৭ বছর পরবর্তী অলিম্পিকের স্থান নির্দিষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেই শুরু হয়ে যায় তাদের উৎখাত করার প্রক্রিয়া। জাপান সরকার অবশ্য সরকারিভাবে জানিয়েছে, গৃহহীন মানুষদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। এবং এর সঙ্গে অলিম্পিকের কোনো সম্বন্ধ নেই। কিন্তু সেই পুনর্বাসনকেন্দ্রগুলিই খাঁ খাঁ করছে। আর সেখানে সুস্থভাবে থাকার বন্দোবস্তও নেই।

সমস্যাটা অবশ্য নতুন নয়। আর শুধুই টোকিও শহরের নয়। মাত্র ৪ বছর আগেই এই কলকাতা শহরে আয়োজিত হয়েছিল অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপের কয়েকটি ম্যাচ। সেই সময় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের পাশে বস্তিবাসী মানুষদের কীভাবে উৎখাত করা হয়েছিল, তা এখনও কলকাতাবাসীর মনে আছে। আজ সেই একই বাস্তবতার মুখে টোকিও শহর। অসহায় মানুষদের কেউ বয়সের ভারে একেবারে নুইয়ে পড়েছেন। তলপি-তলপা নিয়ে অন্য জায়গায় যাওয়ার মতো ক্ষমতাও তাঁর নেই। অথচ সরকারি কর্তারা শুধু উৎখাত করতেই ব্যস্ত। তাঁদের দিকে বিন্দুমাত্র সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কেউ নেই। গৃহহীন মানুষরা নিজেরাই একে অপরের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন। নতুন জায়গা খুঁজছেন প্রতিদিন। কিন্তু সেই জায়গাও যে স্থায়ী নয়। আবারও একদিন পুলিশ এসে সরিয়ে দেবেন তাঁদের। কেউ কেউ এর মধ্যে তিনবার-চারবার জায়গা বদলেছেন। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবুও বেঁচে থাকার লড়াই চলছে। আলোয় ঝলমলে অলিম্পিক স্টেডিয়ামের অদূরে মানুষের অন্য লড়াই।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
শুধুমাত্র মহিলাদের নিয়ে অলিম্পিক, আয়োজনে এক লেখিকা!