জনবিস্ফোরণে ফেটে পড়বে না পৃথিবী, ২০৫০-এর পর থেকেই দ্রুত কমবে জনসংখ্যা!

‘পপুলেশন বম্ব’। বাংলায় যার অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘জনবোমা’ বা ‘জনবিস্ফোরণ’। সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষত বিগত একদশকে এই শব্দবন্ধ বার বার উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। ক্রমাগত বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংখ্যা। চলতি শতকে জনপ্লাবনে খাদ্য ও বাসস্থান সংকট দেখা দিতে পারে বিশ্বজুড়ে— এমন সম্ভাবনার কথাও প্রকাশ করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে বাস্তবে তেমনটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না পৃথিবীকে। 

সম্প্রতি এমনই আশার কথা শোনাল ‘ক্লাব অফ রোম’। সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমীক্ষায় উঠে এল, চলতি শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই দ্রুত হ্রাস পেতে শুরু করবে বিশ্বের জনসংখ্যা। বছর দুয়েক আগে জাতিসংঘ জানিয়েছিল চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় বিশ্বের জনসংখ্যা পৌঁছাবে ৯.৭ বিলিয়ন বা ৯৭০ কোটিতে। এবং পরবর্তী কয়েক দশক ধরে বজায় থাকবে এই উচ্চ জন্মহারের মাত্রা। ফলে, ২১০০ সালের আগেই জনসংখ্যায় ১১ বিলিয়নের সীমানা ছুঁতে পারে পৃথিবী। 

অবশ্য ‘ক্লাব অফ রোম’-এর সমীক্ষা শোনাচ্ছে অন্য কথা। তাঁদের গবেষণা অনুযায়ী, চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝির আগেই ৮.৮ বিলিয়নের সীমা ছোঁবে বিশ্ব। আর তারপর থেকেই ক্রমে হ্রাস পেতে শুরু করবে জনসংখ্যা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন থেকে যায়, দুটি ভিন্ন ভিন্ন সংস্থার রিপোর্টে এই তারতম্যের কারণ কী? দুটি গবেষণার মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যই বা কোনটি?

এক্ষেত্রে ‘ক্লাব অফ রোম’ তুলে এনেছে শিক্ষা, গড় আয়, সামাজিক উন্নয়নের অনুষঙ্গকে। বলাই বাহুল্য, এই বিষয়গুলিকে এতদিন উপেক্ষা করে যাওয়া হয়েছিল পূর্ববর্তী গবেষণায়। বরং, সেক্ষেত্রে কেবলমাত্র বর্তমান জন্মহারের ওপর ভিত্তি করেই অনুমান করা হয়েছিল জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রকৃতিকে। তবে ইতালীয় সংস্থাটির গবেষণা দেখাচ্ছে, শিক্ষার বিকাশ, গড় আয়বৃদ্ধি এবং সামগ্রিকভাবে জীবনযাপনের মানের উন্নয়ন ক্রমে প্রগতিশীল ও সচেতন করে তুলছে সমাজকে। বিশেষত, পরিবেশ সম্পর্কে তরুণ প্রজন্ম প্রবীণদের থেকে অনেক বেশি সচেতন। পরিবেশ দূষণের কারণে সন্তানধারণে অনিচ্ছুক যুবক-যুবতীদের একটা বড়ো অংশ। আর সেই কারণেই চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকেই হ্রাস পেতে শুরু করবে পৃথিবীর জনসংখ্যা। ২১০০ সালে তা এসে পৌঁছাবে মাত্র ৭.৮ বিলিয়নে। 

গবেষকদের মতে, বিশ্বের পরিবেশগত সমস্যা এবং জলবায়ুর পরিবর্তনকে খানিকটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আনবে জন্মহার হ্রাসের এই প্রবণতা। বদলে, মানব সভ্যতার সামনে হাজির হবে এক ঝাঁক নতুন প্রতিকূলতা। প্রথমত জনসংখ্যা কমায় হ্রাস পাবে কর্মশক্তি। পাশাপাশি সমাজে প্রবীণদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায়, জাপান কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার মতোই গোটা বিশ্বকে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে…

Powered by Froala Editor