ধূমকেতুর মতো অদৃশ্য লেজ রয়েছে চাঁদেরও, রহস্যভেদ বিজ্ঞানীদের

স্বচক্ষে ধূমকেতু না দেখলেও তার আকারের ব্যাপারে সকলেই ওয়াকিবহাল। দীর্ঘ লম্বা লেজই তাকে আর পাঁচটা মহাজাগতিক বস্তুর থেকে আলাদা করে দেয়। এখন যদি বলি, পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহে চাঁদেরও রয়েছে এমনই লেজ? বিশ্বাস হচ্ছে না তো? না হওয়াটাই স্বাভাবিক। নব্বইয়ের দশকের একদম শুরুর দিকে চাঁদের এই অদৃশ্য লেজ আবিষ্কৃত হয়েছিল। তবে ঠিক কীভাবে তৈরি এই লেজ, তা নিয়েই ছিল দীর্ঘ বিতর্ক। সম্প্রতি তার বৈজ্ঞানিক যুক্তি খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা।

ফিরে যাওয়া যাক দুই দশক আগে। ১৯৯৮ সালে এই আবিষ্কারের জন্মলগ্নে। বিজ্ঞানীরা শক্তিশালী ক্যামেরার মাধ্যমে চিহ্নিত করেছিলেন, চাঁদ থেকে এক ধরণের অদৃশ্য রশ্মি ক্রমাগত বিকিরিত হয়ে চলেছে। সূর্যের বিপরীত দিকে পৃথিবীর কক্ষপথের ব্যাসার্ধ বরাবর ছড়িয়ে পড়ছে সেই রশ্মি। হুবহু ধূমকেতুর লেজ। আর তার বিস্তার ন্যূনতম ৫ লক্ষ মাইল। ওই একই সময়ে পৃথিবীর আকাশে দেখা গিয়েছিল লিওনিড মেটিওর সাওয়ার বা উল্কাবৃষ্টি। ধরে নেওয়া হয়েছিল, তার প্রভাবেই এই লেজের জন্ম।

তবে ২০০৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার এল লিওনসিটো অবজার্ভেটরিতে অবস্থিত অল-স্কাই ইমেজার ক্যামেরায় তোলা ২১ হাজার ছবি ভিন্ন গল্প তুলে আনে। না, এই লেজ একেবারেই ক্ষণিকের নয়, তা স্থায়ী। আর সেই রহস্যসন্ধানেই নেমেছিলেন বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞানীরা। 

সেই গবেষণায় উঠে আসে, চাঁদ ও ধূমকেতু উভয়েরই লেজ তৈরি হওয়ার কারণ একই। দুই ক্ষেত্রেই বিকিরিত হয় সোডিয়াম কণা। তবে কি চাঁদও একটি ধূমকেতু মাত্র? না, ব্যাপারটা তেমন না। গবেষণার সহ-লেখক ও বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুক মুর জানাচ্ছেন, চাঁদে বায়ুমণ্ডল না থাকায় সহজেই চন্দ্রপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ে উল্কাবৃষ্টি, ধূমকেতু। চাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষে ধূমকেতু থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে বিপুল পরিমাণ সোডিয়াম পরমাণু। সূর্য থেকে আগত ফোটন কণার সঙ্গে এই সোডিয়াম পরমাণুর সংঘর্ষ হলে তা বিকিরিত হয় সূর্যের ব্যাসার্ধ বরাবর বাইরের দিকে। 

আরও পড়ুন
মানুষের ঘুমের সময় নিয়ন্ত্রণ করে চাঁদের গতিবিধি! নতুন তত্ত্ব বিজ্ঞানীদের

কৌতূহল থেকেই যায়, সূর্য আর পৃথিবীর মাঝে যখন চাঁদ চলে এলে তবে কি সোডিয়ামের এই ধুলো বৃষ্টি আছড়ে পড়ে পৃথিবীর ওপরেও? সেই উত্তরও দিয়েছেন প্রধান লেখক জেফ্রে বোমগার্ডনার। আসলে পৃথিবীর বাইরে শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র এবং বায়ুমণ্ডলের কারণে তা প্রবেশ করতে পারে না পৃথিবীর মধ্যে।

সম্প্রতি ‘জার্নাল অফ জিওফিজিক্যাল রিসার্চ’ বিজ্ঞানপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র। পৃথিবীর ঠিক নাকের ডগায় এমনই এক অদ্ভুত রহস্যময় মহাজাগতিক কাণ্ডকারখানা চলে আসছে অজান্তে, তা যেন অবিশ্বাস্যই। আর তার কারণ খুঁজে পেয়েই উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানীরা। তবে চাঁদের এই বিকিরণ মহাজাগতিক পরিমণ্ডলে তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না বলেই ধারণা তাঁদের…

আরও পড়ুন
চাঁদের মাটিতে গলফ্‌ খেলা! বাস্তব করে দেখিয়েছিলেন এই মহাকাশচারী

Powered by Froala Editor

More From Author See More