মা ঘরে ফেরেননি, দুমাসের বেশি সময় হয়ে গেল। সেই যে একদিন রাতে বেরোলেন জলসা শুনতে, তার পরেই শুরু হল লকডাউন। সেই থেকে কোনো খবর নেই মায়ের। এমন পরিস্থিতিতে কী করবে তাঁর ছেলে? মা ফিরে এলেই বা কী মনে হবে? নিশ্চই ভাবছেন খুব খুশি হবে ছেলেটি। কিন্তু করোনা ভাইরাস তো শুধুই শরীরে নয়, বাসা বেঁধেছে মনের গভীরেও। প্রতিটা মানুষ সারাক্ষণ আতঙ্কিত। আর সেই আতঙ্কের চেহারাই ফুটে উঠল তেলেঙ্গানার করিমনগরের একটি ঘটনায়।
৮০ বছরের বৃদ্ধা কাট্টা শ্যামলা একটি জলসা শুনতে গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের শোলাপুর। আর তার পরেই শুরু হল লকডাউন। শ্যামলা বাড়ি ফিরতে তো পারলেন না, এমনকি ছেলেদের কোনো খবরও দিতে পারলেন না। কোনরকমে একটা আশ্রয় জোগাড় করে থাকতে শুরু করলেন শোলাপুরে। অবশেষে গত শুক্রবার একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে এসে পৌঁছলেন ছেলের কাছে।
দীর্ঘ নিরুদ্দেশের পর মায়ের ফিরে আসার দৃশ্যটা যেন এখানে ঠিক আশানুরূপ ছিল না। বরং দেখা গেল, মাকে ঘরের ভিতর ঢুকতে দিতেও আগ্রহী নয় শ্যামলার ছেলে নরসিমাচারী। আসলে এতদিন পর যে মা বাড়ি ফিরেছে, তার শরীরে যে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেনি সেকথা কি নিশ্চিতভাবে বলা যায়? শ্যামলা কিন্তু বারবার বলতে থাকেন, শোলাপুরে সে একটি বাড়িতেই থেকেছে। সেখানে কারোর শরীরে সংক্রমণ ঘটেনি। এমনকি তাঁর নিজের শরীরেও কোনো উপসর্গ নেই। কিন্তু নরসিমাচারীর মনের সন্দেহ তাতে দূর হল না। তাছাড়া মহারাষ্ট্র যে করোনার অন্যতম উপকেন্দ্র। তাই দীর্ঘ সময় দরজার বাইরে বসে থাকতে হল শ্যামলাকে।
অবশেষে করিমনগর পৌর সংস্থার আধিকারিক এডলা অশোকের সৌজন্যে পরিস্থিতির মীমাংসা ঘটে। ঘটনার কথা জানতে পেরেই উপস্থিত হন তিনি। এবং নরসিমাচারীকে নির্দেশ দেন যেন তিনি মাকে বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি দেন। এবং এর পর প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থাও করেন তিনি। সেই পরীক্ষার ফলাফল না পাওয়া অবধি শ্যামলাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে এই ঘটনা সম্পর্কে এডলা অশোক মন্তব্য করেন, পৃথিবীর আদিমতম সম্পর্কও বিধ্বস্ত করোনার আক্রমণে। ছেদ পড়েছে নাড়ির টানেও। এই সমস্যা আর নিছক শারীরিক সমস্যা নয়। তার চেয়ে ঢের বেশি সামাজিক।
Powered by Froala Editor