দুর্গম পথে একটানা ১৬ দিন দৌড়, নজির দুই অ্যাথলিটের

একসময় পদব্রজেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি দিতেন পর্যটকরা। সিল্ক রুটের রাস্তা ধরেই ভারতে এসেছিলেন মেগাস্থিনিস কিংবা হিউয়েন-সাঙ। কিন্তু একটানা দৌড়ে যদি প্রদক্ষিণ করতে বলা হয় গোটা একটি দেশকে? অসম্ভব বলে মনে হলেও, এবার তেমনই করে দেখালেন দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) আলট্রা-অ্যাথলিট রায়ান স্যান্ডিস (Ryan Sandes) এবং রাইনো গ্রিসেল (Rayno Grisel)। মাত্র ১৬ দিনে অতিক্রম করলেন ১১০০ কিলোমিটার পথ। প্রদক্ষিণ করলেন আফ্রিকান দেশ লেসোথোকে (Lesotho)। 

আলট্রা-অ্যাথলিটের দুনিয়ায় অন্যতম নাম রায়ান স্যান্ডিস। ইতিমধ্যেই বিশ্বের ৭টি মহাদেশেই দৌড়েছেন রায়ান। রয়েছে তাঁর বেশ কিছু রেকর্ডও। এবার সেখানে জুড়ল আরও একটা পালক। এর আগে গ্রেট হিমালয়ান ট্রেইলের সময় তিনি অতিক্রম করেছিলেন প্রায় দেড়গুণ পথ। তবে তাঁর অভিমত, এখনও পর্যন্ত দৌড়ানো ম্যারাথনগুলির মধ্যে এটিই ছিল তাঁর কঠিনতম চ্যালেঞ্জ। 

হিসেব অনুযায়ী দেখতে গেলে দিনে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছেন স্যান্ডিস এবং গ্রিসেল। আলট্রা-অ্যাথলিটদের গড় গতির প্রেক্ষিতে তা যে খুব বেশি, এমনটা নয় একেবারেই। কিন্তু লেসোথোর ভূপ্রকৃতিই কঠিন করে তুলেছিল তাঁদের অভিযান। 

সুদান, নাইজেরিয়া কিংবা ইথিওপিয়ার মতো লেসোথোর-ও অধিকাংশ অঞ্চলেই পৌঁছায়নি আধুনিক সভ্যতার আলো। ফলে, লেসোথোর সীমান্ত বরাবর প্রকৃত অর্থে কোনো রাস্তা নেই। পাহাড়, নদী, পাথরে মোড়া পথ টপকেই এগিয়েই যেতে হয়েছে তাঁদের। পথে পড়েছিল ১৮৭টি নদী। এসবের মধ্যেই ক্রমাগত দিক নির্ণয় করতে করতে পথ চলতে হয়েছে তাঁদের। তাছাড়া যাত্রাপথে কোথাও উষ্ণতা ছিল -৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কোথাও আবার ৩০-৩২ ডিগ্রির কাছাকাছি। এইসব প্রতিকূলতা অতিক্রম করেই ১৫ দিন ১৬ ঘণ্টা ৫৬ মিনিটে লেসোথো জয় করেন দুই কিংবদন্তি। 

আরও পড়ুন
এক পা নিয়েই ১০৪ দিনে ১০৪টি ম্যারাথন! রেকর্ড দৌড়বিদের

তবে এই অভিযান কোনো হঠাৎ সিদ্ধান্ত নয়। বছর দুয়েক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল এই অভিযানের প্রস্তুতি। লকডাউনে স্যান্ডিস উপলব্ধি করেছিলেন, বিশ্বের ৭টি মহাদেশে দৌড়ালেও তাঁর নিজের মহাদেশ আফ্রিকাই ঘুরে দেখা হয়নি সম্পূর্ণভাবে। লেসোথো অভিযানের চিন্তাভাবনা শুরু হয় সেখান থেকেই। অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রী যোগাড় করতে সময় লেগে যায় এক বছরেরও বেশি। তাছাড়াও এই ম্যারাথনের আগে লেসোথোর ভুপ্রকৃতিও পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে তাঁকে। তৈরি করতে হয়েছে গোটা দেশের ম্যাপ। এই বিশেষ ক্ষেত্রে সাক্ষাৎ দেবদূত হিসাবে তিনি পাশে পেয়েছিলেন রাইনো গ্রিসেলকে। 

আরও পড়ুন
সৌমিত্র ছাড়াও ফেলুদার দৌড়ে ছিলেন আরও দুই অভিনেতা – সত্যজিতের পরিকল্পনা জানালেন বরুণ চন্দ

এর আগে ম্যারাথন দৌড়ের অভিজ্ঞতা আছে রাইনোরও। তবে আল্ট্রা অ্যাথলেটিক্সে স্যান্ডিসের মতো সাফল্য নেই তাঁর ঝুলিতে। যেটা আছে, সেটা হল দিকনির্ণয় এবং ম্যাপ তৈরির অদ্ভুত ক্ষমতা। গোটা যাত্রাপথের রাস্তা তৈরির নেপথ্যে ছিলেন তিনিই। অভিযানের সময়েও একাধিকবার নিশ্চিত রাস্তা হারানোর সম্ভাবনা আটকেছেন রাইনো। সবমিলিয়ে ম্যারাথন এবং আলট্রা-অ্যাথলেটিক্সের দুনিয়ায় এক নয়া নজির গড়লেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই দুই কিংবদন্তি…

আরও পড়ুন
রেকর্ড সময়ে জাগলিং ও দৌড়, গিনেস বুকে ঈশ্বর

Powered by Froala Editor