বনের মধ্যে আরো : টঙিয়া, এফ ডি হোল্ডিং আর ইয়েসলু

সময়ভ্রমণ – ৭

আগের পর্ব

নীলপাহাড়ি বা তাকদা ছেড়ে ছ’মাইলের দিকে গেলেই বন শুরু হয়ে যায়। বনের মধ্যে দিয়ে আরেকটা পথ গেছে রামপুরিয়া বস্তির দিকে। এই গ্রামকে সে আমলে বলা হয় টাঙ্গিয়া। বন কেটে গাছ লাগানোর শ্রমিকদের জন্য তৈরি গ্রাম। বন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া লেপচা, নেপালি এবং বর্মার মানুষদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল সেই গ্রাম। তবে কালের গর্ভে কাজ হারিয়েছিলেন তাঁরা। সাহেবদের সঙ্গে বদলে ছিল বন কাটার নীতিও। একসময় সেখানে চিতা, বিভিন্ন বন্য বিড়াল, গাছ ভালুক, মাটি ভালুক, কাঠবেড়ালি প্রভৃতি প্রাণীর বাস ছিল। বন কাটার পর তারা কোথাও গেল, তার হদিশ নেই। শুধু মাঝে মাঝে এখনও তারা অস্তিত্ব জানান দেয়, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয়ে ওঠে মানুষের।

তাকদা থেকে ছ'মিলের দিকে এগোচ্ছেন, বন শেষ হয়ে যাবে হঠাৎ। পথের ওপরে স্তূপীকৃত ছেঁড়াফাটা টায়ার, পাশের দোকান থেকে গড়িয়ে আসা মবিলের কটুগন্ধ, ঠাসবুনোট দোকান ঘরবাড়ির ফাঁক দিয়ে দেখা যায় পাহাড়ের ঢাল বেয়ে লালনীলসবুজবেগুনি প্লাস্টিক, জলের বোতল, আরো আবর্জনা। বোঝাই যায় ছ'মিল এসে গেছে। দার্জিলিং পাহাড়ে ঘুরে বেড়ালে বনজঙ্গলের মধ্যেই ছ'মিলের মতো আলটপকা অনেক বসতি চোখে পড়বে, না গ্রাম না শহর, রাস্তার ওপরে সারবাঁধা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, বড় রাস্তা থেকে সরু পায়ে চলা পথের দু ধারে লোকজনের বাড়ি, পুরোনো কাঠের বাড়ি ভেঙে হামেশা চারতলা পাঁচতলা সরু ছুঁচোলোমতো বাড়ি গজাচ্ছে আকাশ ফুঁড়ে। বছর কয় হলো দেখছি এই সব বাড়ির অনেকগুলোতেই খানিক রঙ চঙ করে আর বাহারি টিনের চাল লাগিয়ে হোটেল হোমস্টে এসব হচ্ছে। 

মজার কথা হল সরকারি বনবিভাগের খাতায় এই সব কটা বিদঘুটে ঘিঞ্জি এলাকাকে দেখানো আছে বনভূমি বলে। ছ'মাইল বাজারও বনভূমি, পেশক রোডের ওপরেই তিন মাইলও বনভূমি, এমনকি ঘুম-জোড়বাংলো বা ওই পথ ধরে এগিয়ে গেলে শুকিয়াপোখরি, মানেভঞ্জঙ এই সব পুরোদস্তুর শহুরে এলাকাও বনভূমি। 

হতেই পারে। সায়েবি মতে যা বন তাইই বাজার, যা বাজার তা-ই বন। কোথাও ধুপিবাগান থাকে, কোথাও ঘরবাড়ি দোকান-টোকান। মূল কথাটা হচ্ছে জায়গাটা কিম্বা বিষয়টা থেকে খাজনা আদায় হচ্ছে কিনা। হিমালয় ঘেঁষা বাংলার(সায়েবরা আসার আগে এই এলাকা কস্মিনকালে বাংলা বলে পরিচিত ছিলো না, কিন্তু সে অন্য কথা) বাঘ-ভাল্লুকে ভরা, মশা-মাছি-জোঁক পরিকীর্ণ পাহাড়বন থেকে খাজনা আদায় কী করে হবে, তা নিয়ে সায়েবদের প্রচুর ভাবতে হয়েছে। বাংলার অন্যত্র যেভাবে সোজাসুজি জমি বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়েছিল জমিদারদের, দার্জিলিং পাহাড় কিম্বা নিচের তরাই ডুয়ার্সের ক্ষেত্রে তেমন হয়নি। আগাগোড়াই জমির মালিক ছিল সরকার, প্রথমে কোম্পানি বাহাদুর, পরে ব্রিটিশরাজ স্বয়ং। পাহাড়ের জমি থেকে খাজনা আদায়ের কয়েকটা মোদ্দা উপায় ছিল। কিছু জমি চা বাগানকে ইজারা দেওয়া হল। আরো কিছু জমিতে দেখা গেল চাষবাস সম্ভব, সেগুলোতে প্রজা বসানো হল। 

প্রজা কারা? পাহাড় থেকে তাড়িয়ে দেওয়া লেপচা-ভোটেরা তো ছিলেনই, নেপাল থেকে সেখানকার আদিবাসীরা আসছিলেন চা বাগানে কাজ করতে, তাদেরও জমি দিয়ে প্রজা বানিয়ে বসিয়ে দেওয়া হল। এই গ্রামগুলোকে বলা হত খাসমহল। খাস অর্থাৎ সরকারি। রাজার জমি। চা বাগান আর খাসমহল বাদে বাকি যে জমি সেখানে পাহাড়, নদী, জঙ্গল, সেগুলো সব নিয়ে নিল সরকারি বনবিভাগ।

আরও পড়ুন
ছিটকিনি পাইপগান ক্রমশ ক্রমশ...

বনের কাজের জন্য মজুর সরবরাহের জন্য টঙিয়া গ্রাম বসানো যেমন হল, কাঠ চালান দেবার জন্য নিয়ে আসা হল সমতলের ব্যবসায়ীদের, তাঁরা কাটা গাছ জড়ো করবেন, বনবিভাগের সায়েবদের খাজনা মিটিয়ে সে গাছ/কাঠ অনেক কসরত করে নিয়ে যাবেন নিচে। সেখান থেকে ট্রেনে কিম্বা নৌকোয় সে কাঠ চলে যাবে কলকাতায় কি অন্যত্র। পাহাড়ের ওক কাঠ দিয়ে জাহাজ বানানো হতো। নিচের পাহাড়ের শাল, তরাই-ডুয়ার্সের শাল লাগত ট্রেনের স্লিপার তৈরিতে, বাড়ি বানাতে। অন্য কাঠে, যেমন সেগুন, শিশু, গামার, চাপ, এসব দিয়ে দরজা জানালা আসবাব তৈরি হত। কাঠ ব্যাবসায়ী এবং তাদের কর্মচারীদের থাকার জন্যও বনবিভাগ জমি দিত নামমাত্র খাজনায়। কিন্তু সে জমিতে স্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল না, বছর বছর চুক্তি সই করতে হত। 

টঙিয়া গ্রামের যে জমি, তাকে বলা হতো সার্ভিস জায়গির। টঙিয়া মজুরদের বলা হত জায়গিরদার। মুঘল আমলের জায়গিরদারদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না, টঙিয়া জায়গিরদারদের ইচ্ছামতো তাড়িয়ে দেওয়া যেত। কাজে না গেলে বা অন্য বেয়াদবি দেখলে, ফারেস রেঞ্জার, গার্ড, বিট ইত্যাদিরা নিয়মিত তাঁদের প্রজাদের শাস্তি দিতেন। কারুর বাড়ি ভেঙে দেওয়া হত, কাউকে অতিরিক্ত কাজ করতে হত, কাউকে বা বেধড়ক মারধর। কাঠ ব্যবসায়ী কিম্বা তাদের কর্মচারীদের এই সব বালাই ছিল না, তবে তাঁদেরও যখন ইচ্ছা তাড়িয়ে দেওয়া যেত। যে জমিতে লোক বসছে সে জমিতে কীরকম বাড়ি ওঠানো যাবে, তা নিয়মমাফিক সায়েবদের সম্মতি নিয়ে ঠিক করতে হত। বাড়ি মেরামত করতে হবে, ঘর বাড়াতে হবে, তার জন্যেও অনুমতি লাগত। এই জমিগুলোকে বলা হত ফিক্সড ডিম্যান্ড হোল্ডিং, সংক্ষেপে এফ ডি হোল্ডিং। 

আরও পড়ুন
নীলপাহাড়ি অঞ্চলের টঙিয়ায়

এদিকে তাকদা ক্যান্টনমেন্ট, ছ'মাইল, তিন মাইল, ওদিকে ঘুম-জোড়বাংলো, রংবুল, শুকিয়াপোখরি, মানেভঞ্জঙ, এই সবকটা জায়গাই আসলে এফ ডি হোল্ডিং। বড় বড় বাড়ি উঠেছে, বাজার বসেছে, লোকসংখ্যা বেড়ে গেছে বহু বহু গুণ, অথচ সরকারি খাতায় এগুলো সব বন, ফরেস্ট ল্যান্ড। ফলে এলাকার বাসিন্দাদের কাছে জমির কাগজপত্র, অর্থাৎ মালিকানা দলিল নেই। টঙিয়াওয়ালাদের কাছে তো নেইই। এদেরও কাগজ নেই, ওদেরও নেই। এই মিলটা বাদ দিলে দেখা যাবে টঙিয়া আর এফ ডি হোল্ডিং এ বিস্তর ফারাক। এখন অবশ্য সরকারি প্রকল্প-টকল্প এসে টঙিয়া গ্রামগুলোয় পথঘাট পাকা বাড়ি এসব হয়েছে। কিন্তু আদি এফ ডি হোল্ডিং ওয়ালারা টঙিয়াবাসীদের নিচু নজরে দেখে থাকে, টঙিয়ার লোকজনও এফ ডি ওয়ালাদের পছন্দ করে না। সেই গরিব বড়লোকের, শ্রেণীর গণ্ডগোল আরকি। 

টাঙিয়া আর এফ ডি হোল্ডিং এর ফারাক সব চাইতে ভালো টের পাওয়া যায় তিন মাইলে গেলে। তিন মাইল বস্তিটা একটাই গ্রাম নয়। পথের ওপরে বা খানিক ভিতরে ঢুকলে দুপাশের যে বড় বড় বাড়ি, সেগুলো সব এফ ডি হোল্ডিং। তাদের মালিকদের জমির কাগজ না থাকতে পারে, টাকা আছে, গাড়িবাড়ি আছে, তাঁরা হয় বাইরে চাকরি করতে যান বা ব্যবসাপাতি করেন। তিন মাইলের এফ ডি হোল্ডিং ছাড়িয়ে বাঁদিকে সরু উৎরাই পথ খাড়া নেমে গেছে রঙ্গারুন চা বাগান হয়ে রংগু নদীর দিকে। সে পথের মোড় থেকে অন্য একটা পথ সোজা চলে গেছে বহু নিচে দাওয়াইপানি খাসমহল বস্তির দিকে। দাওয়াইপানির পথে একটু হাঁটলেই বাঁ দিকে পয়তিসে পারমেন টঙিয়া বস্তি। কোন গাছপালা নেই, পাহাড়ের ন্যাড়া ঢালে ছোট ছোট বাড়ি নেমে গেছে। পয়তিসে পারমেন মানে প্রথমে এই গ্রামে থাকতে এসেছিলেন পঁয়ত্রিশটি পরিবার। পারমেন মানে পারমানেন্ট বা স্থায়ী। সায়েবদের হিসেবে দু জাতের টঙিয়া হত, অস্থায়ী আর স্থায়ী। অস্থায়ী মানে টেম্পোরারি টঙিয়া, সে গ্রাম আজ আছে কাল নেই। স্থায়ী মানে সে গ্রামের লোকজন একটা জায়গাতেই থাকবে, কাজের জায়গা বদলালেই তাদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে দৌড়োতে হবে না। টঙিয়া প্রথা বন্ধ হয়ে গেল, নতুন গ্রাম বসানোও, স্থায়ী অস্থায়ী ব্যাপারটারও আর মানে রইল না। নামগুলো থেকে গেল। অবশ্য লোকের মুখে একরকম, সরকারের খাতায় আর একরকম। 

আরও পড়ুন
নীলপাহাড়ির খোঁজে

সে যাক। পয়তিসে পারমেন গ্রামটা জায়গা হিসেবে বড় ভালো। সে গ্রামের যেখানেই দাঁড়ান, সামনের পাহাড় গড়াতে গড়াতে নেমে যাচ্ছে গভীর রংগু উপত্যকায়। দূরের, মানে নদীপারের পাহাড় সোজা উঠে গেছে দার্জিলিং শহরের বাড়িঘরের জটলায়। পরিস্কার রোদ্দুরের দিনে পয়তিসে পারমেন থেকে দেখা যায় পাহাড়ের মাথায় আর নিচে গায়ে গায়ে লাগানো বাড়ি আর বাড়ি, চা-বাগান, জঙ্গল। পাহাড়ের গায়ের ফিকে সবুজে চা-বাগানের কালচে সবুজ, বনের উজ্জ্বল সবুজ, তার মধ্যে লাল হলদে বাদামি ছোপ। নীল আকাশে পেঁজা সাদা মেঘ দু এক টুকরো। আর এই সব কিছুর ওপরে মাথা তুলে কাঞ্চনজঙ্ঘার চোখ-ঝলসানো সুন্দর। বাঁদিকে গ্রাম রেখে দাওয়াইপানির দিকে হাঁটতে থাকুন, সেই সুন্দর আপনার সঙ্গী, কখনো ধুপিবনের ফাঁক দিয়ে, কখনো অবারিত। সাহস করে এসব কথা বলে ফেলছি এই ভরসায় যে এদিকটাতে সেলফি-সন্ধানী হাফ-প্যান্টুল ট্যুরিস্ট জনতার যাতায়াত এখনো সেভাবে বাড়েনি। যদিও রঙ্গারুন আর দাওয়াইপানিতে কিছু ছোটখাটো হোমস্টে হয়েছে, বড় একটা কেউ সেসব জায়গায় যায়টায় না। 

ভাগ্যিস যায় না। নইলে যে জায়গাটার কথা এখন বলছি সেটা কি চোখের সামনে থাকত? সে জায়গাটা তো যে সে জায়গা নয়, তা এমনিতেই চোখের সামনে থেকেও না-থাকা, দেখতে পেলেও না-দেখা! পেশক রোডের গাড়ি চলা বড় রাস্তা আর তিন মাইল বস্তির বাড়িঘরের জটলা থেকে দু পা হাঁটলেই যে সেখানে পৌঁছনো যায়, নিজের চোখে না দেখলে জানলে তা কি আমারই বিশ্বাস হতো?

আরও পড়ুন
পেশকের পথ ধরে

পয়তিসে পারমেন গ্রামটা পেরুলেই, কাঞ্চনজঙ্ঘার ছায়ায়, ধুপিগাড়ির ঠিক মাঝখানে একটা ছোটমতো মাঠ আছে। মে-জুন মাসে সে মাঠ যখন-তখন মেঘে ভিজে যায়, ঘাস বেড়ে ওঠে, মাঠের প্রান্তের পাহাড়ের গা বেয়ে মেঘ ওঠে নামে সারাদিন। শুধুমাত্র সেই মেঘ-ভেজা মেঘে ছাওয়া সময়ে সেই মাঠের প্রত্যেকটা ঘাসের ডানার ফাঁকে ফাঁকে থোকা থোকা ইয়েসলু ধরে থাকে। সবুজ ঘাসের ডগায়, ইয়েসলুর ছোট পাতায় জল জমে থাকে, আপনার হাতের নখে চোখের পাতায় নাকের ওপরে ঠোঁটের ভাঁজে মেঘের গন্ধ আর বৃষ্টির গুঁড়ো। আপনি নিচু হয়ে আলগোছে তুলে নিচ্ছেন ছোট ছোট ঘন লাল বুনো স্ট্রবেরি, যাকে নেপালি ভাষায় বলা হয় ইয়েসলু। সে স্ট্রবেরির স্বাদে আবহমানের মেঘবৃষ্টি মিশে আছে, সে সঙ্গে অবধ্য অবিনশ্বর বন্যতা, ঔপনিবেশিক শাসনের ক্লেদ যাকে ছুঁতে পারে না, স্বাধীন দেশের স্বাধীন বাজারের দস্যুবৃত্তি যাকে ধ্বংস করতে পারে না, যা সর্ব অর্থেই ন’হন্যতে। 

এই মেঘ-সিঞ্চিত স্ট্রবেরিবর্ণিল মাঠটায় আমি বারবার ফিরে যাই। প্রতিবার মনে হয়, আছে তো, দেখা যাবে তো? ঋতুচক্র বিপর্যস্ত, মেঘবৃষ্টি আগের মতো হয় না, তাছাড়া ধুপিবনের এলাকায় অন্য উদ্ভিদ কতদিন বেঁচে থাকতে পারে? এইসব সাতসতেরো দুশ্চিন্তার কথা ভাবি, আর প্রত্যেকবার আমাকে অবাক করে দিয়ে মেঘের আড়াল ভেঙে দেখা দিতে থাকে এই আশ্চর্য লাল ফল। মাঠে পা দিতে ভয় হয়, পাছে মাড়িয়ে দিই, পাছে নষ্ট হয়ে যায়। 

আরও পড়ুন
লেপচা-দুনিয়ায়

পাহাড় বেয়ে যত মেঘের কাছাকাছি যাওয়া যায়, বুনো স্ট্রবেরির এলাকা বাড়তে থাকে। উত্তর সিকিমের হাজার বারো ফুট ওপরে একটি পাহাড়ি নদীর হিমবাহ-গলা সবুজ জলের পাশে মাঠভর্তি স্ট্রবেরি দেখেছিলাম, মনে আছে। ভুটানের পারো পেরিয়ে যে পথ হা উপত্যকা হয়ে ছুমবি উপত্যকা ও তিব্বতের দিকে গেছে, সে পথের চেলে-লা পাসের নিচে পথের পাশের আল্পীয় বনে অসংখ্য স্ট্রবেরি। এক ভুটানি মহিলা তাঁর শিশুকন্যাকে গিয়ে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ছিলেন। মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসে হাতের বাঁশের টুকরিতে অতি যত্নে তুলে নিচ্ছিলেন সেই বেরি। 

আমাদের পাহাড়ে এরকম জায়গা বিশেষ নেই। সাত হাজার ফুটের ওপর থেকে পাহাড়ের গায়ে স্ট্রবেরি জন্মায় ঠিকই, কিন্তু তা সবজায়গায় নয়, কোথাও কোথাও, খুঁজে বার করতে হয়। সে হিসেবে পয়তিসে পারমেনের এই মাঠটা একটা অদ্ভুত, আশ্চর্য, বিরল জায়গা। সরকারি ক্ষমতা থাকলে আমি এই জায়গায় একটা অভয়ারণ্য বানাতাম। বাঘ থাকার অভয়ারণ্য নয়, ইয়েসলু বা স্ট্রবেরি অভয়ারণ্য। বাঘ হাতি বাঁচানোর জন্য কত খরচা হয়, লোকজনকে ভিটেমাটি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, বুনো স্ট্রবেরি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা হয় না কেন?

আরও পড়ুন
তিস্তা বা রঙ-ন্যিয়োর গল্প

শুধু স্ট্রবেরি কেন? বনে কত কিছু থাকে, কত কিছু বাঁচিয়ে রাখে বন। পয়তিসে পারমেন-তিন মাইল লাগোয়া একটা ছোট্ট পাহাড়ি ঝোরা। তার চারপাশে ডাল-পালায় ঝাপসা, ঝুরি-নামানো এক খন্ড পুরোনো বন বেঁচে আছে। পাহাড়ি বন্ধুরা সেই বন দেখিয়ে বলেছিলেন, এই বনটা আছে বলে আমরা সারাবছর জল পাই, ঝোরা কোনদিন শুকোয় না। দাওয়াইপানি যাবার পথে উৎরাই শুরু হবার মুখে পুরোনো বনের একটা বড় টুকরো আছে। বেশিটাই নষ্ট হয়ে গেছে, তবু কিছু খণ্ড বন আছে রঙ্গারুনের রাস্তায়। এই সব টুকরো টুকরো বন আদি রঙ্গারুন বনের অংশ। বাকিটা ধুপি হয়ে গেছে। ইদানিং পৃথিবী জুড়ে পুরনো, ঐতিহাসিক অপরাধের জবাব নেবার একটা দাবি উঠছে। আমাদের বনগুলোকে ঠান্ডা মাথায় যারা মেরে ফেলল, এখনো মারছে, তাদের অপরাধের বিচার হবে না কোনোদিন?

Powered by Froala Editor