শতবর্ষের দোরগোড়ায় প্রয়াত ‘একুশ শতকের রাজতন্ত্রের প্রতিভূ’ প্রিন্স ফিলিপ

ঠিক শতবর্ষের দোরগোড়ায় এসে বিদায় নিলেন ইংল্যান্ডের মহারাণি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী তথা একুশ শতকের একনায়কতন্ত্রের প্রতিভূ প্রিন্স ফিলিপ। শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যসংবাদ নিশ্চিত করেছে বাকিংহাম প্যালেস। সরকারিভাবে জানানো হয়েছে বার্ধক্যজনিত কারণেই মৃত্যু হয়েছে প্রিন্স ফিলিপের। চলতি বছরের শুরু থেকেই দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। অবশেষে উইন্ডসোর ক্যাসেলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।

গ্রীসের রাজপরিবারের সন্তান ফিলিপ ডিউক অফ এডিনবার্গ নামেই বিশেষভাবে পরিচিত। রাজতন্ত্র শেষ হয়ে গেলেও নিজের ব্যক্তিত্বে তার প্রভাব ধরে রেখেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নৌবাহিনীতে তাঁর নেতৃত্ব নজর কাড়ে মিত্রশক্তির। আর এর পরেই ১৯৪৭ সালে রাণি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের কনসর্টের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। প্রিন্স ফিলিপের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দায়িত্বে থাকা কনসর্ট। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ২০ হাজার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক চুক্তি করেছেন তিনি।

প্রিন্স ফিলিপের কাজের সময়টা সত্যিই সহজ ছিল না। সারা পৃথিবীতে যখন গণতন্ত্রের জোয়ার, তখনই নতুন করে ইংল্যান্ডের হাজার বছরের রাজতন্ত্রের গৌরবকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয় তাঁর হাত ধরে। অথচ ইংল্যান্ডের রাজতান্ত্রিক কাঠামোতেও মহারাণির স্বামী হিসাবে কোনো প্রশাসনিক অধিকার ছিল না তাঁর। জনসমক্ষে চিরকাল রাণি দ্বিতীয় এলিজাবেথের পিছনে থেকেছেন, অথচ পরিবারের মধ্যে কঠিন হাতে সামলেছেন সমস্ত দায়িত্ব। পাশাপাশি অসংখ্য স্কুল, হাসপাতাল তৈরি থেকে শুরু করে নানা ধরণের জনসেবামূলক কাজে ব্যস্ত রেখেছেন নিজেকে।

তবে এতকিছুর মধ্যেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি কোনোদিন। তাঁর তৃতীয় সন্তান প্রিন্স অ্যান্ড্রু কয়েক বছর আগেই আমেরিকায় জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এর মধ্যেই আবার হ্যারি-মেগানের সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গেও উঠে এসেছে প্রিন্স ফিলিপের নাম। নানা সময় নারীবিদ্বেষী এবং জাতিবিদ্বেষী বক্তব্য রেখে বিতর্কের মুখে পড়েছেন তিনি। কিন্তু এসবের মধ্যেও তিনি ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা এবং বাকিংহাম প্যালেসের মধ্যে যে মৈত্রীসূত্র তৈরি করতে পেরেছিলেন, তা সত্যিই ঐতিহাসিক। আর মাত্র দুমাস পরেই শতবর্ষে পা দিতেন প্রিন্স ফিলিপ। ইংল্যান্ড জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছিল সেই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও। এখন সবকিছুর মধ্যেই বিষাদের সুর। প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন পৃথিবীর নানা দেশের রাষ্ট্রনায়করা।

Powered by Froala Editor