সিকিমের ধ্বসের কারণে দায়ী তিস্তার বাঁধ? আশঙ্কিত গ্রামবাসীরা

গ্যাংটকের থেকে দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার। উত্তর সিকিমের (Sikkim) ডিকচু-রাকডং রাস্তার পাশেই ছোট্ট গ্রাম সোকপায়। গতকাল বিকালেই ভয়াবহ এক ভূমিধ্বসের (Landslide) শিকার হয় এই গ্রাম। খাদের গর্ভে তলিয়ে যায় একাধিক বাড়ি। ধ্বসে যায় ‘সেলফি দারা’-খ্যাত অন্যতম একটি টুরিস্ট-স্পটও। তাছাড়াও এই ধ্বসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক। যা উত্তর সিকিমের সঙ্গে গ্যাংটকের যোগাযোগের অন্যতম পথ।

না, এ-ধরনের ধ্বস সোকপায়ে এই প্রথম নয়। বরং, এর আগেও একাধিকবার ধ্বসের শিকার হয়েছে এই গ্রাম। আর তা নিয়েই ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। তবে কি জোশীমঠের মতোই ধীরে ধীরে ধ্বসপ্রবণ হয়ে উঠছে সিকিম? 

স্থানীয়দের কথায়, ২০১৬ সালে শেষবার বড়ো মাপের ধ্বস হয়েছিল সোকপায়ে। তবে প্রতি বর্ষায় ছোটো-খাটো ধ্বসের প্রকোপ লেগেই থাকে এই গ্রামে। তাতে প্রাণহানি না ঘটলেও, মাঝেমধ্যেই বিছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা। এমনকি বর্ষাকালে তাই বাধ্য হয়েই বাসস্থান ছেড়ে নিচে নেমে যেতে হয় এই গ্রামের বাসিন্দাদের। তা নিয়ে একাধিকবার প্রশাসনের কাছে দ্বারস্থও হয়েছেন তাঁরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে স্থায়ী স্থানান্তরের আশ্বাস মিললেও, এখনও পর্যন্ত কোনো আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারেনি প্রশাসন। গতকালের ধ্বসের পর যেন আরও বেশি করে আবশ্যিক হয়ে পড়েছে, এ-ধরনের আশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা। পাশাপাশি যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টিও বিশেষভাবে ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয়দের। ডিকচু-রাকডং খ্যাত এই রাস্তা উত্তর সিকিমের অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম হওয়ায়, প্রতিদিনই এই পথে পাড়ি দেয় কয়েকশো গাড়ি। গতকালের সন্ধের পর ধ্বস নামায় পর্যটকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও, প্রাণহানির আশঙ্কা থেকেই যায়। আর সেখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এসবের পরেও প্রশ্ন থেকে যায়, কী কারণে বার বার ধ্বসের শিকার হচ্ছে এই গ্রাম? 

স্থানীয়দের অভিমত, ক্রমাগত এই ভূমিধ্বসের জন্য দায়ী তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ‘এনএইচপিসি’ বাঁধটি। আগে যে ধ্বস নামত না, এমনটা নয়। তবে এই বাঁধ নির্মাণের পর থেকেই ক্রমে বেড়ে চলেছে ভূমিধ্বসের প্রাবল্য। ঘন ঘন ধ্বসের শিকার হচ্ছে সোকপায়। ২০০৮ সালে এই বিশেষ বাঁধটি নির্মাণ করেছিল জাতীয় হাইড্রোপাওয়ার কর্পোরেশন। স্টেজ ফাইভ বা পঞ্চম স্তরীয় এই বাঁধ নির্মাণের সময় বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন অনেকেই। সরব হয়েছিলেন পরিবেশবিদরাও। পরবর্তীতে এই বাঁধকে পরিবেশবান্ধব তকমা দেয় ‘আন্তর্জাতিক হাইড্রোপাওয়ার অ্যাসোসিয়েশন’। এমনকি কিংবদন্তি ‘ব্লু প্ল্যানেট’ পুরস্কারও পেয়েছিল এই বাঁধ। তবে তারপরও অবস্থান বদলাননি স্থানীয়রা। পরোক্ষভাবে এই বাঁধই ভূমিধ্বসের কারণ, দাবি তাঁদের।

যদিও স্থানীয়দের এই দাবিতে এখনও শিলমোহর বসায়নি সরকার। খনি ও ভূতত্ত্ববিদদের একটি বিশেষ দলকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে ঘটনাটির মূল্যায়নের জন্য। তবে এ-কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই, সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরাখণ্ডের মতোই দ্রুত নগরায়নের পথে এগোচ্ছে সিকিম। সেদিক থেকে দেখলে, পরিকল্পনাহীন এই উন্নয়ন পরবর্তীতে ধ্বস বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে ত্বরান্বিত করতে পারে— সেই সম্ভাবনা বেড়েই চলেছে ক্রমশ…

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More