প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ১৩০ জনকে খুন করেছেন এই সিরিয়াল কিলার!

১৯৭৮ সাল। ৫ বছর পর আবারও এবিসি চ্যানেলে ফিরে এসেছে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘দ্য ডেটিং গেম’। আমেরিকা তো বটেই, পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তেও এই শোয়ের চাহিদা কিছু কম নয়। কীভাবে একজন যুবক একজন যুবতীকে বা একজন যুবতী একজন যুবককে প্রেমের প্রস্তাব দেবেন, সেটাই অনুষ্ঠানের মূল বিষয়। আর ১৯৭৮ সালে এই শো-এ সবার নজর কেড়েছিল এক তরুণ ফটোগ্রাফার। যুবতীদের মন জয় করতে কখনও বাইকের রেস লাগাচ্ছেন, কখনও হেলিকপ্টার থেকে ঝাঁপ দিচ্ছেন আকাশের বুকে। অনুষ্ঠানের শেষে তাঁকেই ‘ব্যাচেলর নং-১’ ঘোষণা করল চ্যালেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আশাও করেনি, এই একটি ঘটনা আমেরিকার অপরাধের ইতিহাসে এক বিরাট অধ্যায় হয়ে থেকে যাবে।

অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হল এক বিরাট মামলা। একটি সিরিয়াল কিলিং কেস। ‘ডেটিং গেম কেস’। ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলে একের পর এক যুবতী খুন হয়ে চলেছেন। মোট ৪টি খুনের পর একটি যোগসূত্র খুঁজে পেল পুলিশ। খুন হওয়া যুবতীরা প্রত্যেকেই ছিলেন ‘দ্য ডেটিং গেম’-এর ১৯৭৮ সালের শো-এর প্রতিযোগী। আর তাঁরা প্রত্যেকেই ‘ব্যাচেলর নং-১’-এর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তাহলে কি? হ্যাঁ, তদন্তে নেমে একের পর এক প্রমাণ উঠে এল পুলিশের হাতে। গ্রেপ্তার হলেন রডনি আলকালা। অর্থাৎ ‘ব্যাচেলর নং-১’।

বিচার চলছিল। কিন্তু এর মাঝেই ঘটে গেল আরও একটি হত্যাকাণ্ড। পরের বছর হান্টিংটং সমুদ্র উপকূল থেকে নিখোঁজ হল ১২ বছরের এক বালিকা। রবিন সামসো। সামসোর বন্ধুদের জবানবন্দি থেকে জানা গেল, সে নিখোঁজ হওয়ার কিছু আগে এক ফটোগ্রাফার এসেছিলেন তাদের ছবি তুলতে। তারপর আর দেখা যায়নি সামসোকে। সন্ধান পাওয়া গেল ১২ দিন পরে। ততদিনে তার মৃতদেহ পচতে শুরু করেছে। তবে সেই সন্দেহভাজনের স্কেচ তৈরি হতেই অবাক পুলিশ। এখানেও আততায়ী আর কেউ নন, রডনি আলকালা। তাঁর ব্যক্তিগত লকার থেকে পাওয়া গেল একটি কানের দুল। সেটিও সামসোর বলেই চিহ্নিত করলেন মৃতা মেয়েটির মা। আলকালা এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও সেই দুলে পাওয়া গেল সামসোর ডিএনএ-র নমুনা। সামসো হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিল আদালত। কিন্তু সেই রায় পরে পরিবর্তিতও হল। কারণ তখনও ‘ডেটিং গেম কেস’-এর রায় বেরোয়নি। ফলে এটাই তাঁর প্রথম হত্যা হিসাবে বিবেচিত হল।

এরপর আলকালাকে নিয়ে একের পর এক মামলা চলেছে আমেরিকার আদালতে। অবশ্য এই প্রথম নয়। অপরাধী তালিকায় তাঁর প্রথম নাম ওঠে ১৯৬৮ সালে। মাত্র ৮ বছরের এক বালিকাকে ধর্ষণ করেন আলকালা। তাকেও খুনের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পড়ায় সেই সুযোগ পাননি। সেবার অবশ্য পালিয়ে গিয়েছিলেন আলকালা। কিন্তু ‘ডেটিং গেম কেস’-ই তাঁকে ধরিয়ে দিল। আর তাঁর পরিচয় হয়ে গেল ‘ডেটিং গেম কিলার’। ১৯৭৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩ দফায় মামলা চলেছে তাঁর বিরুদ্ধে। তিনবারই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন তিনি। কিন্তু পুলিশের মনোবিশেষজ্ঞরা জানান মৃত্যুদণ্ড বোঝার মতো মানসিক অবস্থা নেই তাঁর।

আরও পড়ুন
টুইটার ব্যবহার করে একের পর এক হত্যা, জাপানের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারকে মৃত্যুদণ্ড

আসলে ছোট থেকেই আলকালা এক ভয়ঙ্কর মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত। যার নাম ‘অ্যান্টিস্যোশাল পার্সোনালিটি ডিস-অর্ডার’। আর পরে তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল অ্যাকিউট নার্সিসিস্টিক ডিস-অর্ডার। এই মানসিক বিকৃতি থেকেই একের পর এক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। অথচ কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ছিলেন মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন অতি নম্র কেরানি। পরবর্তীকালে ফটোগ্রাফার হিসাবেও অনেকের নজর কেড়েছিলেন। সিনেমা নিয়ে ছিল অগাধ জ্ঞান। কিন্তু যাঁকে প্রেমের প্রস্তাব তিনি দিতেন, তাঁর প্রত্যাখ্যান সহ্য করতে পারতেন না। তাঁদের সবার ছবি তুলে রাখতেন। আর সেই ছবির তালিকা থেকেই তৈরি করতেন হিটলিস্ট। পুলিশের অনুমান, ৫টি নয়, অন্তত ১৩০ জনকে হত্যা করেছেন তিনি। এর মধ্যে ৮টি খুনের সঙ্গে তাঁর ডিএনএ নমুনাও মিলে গিয়েছে। কারাবন্দি অবস্থাতেই চিকিৎসা চলছিল আলকালার। সুস্থ হয়ে উঠলে বিচারের রায় অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডই হত তাঁর। কিন্তু তার আগেই গত ২৪ জুলাই মৃত্যু হল আলকালার। আমেরিকার অপরাধ জগতের এক কুখ্যাত অধ্যায়ের শেষ হল এভাবেই।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
৫০ বছর পর সিরিয়াল কিলারের লেখা সাংকেতিক চিঠির পাঠোদ্ধার