কথ্য ইংরাজির অধিকাংশ শব্দই ‘ক্ষতিকর’! তালিকা প্রস্তুত করল স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দাদের বাংলায় বলা হয় ‘মার্কিনি’। তবে ইংরাজিতে বা অন্য ভাষায় তাঁদের বলা হয় ‘আমেরিকান’। এমনকি কথা বলার সময় আমরাও অনেকক্ষেত্রেই ব্যবহার করে থাকি এই শব্দবন্ধ। এখন যদি বলা হয় এই শব্দটি আসলে ‘ক্ষতিকর শব্দ’ (Harmful Language)?

ভাবছেন, এ আবার কেমন হেঁয়ালি! তবে আদতেই ‘আমেরিকান’ শব্দটির গায়ে ‘ক্ষতিকর’ ছাপ পড়ল এবার। নেপথ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই এক বিশ্ববিদ্যালয়। স্ট্যানফোর্ড। মাস কয়েক আগের কথা। ‘ক্ষতিকর শব্দ’ বা ‘হার্মফুল ল্যাঙ্গুয়েজ’-এর তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিআইও কাউন্সিল। জড়িত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক তাবড় ভাষাবিদ। কথ্য ইংরাজিতে ব্যবহৃত শব্দকে ঝাড়াই-বাছাই করেই তাঁরা সম্প্রতি প্রকাশ করলেন এই তালিকা। 

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, ‘আমেরিকান’ শব্দটিকে কোন প্রেক্ষিতে ‘ক্ষতিকর’ বলছেন মার্কিন ভাষাবিদরা? গবেষকরা জানাচ্ছেন, আমেরিকা নামের কোনো বিশেষ দেশ নেই। বরং আমেরিকা বলতে উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা— দুটি মহাদেশকেই বোঝায়। সেভাবে দেখতে গেলে কানাডা, মেক্সিকো, ব্রাজিল, চিলি কিংবা আর্জেন্টিনার বাসিন্দারা সকলেই আমেরিকান। কাজেই ইংরাজিতে মার্কিনিদের বোঝাতে গেলে ব্যবহার করা উচিত ‘ইউএস সিটিজেন’। তার কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের পুরো নাম ‘ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা’। দুই আমেরিকা মহাদেশের মধ্যে সর্বোত্তম প্রমাণ করতেই ‘আমেরিকান’ হিসাবে পরিচয় দেওয়া শুরু করেছিলেন মার্কিনিরা, এমনটাই জানাচ্ছেন স্ট্যানফোর্ডের গবেষকরা। আর এই কারণেই এই শব্দ জায়গা পেয়েছে ‘ক্ষতিকর’ শব্দের তালিকায়। 

শুধু ‘আমেরিকান’-ই নয়, এই তালিকায় জায়গা পেয়েছে ‘গাইজ’, ‘কনভিক্ট’, ‘প্রিসনার’, ‘ব্রেভ’, ‘অ্যাডিক্টেড’, ‘নিগ্গা’, ‘ইনসেন’, ‘লেম’, ‘ডাম্ব’-এর মতো শব্দও। আসলে এই প্রতিটি শব্দের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে বৈষম্য, নিপীড়ন, বর্ণবাদ কিংবা শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতার জন্য হেয়ো করার ইতিহাস। তাই এইসকল শব্দকে ‘কলঙ্কিত’ শব্দের তকমা দিয়েছেন ভাষাবিদরা। 

স্টানফোর্ডের ডিকশোনারি থেকে বাদ পড়েছে ‘রুল অফ থাম্ব’ বা ‘ট্রিগার ওয়ার্নিং’-এর মতো শব্দও। ঔপনিবেশিক শাসনকালে এই দুটি কথার উৎপত্তি হয়েছিল ব্রিটিশ সাহেবদের থেকে। বুড়ো আঙুলের সম-ব্যাসের লাঠি দিয়ে স্ত্রীকে প্রহার করা হত সে-সময়। সেখান থেকেই জন্ম নিয়েছিল ‘রুল অফ থাম্ব’ শব্দবন্ধটি। অন্যদিকে বন্দুকের নল উঁচিয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের সতর্ক করা হত বলেই উৎপত্তি ‘ট্রিগার ওয়ার্নিং’-এর। সময়ের আবহে যা ঢুকে এসে কথ্য ভাষায়। 

গবেষকদের মতে, আগামীতে সাম্রাজ্যবাদ এবং ঔপনিবেশিকতাকে ছাপিয়ে সাম্যের পৃথিবী গড়ে তুলতে গেলে কথ্য ভাষাতেও বড়োসড় বদল আনার প্রয়োজন রয়েছে। এমনকি সমস্ত শিক্ষার্থীদের ‘ক্ষতিকর শব্দ’-এর পিছিয়ে লুকিয়ে থাকা ইতিহাস পৌঁছে না দিলে কোনোদিনও সাম্যের পথে হাঁটতে পারবে না মানব সভ্যতা। দাবি গবেষকদের। 

অবশ্য ভাষাবিদদের একাংশ স্ট্যানফোর্ডের এই উদ্যোগকে সমর্থন করলেও, তা নিয়ে খুশি নন নেটিজেনরা। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ছড়িয়েছে বিতর্ক। তাতে ঘৃতাহুতি দিয়েছেন ইলন মাস্কের মতো বিলিয়নেয়ার। নিছকই ‘পাগলামি’-র তকমা দিয়েছেন তিনি। সবমিলিয়ে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাম্যস্থাপনের উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত সফল হবে কিনা, অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে সেখানে…

Powered by Froala Editor