ভুয়ো খবর রুখতে পরিবেশ বিষয়ক তথ্যভাণ্ডার তৈরি ফেসবুকের

ডিজিট্যাল দুনিয়ায় তথ্য এখন হাতের মুঠোয়। আর সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে এখন সমস্ত জায়গা থেকেই তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুতগতিতে। কিন্তু এত দ্রুত উড়তে থাকা তথ্যের ভিড়ে সঠিক খবর আর ভুয়ো খবর আলাদা করা সম্ভব হয় না। দীর্ঘদিন ধরেই ফেসবুক (Facebook) এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের বিরুদ্ধে ভুয়ো তথ্যের অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার। তবে কোভিড পরিস্থিতিতেই প্রথম এমন খবর আটকানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সারা পৃথিবীজুড়ে ফেসবুক প্রোফাইলগুলিতে যোগ করা হয় কোভিড ইনফরমেশন সেন্টারের লেবেল। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। সেই মডেলকে সামনে রেখেই ফেসবুক নিয়ে এসেছে ক্লাইমেট সায়েন্স ইনফরমেশন সেন্টার (Climate Science Information Center)। এই মুহূর্তে পৃথিবীর ২৪টি দেশে কার্যকর এই ইনফরমেশন সেন্টার।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইংল্যান্ডে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয় এই ইনফরমেশন সেন্টারের কাজ। পরের মাসেই আমেরিকা, জার্মান, নেদারল্যান্ড এবং সাউথ আফ্রিকায় চালু হয় এই ব্যবস্থা। কিন্তু কীভাবে আটকানো হয় ভুয়ো তথ্য? ফেসবুকের প্রযুক্তিবিভাগের আধিকারিকদের মতে, তাঁরা কোম্পানির পলিসির কারণেই কারোর পোস্টের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। কিন্তু সেই পোস্ট যদি ভুয়ো খবর ছড়িয়ে দেয়, তাহলে তাকে সহজে চিহ্নিত করতে পারাটাও কর্তব্য। আর তাই ফেসবুকে পরিবেশ সংক্রান্ত প্রতিটা পোস্টের সঙ্গেই থাকবে এই লেবেল। পোস্টের বিষয়বস্তু অনুযায়ী সবচেয়ে সঠিক তথ্যগুলি থাকবে সেখানে। ফলে মানুষ সহজেই দুটি তথ্যের পার্থক্য বুঝতে পারবেন। সাধারণত কোনো পোস্ট ডিলিট করা হবে না বলেই জানিয়েছে ফেসবুক। তবে ভুয়ো তথ্য হিসাবে চিহ্নিত করা গেলে সেই পোস্টের ট্রাফিক বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে সেটি আর মানুষের কাছে পৌঁছতে পারবে না।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কথায়, ২০২০ সালে দুটি ঘটনা এই উদ্যোগ নিতে বাধ্য করে। প্রথমত, অস্ট্রেলিয়ার ভয়াবহ দাবানলের সময় একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে, এটি নাকি আদৌ পরিবেশ সমস্যার জন্য ঘটেনি। কেউ বা কারা ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়েছে। আর অপরটি হল, মরুভূমি অঞ্চলে তুষারপাতের ছবি দিয়ে দাবি করা হয় বিশ্ব উষ্ণায়ন বলে আদৌ কিছু ঘটছে না। পুরোটাই আসলে বাণিজ্যিক স্বার্থে তৈরি করা আতঙ্ক। এই দুই তথ্যই সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছিল ফেসবুকের মাধ্যমে। আর সেই কারণেই কোভিডের পাশাপাশি পরিবেশ বিষয়েও ভুয়ো তথ্য আটকানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

তবে এখনও পর্যন্ত সঠিক তথ্যের জন্য ফেসবুক ভরসা রাখছে কেবলমাত্র জাতিপুঞ্জের নির্দেশিত ওয়েবসাইটগুলির উপরেই। অথচ এইসমস্ত ওয়েবসাইটেও সমস্ত তথ্য যথাযথভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না বলে পরিবেশকর্মীরা নানা সময়ে অভিযোগ তুলেছেন। বিশেষত প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতৃত্বের বক্তব্য প্রাধান্য পেয়ে আসছে। বদলে পিছনে পড়ে যাচ্ছে পরিবেশকর্মীদের স্বাধীন গবেষণার সূত্রগুলি। ফলে ফেসবুকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও তার সঙ্গে কিছুটা আশঙ্কার কথাও শোনাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা।

Powered by Froala Editor

More From Author See More