৪ বছর পেরিয়েও ফেসবুকে ‘জীবন্ত’ কলকাতা পুলিশের পোস্ট

‘এবার পুজোয় শোভাবাজার রাজবাড়িটা যেতেই হবে।’ বা, ‘আজ আমার বাড়িতে ইলিশ হয়েছে।’ অথবা, ‘ধর্মতলায় আজ অসাধারণ মোমো খেলাম।’ আপাতভাবে এই কথাগুলোর মধ্যে কোনো মিল নেই। কিন্তু ফেসবুকে একটি পোস্টের নিচেই রয়েছে এমনই বিচিত্র সব কমেন্ট। শুধু এটুকুই নয়। কেউ খেলার ফলাফল লিখেছেন, কেউ লিখেছেন অতিমারীতে কবে কতজন মারা গিয়েছেন তার পরিসংখ্যানও। কার্যত এমন ধরনের কমেন্টের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ আলোচ্য পোস্টটি কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) তরফ থেকে ৪ বছর আগে করা হয়েছিল একটি বিষয় জানানোর জন্য। বিষয়টি হল, ২০১৭ সালে কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের চেষ্টায় ধরা পড়েন এক মিম পেজের অ্যাডমিন। বাংলা ও ভারতের নানা মনীষীকে নিয়ে বিকৃত ও অশ্লীল মিম তৈরির অভিযোগ ছিল এই পেজটির বিরুদ্ধে।

২০১৭ সালে দুর্গাপুজোর আগে থেকেই ‘স্পেসিফায়েড তারকাটা’ নামের একটি ফেসবুক পেজের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠতে থাকে। বিশেষ করে নেতাজিকে নিয়ে একটি মিম শেয়ার হতেই বহু মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। এই নিয়ে কলকাতা পুলিশের কাছে একাধিক লিখিত অভিযোগও জমা পড়ে। পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ জানায় বিষয়টি তাঁদেরও নজরে এসেছে। কিন্তু অভিযুক্ত পেজটির কোনো অ্যাডমিনের সন্ধান পাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। বোঝাই যাচ্ছিল, ইন্টারনেটের দুনিয়ার হালহদিশ বেশ ভালোই চেনেন তিনি। তবে ডিসেম্বর মাস নাগাদই তাঁকে ধরতে সক্ষম হয় সাইবার ক্রাইম বিভাগ। মেদিনীপুরের ছেলে মণিময় আইচ তখন কলকাতার একটি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। গড়িয়ার কাছে একটি মেসবাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন মণিময়।

২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর মণিময়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর তার পরেরদিনই কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে এই খবর জানানো হয়। এর মধ্যে গত ৪ বছরে সেই পোস্টে কমেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার। আর শেয়ারের সংখ্যাও ৭৮০০ ছাড়িয়েছে। কমেন্টের যেমন কোনো নির্দিষ্ট বক্তব্য নেই, তেমনি মানুষের এই পোস্ট শেয়ার করার পিছনেও কোনো কারণ নেই। কেউ লিখেছেন বৃষ্টি পড়লেই তাঁর এই পোস্টটি শেয়ার করতে ইচ্ছে করে। কেউ আবার লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে তাঁর এই পোস্টটির কথা মনে পড়ল। আবার মেসির গোল করার আনন্দেও কেউ কেউ এই পোস্ট শেয়ার করেছেন। আসলে সামাজিক মাধ্যমে আমরা কতটা প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে সরে যেতে থাকি, তার স্পষ্ট উদাহরণ বোধহয় কলকাতা পুলিশের এই পোস্টটি। আজ ৪ বছর পরেও পোস্টটিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন নেটিজেনরা। কিন্তু সেই অভিযুক্ত মণিময় আইচের কী হল, আদৌ বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছে কিনা, বা মণিময়ের কোনো শাস্তি হয়েছে কিনা – সেসব কিছুই আর জানা যায়নি।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
রাস্তার মধ্যেই ধোঁয়া পরীক্ষা, দূষণ নিয়ন্ত্রণে পথে নামছে কলকাতা পুলিশ