করোনার পাশাপাশি হানা দিল ডেঙ্গুও, কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ইন্দোনেশিয়া

ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে করোনা ভাইরাসের মহামারী। এর সঙ্গেই তাল মিলিয়ে থাবা বসাল ডেঙ্গু। এই দুই মারণ রোগের আতঙ্ক ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে ইন্দোনেশিয়াকে। ইন্দোনেশিয়ায় কোভিড-১৯ এর থেকেও আরও ভয়ঙ্কর ভাবে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু।

১৫ই এপ্রিলের সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সংখ্যা ৫,১৩৬। পাশাপাশি, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১৭,৮০০। অর্থাৎ, কোভিড-১৯ আক্রান্তের তিনগুণের থেকেও বেশি। সুমাত্রার জাম্বি প্রদেশে, ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে মশাবাহিত এই রোগের জীবাণু। সরকারি আধিকারিকেরা এর কারণ হিসাবে মনে করছেন, জলবায়ুর আকস্মিক পরিবর্তন। বিশেষজ্ঞদের মতামত, এ-বছরে স্বাভাবিকের থেকে বেশি তাপমাত্রা থাকার কারণেই ছড়িয়েছে এই জীবাণু।

জাম্বিতে জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে প্রাণ গেছে ৭ জনের। যার মধ্যে ৬ জনই শিশু। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায় ৭০০ জন। কিন্তু তারপর থেকে প্রায় আকাশ ছুঁয়েছে সংক্রমণের সংখ্যা। গতবছর এই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২,২২৯ জন। ২০১৮-তে ধরা পড়েছিল ৮৩১ টি ঘটনা। কিন্তু এই বছরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছে ইন্দোনেশীয় সরকারকে।

জাম্বির এক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সুকমাল ফাহরি জানান, এডিসের ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা হয়ে উঠতে সময় লাগে ১২ দিন। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে, মাত্র ৭ দিনেই পরিপূর্ণ হচ্ছে এই চক্র। একই কথা জানিয়েছেন WHO-এর কর্তারাও। আবহাওয়ার পরিবর্তন ত্বরান্বিত করছে এডিসের বংশবৃদ্ধি। সেই সঙ্গেই বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ।

জাম্বির আবহাওয়া দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, গড় তাপমাত্রা বেড়েছে অনেকটাই। গত তিরিশ বছরে উষ্ণতা বেড়েছে প্রায় ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দাবানলের জন্য ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবথেকে বেশি। প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি ঝুম চাষের জন্য প্রতিবছর কেটে ফেলা হচ্ছে অরণ্য। জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এলাকার পর এলাকা। গত তিরিশ বছরে জাম্বিতে অর্ধেক হয়েছে বনভূমি। হারিয়ে গেছে ২১ লক্ষ মিলিয়ন হেক্টরের অরণ্য।

তবে সরকার ডেঙ্গুর সংক্রমণের জন্য দায়ী করেছেন ওই প্রদেশের অপরিচ্ছন্নতাকেই। আবাসিক অঞ্চলের বদ্ধ ডোবা, পুকুর দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করার ফলে, ডেঙ্গুর আঁতুড়ঘর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া, ঘরের বাইরে যত্রতত্র ফেলে রাখা পাত্রে জমা বৃষ্টির জল, মশার বংশবিস্তারের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এমনটাই মনে করছে সরকার।

তবে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে জলাশয়গুলি পরিষ্কারের কাজ। সঙ্গে প্রচারও চলানো হচ্ছে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য। সরকারিভাবে, শহরের ১৩০টি জায়গায় মশা মারার ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। তবে এই বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুকমাল ফাহরি বলেন, প্রতি বছর কীটনাশক ধোঁয়া দেওয়ার ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে মশাদের। এই ধোঁয়ায় এখন আর বিশেষ কাজ হচ্ছে না বলেই তাঁর দাবি। তবে আরও বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করলে ক্ষতি হতে পারে তাতে। তাই জল জমতে না দেওয়া, জলাশয়ের পরিষ্কারেই মাধ্যমেই মশার বংশবিস্তার আটকাতে হবে। নাহলে আটকানো যাবে না সংক্রমণ।

Latest News See More