দিতে হয়েছে জরিমানা, তাও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিবাদ বৃদ্ধ রুশির

মস্কোর উত্তরে সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ছোট্ট শহর রাসকো-ভিসোটস্কয়। তবে এই শহরে গেলে সাজানো ঝকঝকে রাশিয়ার দেখা মিলবে না। বরং, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন বুকে বয়ে নিয়ে চলেছে এই শহর। জার্মান বোমায় ধ্বসে পড়া গির্জা কিংবা বিধ্বস্ত খামারবাড়ি নজর কাড়বে যে কারোর। তবে বর্তমানে এই শহরের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে একটি অতিসাধারণ স্থানীয় শপিং সেন্টার। আর তার কারণ, শপিং মলের গায়ে আঁকা বিচিত্র ক্যালিগ্রাফি। 

দিমিত্র স্কুরিখিন (Dmitry Skurikhin)। এই বিল্ডিং-এর মালিক তিনি। আর তাঁর রং-তুলিতেই সেজে উঠেছে শপিং সেন্টারটি। উজ্জ্বল লাল রঙে শপিং সেন্টারে তিনি ফুটিয়ে তুলেছে বেশ কয়েকটি শহরের নাম। সেই তালিকায় রয়েছে মারিওপোল, বুচা, খেরসন, চেরনিহিভ, কিভ… বেশ দীর্ঘ এই তালিকা। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন এই শহরগুলিতেই আক্রমণ শানিয়েছে রুশ বাহিনী। প্রতিটি ইউক্রেনীয় শহরই রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে গোলাগুলি এবং বিস্ফোরণে। এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের প্রতিবাদেই (Anti-War Protest) লাল রং দিয়ে ক্যালিগ্রাফি অঙ্কন স্কুরিখিনের। বড়ো বড়ো অক্ষরে তিনি লিখেছেন, ‘ইউক্রেনের শান্তি, রাশিয়ার স্বাধীনতা!’

হ্যাঁ, অন্তত স্কুরিখিন এমনটাই মনে করেন। রাশিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও, সেখানকার নাগরিকরা কি আদৌ স্বাধীন? সন্দেহ প্রকাশ করছেন স্কুরিখিন। তাঁর অভিমত, দেশের সরকারও জানে রাশিয়ার এই আগ্রাসন সমর্থন করেন না দেশের অধিকাংশ নাগরিকই। কিন্তু তাঁদের মতামত প্রকাশের পরিসরটাই বন্ধ করে দিয়েছে রুশ প্রশাসন। আর যাঁরা রাশিয়ার এই যুদ্ধকে সমর্থন করছেন, তাঁরাও এই পথে হাঁটছেন শুধুমাত্র ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে। 

স্কুরিখিন জানাচ্ছেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় তাঁরও ধারণা ছিল রাশিয়া ইউক্রেনে বিশেষ একটি অভিযান করতে চলেছে। ইউক্রেনীয় সরকারকে সাহায্য করার জন্যই। মূলত মাদকাসক্তদের সে-দেশ থেকে অপসারণ করাই রাশিয়ার লক্ষ্য। তবে কিছুদিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায় আসল পরিস্থিতির ছবি। হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষের মৃত্যু দেখে তাই চুপ করে থাকতে পারেননি তিনি। হাতে তুলে নিয়েছিলেন রং-তুলি। গর্জে উঠেছিলেন প্রতিবাদে। শুধু শপিং মলের দেওয়াল নয়, ছাদেও বিশালায়তন ইউক্রেনীয় পতাকার প্রতিকৃতি অঙ্কন করেছেন তিনি। 

আরও পড়ুন
রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিবাদ, গ্রেপ্তার রুশ বৃদ্ধা

তবে ফলাফল খুব একটা আশাপ্রদ হয়নি। রুশ সেনা এবং গোয়েন্দারা সর্বক্ষণই নজরে রেখেছেন তাঁকে। এটাই রাশিয়ার নিয়ম। দেশের বিরুদ্ধে দাড়ালেই দাঁড়াতে হয় কাঠগড়ায়। এসব জেনে শুনেই প্রতিবাদের পথে নেমেছিলেন তিনি। তাই তাঁকে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা দিতে বাধ্য করা হলেও, অবাক হননি স্কুরিখিন। এখানেই শেষ নয়। তাঁকে দেশদ্রোহীর তকমা দিয়েছেন স্থানীয় মানুষও। বাড়ির দরজায় কারা যেন সেঁটে দিয়ে গেছে ‘দেশদ্রোহী’ লেখা পোস্টার। অনেকে বন্ধ করে দিয়েছেন যোগাযোগও। কিন্তু তাতেও থামতে নারাজ তিনি। আবারও নতুন করে রং চড়িয়েছেন শপিং মলের দেওয়ালে।

আরও পড়ুন
ইউক্রেনে ফসফরাস বোমা নিক্ষেপ রাশিয়ার, কেন নিষিদ্ধ এই বোমা?

এই ক্যালিগ্রাফি, শান্তির বার্তা আদৌ যে দেশের পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে না— তা ভালোই জানেন দিমিত্রি স্কুরিখিন। তবে তিনি শুধু প্রশ্ন তুলে ধরতে চাইছেন সাধারণ মানুষের কাছে। এই যুদ্ধ সম্পর্কে তাঁরা দু’দণ্ড ভাবলে, নিজেকে প্রশ্ন করলেই স্বার্থক হবে তাঁর উদ্যোগ, এমনটাই অভিমত প্রবীণ রুশির… 

আরও পড়ুন
মৃত্যু বনাম ভাগ্যের দ্বৈরথ, কীভাবে জন্ম হয়েছিল রাশিয়ান রুলেটের?

Powered by Froala Editor