নতুন প্রযুক্তিতে বদলে যাবে দেখার দুনিয়া, ফেসবুকে খোলা চিঠি জুকেরবার্গের

ধরা যাক, আমস্টারডাম মিউজিয়ামে আয়োজিত হয়েছে ভ্যান গঘের ছবির একটি বিশেষ প্রদর্শনী। এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে কেই বা চায়? কিন্তু কলকাতা থেকে বিদেশবিভুঁই-এ গিয়ে এই প্রদর্শনী দেখার সামর্থ্য রয়েছে কজনের? কিন্তু ঘরে বসেই যদি দেখা যেত সেই প্রদর্শনী, হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখা যেত গোটা সংগ্রহশালাটা? শুনে অবাস্তব লাগাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রযুক্তির দৌলতে এবার হতে চলেছে এমনটাই। আর সেই প্রযুক্তির নাম ‘মেটাভার্স’ (Metaverse)।

হ্যাঁ, বিগত এক বছর ধরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্রমশ জল্পনা ঘনীভূত হচ্ছিল মেটাভার্স নিয়ে। শেষ পর্যন্ত সমস্ত অপেক্ষার অবসান করে খোলা চিঠিতে মেটাভার্সের কথা ঘোষণা করলেন ফেসবুক (Facebook) অধিকর্তা মার্ক জুকেরবার্গ (Mark Zuckerberg)। জানালেন বদলে যেতে চলেছে মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের অভিজ্ঞতাই। এবার আর দ্বিমাত্রিক স্ত্রিনে ভিডিও বা মেসেজ নয়, বরং মেটাভার্সের মাধ্যমে বহুমাত্রিক ‘বাস্তব’-এর অভিজ্ঞতা পাবেন ব্যবহারকারীরা। 

হ্যাঁ, আগামী দিনের প্রযুক্তির দুনিয়া হতে চলেছে হুবহু সাইফাই সিনেমার মতোই। এবার ঘরে বসেই সামনাসামনি আড্ডা জমানো যাবে প্রবাসী আত্মীয়ের সঙ্গে, করা যাবে অফিসের মিটিং। চাইলে শপিং-এর সময় ট্রায়াল দিয়েও দেখে নিতে পারবেন পছন্দের জামা কেমন লাগছে আপনার গায়ে। আর এইসবটাই হবে হলোগ্রামের মাধ্যমে। হলিউডের সিনেমায় যেমন দেখা যায় আলোকরশ্মি থেকেই তৈরি হচ্ছে প্রতিবিম্ব, অনেকটা সেই রকমই। ত্রিমাত্রিক দুনিয়ার অভিজ্ঞতা পাবেন ব্যবহারকারীরা। আর এই গোটা জিনিসটাই আমাদের কাছে উপস্থাপন করবে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি যন্ত্র। এই পরিষেবা যাতে ন্যূনতম খরচে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টাই করছে ফেসবুক। এমনটাই জানালেন জুকেরবার্গ।

তবে শুধুমাত্র মানুষকে যোগাযোগের অনন্য অভিজ্ঞতাই উপহার দেবে না মেটাভার্স, বরং দূষণ কমিয়ে পৃথিবীর ভবিষ্যৎকেও নিশ্চিত করবে এই প্রযুক্তি। ফেসবুকের এই নিও-ভার্চুয়াল জগতের মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসেই যে-কোনো ঘটনাকে সামনাসামনি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাওয়ায়, কমবে যাতায়াত। যা সামগ্রিকভাবে কমিয়ে আনবে কার্বন ফুটপ্রিন্টকে। জুকেরবার্গের দৃষ্টিভঙ্গিতে ফুটে উঠছে এমনটাই। 

আরও পড়ুন
জনপ্রিয়তম সামাজিক মাধ্যম মাইস্পেস আজ ‘নির্বান্ধব’, ফেসবুকেরও ভবিষ্যৎ এমনই?


আরও পড়ুন
হিংসা, অবসাদ ও মাদকাসক্তিকে পুঁজি করেই ব্যবসা বাড়াচ্ছে ফেসবুক, অভিযোগ প্রাক্তন কর্মীর

আগামী এক দশকের মধ্যেই ১০০ কোটি মানুষের কাছে এই ‘পরাবাস্তবিক’ দুনিয়া। হয়ে উঠবে কয়েকশো বিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল কমার্সের হোস্ট। হয়ে উঠবে পরবর্তী যুগের নতুন কর্মক্ষেত্র। পাশাপাশি শুধুমাত্র ফেসবুক নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ডেভলপার ও ক্রিয়েটাররাও যৌথভাবে নির্মাণ এবং নিয়ন্ত্রণ করবেন মেটারভার্সের। 

আরও পড়ুন
ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বিভ্রাটে ত্রাতা টুইটার; রসিকতায় মাতলেন নেটিজেনরা

অন্যদিকে জুকেরবার্গ এদিন এও জানালেন, বদলে যাচ্ছে ফেসবুকের নামও। এবার থেকে সোশ্যাল মিডিয়া জায়েন্ট সংস্থাটির নতুন পরিচয় হবে ‘মেটা’ (Meta)। বেশ কিছুদিন আগেই অবশ্য এই সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ফেসবুক সিইও। জানালেন, মূল সংস্থা ‘মেটা’-র আওতাতে পৃথক একটি প্ল্যাটফর্ম হয়েই থাকবে ফেসবুক। প্রথাগত সোশ্যাল মিডিয়ার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা যাবে সেখান থেকেই। ‘ফেসবুক’ প্ল্যাটফর্ম বা অ্যাপের নামও থাকছে অপরিবর্তিত। ঠিক এতদিন পর্যন্ত যেমন ফেসবুকের আওতায় ছিল হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম— অনেকটা তেমনটাই। তবে এবার থেকে জুকেরবার্গদের প্রধান লক্ষ্য হবে মেটাভার্সকেই মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। 

১৭ বছর আগের কথা। ২০০৪ সাল। সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে পা রেখেছিল ফেসবুক। তখনও পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়া বলতে অর্কুট আর মাইস্পেস। শুধুমাত্র মেসেজিং কিংবা ভিডিও কলের মধ্যেই তার ব্যবহার সীমিত ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। তারপর ফেসবুকের আগমন এক কথায় বিপ্লব আনে প্রযুক্তির দুনিয়ায়। বদলে দেয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাই। এবার তাদের হাত ধরেই নতুন মোড় নিল প্রযুক্তি। উল্লেখ্য, ‘মেটা’ শব্দটি এসেছে গ্রিক ডিকশনারি থেকে। যার অর্থ ‘বিয়ন্ড’ বা ‘অনন্ত’। আক্ষরিক অর্থেই এক প্রযুক্তির দুনিয়ার পরিধিকে অনন্ত করে তুলতে চলেছে ‘মেটা’, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। এখন দেখার কত দ্রুত সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারে এই উত্তরাধুনিক প্রযুক্তি…

Powered by Froala Editor

More From Author See More