রেড পান্ডার সংখ্যা ৪৫-এর বেশি নয়, প্যাঙ্গোলিনের দশাও একই; সংকটে সিঙ্গালিলা ন্যাশানাল পার্ক

সারা পৃথিবী জুড়েই বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের স্লোগানের আড়ালে অবাধে চলছে চোরাশিকার। আর এইসমস্ত বে-আইনি ব্যবসার কেন্দ্রে থাকছে মূলত বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণীরাই। এর মধ্যেই দার্জিলিং-এর সিঙ্গালিলা ন্যাশানাল পার্ক কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক ঘোষণা রীতিমতো চিন্তার উদ্রেক করেছে। প্রায় ৩ দশক ব্যাপী প্যাঙ্গোলিন এবং রেড-পান্ডা সংরক্ষণের যে প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে, তা কি অবশেষে ব্যর্থ হতে চলেছে?

কর্তৃপক্ষের রিপোর্টে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান দেওয়া না হলেও, বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে সেখানে রেড-পান্ডার সংখ্যাটা বড়জোর ৪০ থেকে ৪৫। অর্থাৎ, এই কয়েক বছরে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি দূরে থাক, ক্রমশ আরও অবলুপ্তির দিকে সরে যাচ্ছে তারা। একই অবস্থা প্যাঙ্গোলিনের ক্ষেত্রেও।

১৯৯২ সালে সিঙ্গালিলা অভয়ারণ্যকে ন্যাশানাল পার্কের স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং ১৯৯৪ সাল থেকেই সেখানে রেড-পান্ডা ও প্যাঙ্গোলিন সংরক্ষণের কথা ওঠে। এই দুই প্রাণীর জন্য কনজারভেশন ব্রিডিং প্রোগ্রাম শুরু হলে সেই কাজ আরও জোর কদমে শুরু হয়। কিন্তু তাতে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হল কি? স্থানীয় মানুষদের অভিজ্ঞতা বলছে, বছর ২০ আগে পর্যন্ত জঙ্গলে এই দুই প্রাণীকে প্রায়ই দেখা যেত। কিন্তু সম্প্রতি আর তাদের একেবারেই দেখা যায় না।

সিঙ্গালিলা উপত্যকা সোজাসুজি দার্জিলিং থেকে চলে গিয়েছে সিকিমের দিকে। আর তার পূর্ব দিক দিয়ে চলে যাওয়া যায় নেপালে। প্রশাসনের তরফ থেকে মনে করা হচ্ছে নেপাল হয়ে চোরাপথে চিনে পাচার হচ্ছে এই দুই প্রাণী। চিনের মানুষের নানা অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে এই দুই প্রাণী। আর তাই সেখানে চাহিদাও প্রচুর। যদিও ন্যাশানাল পার্ক কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলা হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে বহু শতাব্দী ধরে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থেকেছে ওরা। শিকার তখনও ছিল, কিন্তু সেটা অপরিমিত হয়ে ওঠেনি। বিশেষ করে প্রজনন ঋতুতে শিকার করাকে পাপ বলে মনে করা হত। আর তাই এই ধরনের ছোটো স্তরের শিকার কোনো প্রাণীকে বিপন্ন তো করেনি, বরং এক ধরনের বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা করেছে।

আরও পড়ুন
তিন দশক পর প্রকৃত বাসস্থানে ফিরল প্যাঙ্গোলিন, খুশির হাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকায়

কিন্তু বিশ্বায়িত পৃথিবীতে শিকার যখনই ব্যবসায় পরিণত হয়েছে, তখনই তার উপর থেকে সমস্ত নিয়ন্ত্রণ উঠে গিয়েছে। অবাধে প্রাণীহত্যা শুরু হয়েহে সমস্ত পৃথিবীতেই। তার উপর আধুনিক পর্যটন শিল্পের প্রভাবও পড়েছে। ন্যাশানাল পার্কের মধ্যেই পর্যটকদের জন্য তৈরি হয়েছে পাকা রাস্তা। সারাদিন মোটরগাড়ির যাতায়াত বন্যপ্রাণীদের বিব্রত করে। তারা ক্রমশ নিজেদের পুরোন বাসস্থান থেকে দূরে সরে যায়।

আরও পড়ুন
বাদুড়ের পাশাপাশি করোনার বিস্তারের কারণ প্যাঙ্গোলিনও, সন্দেহ বিজ্ঞানীদের

প্যাঙ্গোলিন এবং রেড-পান্ডাকে বাঁচাতে গেলে মূল কারণকে চিনতেই হবে। আর তার জন্য নিতে হবে সঠিক পরিকল্পনা। নাহলে একেকটি প্রাণী ক্রমশ বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে গেলে মানুষ একা বাঁচতে পারবে না এই পৃথিবীতে।

আরও পড়ুন
৩৭ বছর পর দেখা মিলল ক্লাউডেড লেপার্ডের, উঠছে সংরক্ষণের দাবি

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মৃত্যুর ১৪০ বছর পর প্রমাণিত ডারউইনের তত্ত্ব, পথ দেখাচ্ছে প্রাণী সংরক্ষণেও