কারাগারে মৃত্যুশয্যায় রাশিয়ার বিরোধী দলনেতা, প্রশাসনকে চিঠি চিকিৎসকদের

পেরিয়ে গেছে তিন সপ্তাহ। এখনও পর্যন্ত দাঁতে এতটুকু দানা কাটেননি তিনি। চরম অসুস্থতার মধ্যেও চালিয়ে যাচ্ছেন অনশন কর্মসূচি। অ্যালেক্সি নাভালনি। কথা হচ্ছে, রাশিয়ার বিরোধী দলনেতা এবং পুতিনের অন্যতম সমালোচক নিয়ে। গত জানুয়ারি মাস থেকেই রাশিয়ার ভয়ঙ্করতম জেলে কারাবন্দি তিনি। তবে ক্রমশ অবনতি হচ্ছে স্বাস্থ্যের। এমনকি কয়েকদিনের মধ্যেই ৪৪ বছর বয়সি ক্রেমলিন-সমালোচকের মৃত্যুও হতে পারে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করলেন চিকিৎসকরা।

নাভালনির মেডিক্যাল রিপোর্ট বলছে, মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাঁর পটাশিয়াম লেভেল। যার ফলাফল হতে পারে আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। পাশাপাশি ক্রিয়েটিনিন স্তরের বৃদ্ধিও কিডনির কর্মক্ষমতায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। অর্থাৎ, মৃত্যুর ঠিক দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করছেন নাভালনি। গত শনিবার এমনটাই জানালেন তাঁর চিকিৎসক ইয়ারোস্লাভ আশখমিন জানান।

নাভালনি রাষ্ট্রপতি পুতিনের অন্যতম প্রতিপক্ষ। ভোটের শতকরা হারে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও, পুতিন রাজত্বের অন্যতম ত্রাস তিনি। পদে পদেই বিদ্ধ করতেন রাশিয়ার ‘একনায়কতন্ত্র’-কে। ফলত পথের কাঁটা সরিয়ে ফেলতে প্রথম থেকেই মরিয়ে ছিল রুশ প্রশাসন।

আগেই তাঁর বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছিল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। অভিযুক্ত করা হয়েছিল দেশদ্রোহিতার মামলায়। তবে প্যারোলে মুক্তি পেলেও, নিস্তার পেলেন না নাভালনি। বিষ প্রয়োগ করা হল খাবারে। ইউরোপের একাধিক ল্যাবরেটরিতে তার প্রমাণ মিললেও স্বীকার করেনি রাশিয়া সরকার। সে সময় তাঁর শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যে জার্মানিতে চিকিৎসার জন্য ছুটতে হয় তাঁকে। মাসখানেক পর বার্লিনের হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে দেশে ফিরতেই পুনরায় গ্রেপ্তার। সেটা গত জানুয়ারি মাসের ঘটনা। নাভালনিকে পুরে দেওয়া হল কঠিনতম কারাগার ২ নং পেনাল কলোনিতে। চলত মধ্যযুগীয় অকথ্য অত্যাচার। সেই দৃশ্যও সামনে এসেছিল মাস খানেক আগে।

আরও পড়ুন
বাইডেন-কে নির্বাচনে হারাতে চেয়েছিল রাশিয়া!

ক্রমাগত অত্যাচারে গত মাস থেকেই শুরু হয়েছিল পিঠের তীব্র যন্ত্রণা। পায়েও ধীরে ধীরে অনুভূতি হারাতে থাকেন নাভালনি। তবে একাধিকবার অনুরোধ করা পরেও ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের কারাগারে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি রুশ প্রশাসন। আর তারপরেই অনশন শুরু করেন রাশিয়ার মানবাধিকার কর্মী তথা প্রধান বিরোধী দলনেতা।

আরও পড়ুন
ব্লেড দিয়ে গাল কেটে ‘শাস্তি’, নিস্তার নেই চোখে চোখ পড়লেও

নাভালনি-সমর্থিত জোটের চিকিত্সক ইউনিয়নের প্রধান আনাস্তাসিয়া ভাসিলিভা এদিন টুইটারে আবেদন করেন, অবিলম্বে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয় তাঁর স্বাস্থ্যের প্রতি। তবে আগে থেকেই সাফাই গেয়েছে রাশিয়া। জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রীয় অনুশাসনে সমস্ত রকম প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছেন নাভালনি। গতকাল এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনও তীব্র সমালোচনা করেন বিষয়টির। ‘অন্যায্য’ ও ‘নীতিবহির্ভূত’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। কিন্তু এতকিছুর পরেও কি নমনীয় হবে রাশিয়ার প্রশাসন? সেই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে বার বার…

Powered by Froala Editor