ব্যাপক খরায় আক্রান্ত আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল, দেখা দিচ্ছে জল-যুদ্ধের সম্ভাবনাও

ওরিগন এবং ক্যালিফোর্নিয়া সীমান্ত অঞ্চলে বিরাট কৃষিক্ষেত্র ক্লামাথ উপত্যকা। মার্কিন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের এক বড়ো অংশের কাঁচামাল সরবরাহ হয় এখান থেকেই। কিন্তু সম্প্রতি সেই উৎপাদন তো অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেই, সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে দুই স্টেটের মধ্যে এক যুদ্ধের বাতাবরণও। কী কারণ এই যুদ্ধের? দুই স্টেটের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন জলের অধিকার নিয়ে। হ্যাঁ, জল। মানুষের জীবন ধারণের নূন্যতম চাহিদা যে জল, তাই আজ অপ্রতুল। ইতিমধ্যে কলোরাডো নদীবাঁধের লকগেট বন্ধ করে দিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসন। ওরিগন প্রশাসনের কোনো আবেদনই কানে তোলা হয়নি।

প্রায় ১০০ বছর ধরে একটু একটু করে গড়ে উঠেছে ক্লামাথ কৃষিক্ষেত্র। এর মধ্যে নানা বড়ো বড়ো হ্রদ থেকে শুরু করে গড়ে তোলা হয়েছে বিরাট এক সেচ ব্যবস্থা। কিন্তু সাম্প্রতিক খরায় জলের জোগানই নেই। শুকিয়ে গিয়েছে কৃষিখালগুলিও। এমনকি বিরাট ক্লামাথ হ্রদের জলও এতটাই কমে গিয়েছে যে সেখান থেকে জল সরবরাহ করা সম্ভব নয়। একমাত্র কলোরাডো নদীতে কিছুটা জল রয়েছে। কিন্তু তাও পর্যাপ্ত নয়। এই অবস্থায় সেই সামান্য জোগানের উপর অধিকার নিয়েই শুরু হয়েছে যুদ্ধ। আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলে খরা অবশ্য কোনো নতুন ঘটনা নয়। গতবছরও গ্রীষ্মকালে ব্যাপক খরার শিকার হয়েছিল ওরিগন এবং ক্যালিফোর্নিয়া। আর তার ফলেই বিস্তীর্ন অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল দাবানল। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর। সাম্প্রতিক সময়ে তো বটেই, বিগত ১০০ বছরে এমন খরা দেখা যায়নি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ওরিগন এবং ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য এই জটিল সময়েও শান্তি বজায় রাখার কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু সেই কথা প্রায় কানে তুলতেই রাজি নন দুই প্রদেশের মানুষ, বিশেষত কৃষকরা। তাঁদের বক্তব্যও অত্যন্ত সরল। আগে তো বেঁচে থাকা, তারপর শান্তির প্রশ্ন। ইতিমধ্যে দুই প্রদেশেই গড়ে উঠেছে বেশ কিছু স্বগঠিত সামরিক বাহিনী। লকগেট ভেঙে জল চুরির অভিযোগও উঠেছে ওরিগনের কয়েকজন কৃষকের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে কৃষিকাজের মূল সময় পেরিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। ফলে প্রশাসনিক স্তরে সমস্যার সমাধান না হলে জলের চাহিদা যে অচিরেই হিংসাত্মক রূপ নেবে, তাতে সন্দেহ নেই। ক্রমশ পরিবেশ দূষণের ফলে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর তার ফলে এমন প্রভাব পড়া অস্বাভাবিক তো নয়ই, বরং ক্রমশ খরা ও বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে সারা পৃথিবীজুড়েই। ফলে খুব তাড়াতাড়ি সচেতন না হলে এমনই যুদ্ধের বাতাবরণ ছড়িয়ে পড়তে পারে সর্বত্র।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
চরম দুর্ভিক্ষের শিকার কঙ্গোর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ, রিপোর্ট প্রকাশ জাতিসংঘের

More From Author See More