সংকটজনক হলেও জীবিত কবি ভারভারা রাও, গুজব না-ছড়ানোর অনুরোধ পরিবারের

'মানুষের মৃত্যু আমাকে বিচলিত করে/মানুষের মৃত্যুর অর্থ তো মনুষ্যত্বেরও দুর্দশা.‌.‌.‌' লিখেছিলেন কবি ভারভারা রাও। ২০০৫ সালের পুরনো এলাগার পরিষদ মামলায়, এক দশক পেরিয়ে ২০১৮ সালের ১৪ই জুন গ্রেফতার হন ভারভারা। বর্তমানে পুনের ইয়েরওয়াড়া তালোজা সেন্ট্রাল জেলে বন্দি অসুস্থ কবির শারীরিক সমস্যার কথা বিবেচনা করে বারংবার তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হলেও, খারিজ হয়ে যায় তা। সম্প্রতি কোভিড-১৯ সংক্রমণের দরুন দেশজুড়ে লকডাউনের পর থেকেই শারীরিক সমস্যা বাড়তে শুরু করে বয়স্ক কবির। বারবারই ভারভারার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, কবির শারীরিক অসুস্থতার খবর কিংবা নথিপত্র কোনোটাই তাঁদের সামনে আনা হচ্ছে না, হাতে তুলে দেওয়া তো অনেক দূরের কথা। এরমধ্যেই ৭৮ বছর বয়সী কবির শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

এর মধ্যেই গতকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, জেলের মধ্যেই অসুস্থ অবস্থায় মারা গিয়েছেন ভারাভারা রাও। স্বাভাবিকভাবেই মানসিকভাবে বিধ্বস্ত কবির পরিবার আরও বেশি আঘাত পান এই ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়তে দেখে। অবশেষে আজ একটি প্রেস রিলিজ জারি করে কোনোরকম গুজব না ছড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে কবির পত্নী পি হেমলতা এবং তিন কন্যার তরফ থেকে। রীতিমতো আর্জি জানিয়ে বলা হয়েছে যে, দয়া করে ভারভারাকে জেলের মধ্যে খুন করে ফেলবেন না!

কিছুদিন আগে কারাগারের মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাওয়ার পর থেকেই কবি ভারভারা রাওয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। সংজ্ঞাহীন অবস্থাতেই তাঁকে সরকারি জেজে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, কিছুদিন পরেই আবার ফিরিয়ে আনা হয় জেলে। সেই সময়েও চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ করেছিলেন তাঁর আইনজীবী এবং পরিবার। অবশেষে গত শনিবার তাঁর আইনজীবী এবং মেয়েকে ভারভারার শারীরিক অবনতির কথা জানানো হয়।

কবির কন্যা পবনা জানিয়েছেন, ঠিকমতো কথা বলতে অসুবিধা হচ্ছে তাঁর বাবার। জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজের দৈনন্দিন কাজটুকুও করতে পারছেন না বৃদ্ধ কবি। দেখা দিয়েছে স্নায়বিক সমস্যাও। পরিবারের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, তাঁর শরীরে সোডিয়াম এবং ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণও যথাযথ না থাকার সম্ভাবনা আছে। এই তথ্য পাওয়ার পরেই তাঁর আইনজীবী নিহাল সিং রাঠোর জেল সুপারিনটেনডেন্টকে ইমেল করে বিস্তারিত মেডিকেল রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। ভিডিও কলিংয়ের মাধ্যমে কবির সঙ্গে পরিবারের লোকেদের সাক্ষাৎ করতে দেওয়ারও দাবী জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন
এবার অস্কারের মঞ্চে জামিয়া মিলিয়ার তিন অধ্যাপক-পরিচালক

বর্তমানে জেলের ভিতরেই হাসপাতাল ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে কবিকে। গত মাসেই পুনরায় খারিজ হয়ে গিয়েছে তাঁর অভ্যন্তরীণ জামিনের আবেদন। এখনও বোম্বে হাইকোর্টে অমীমাংসিত অবস্থায় পড়ে আছে আবেদনটি। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বর্তমান পরিস্থিতির জন্যেও। বএই মুহূর্তে করোনা পরিস্থিতি সবথেকে খারাপ মহারাষ্ট্রে। সেখানে এমনকি জেলের মধ্যেও ইতিমধ্যেই কম করে ৫০০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে, যার মধ্যে মারা গিয়েছেন ৪ জন। এই পরিস্থিতিতেও অশক্ত বৃদ্ধ কবি ভারাভারা রাওয়ের জামিন মঞ্জুর না করা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে দেশের বুদ্ধিজীবী মহল থেকে।

২০১৮ সালের ২৮শে আগস্ট ভীমা কোরেগাঁও সংঘর্ষে মদত দেওয়া এবং জড়িত থাকার অভিযোগে মানবাধিকার কর্মী সুধা ভরদ্বাজ, ভার্ণন গঞ্জালেস, অরুন ফেরেরা এবং গৌতম নওলাখা সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছিল কবি ভারাভারা রাওকেও। তখনই কবি স্ত্রী পি হেমলতা দাবি করেছিলেন প্রায় পনেরো বছরের পুরনো সংঘর্ষে সকল অভিযুক্তের আগেই মুক্তি হয়ে গেলেও, পরে নতুন করে ভারভারাদের গ্রেফতারি ছিল কোনও গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত। চলতি দশকে দেশের বদলে যাওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকেও ইঙ্গিত করেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন
অন্তঃসত্ত্বা সাফুরা জারগার-কে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিল্লি হাইকোর্টের

তিন দশক আগে, সেই ১৯৮১ সালে পিপল্‌স ইউনিয়ন অফ সিভিল লিবার্টিজ (‌পিইউসিএল)‌-‌এর মুখপত্রে ভারভারা রাও লিখেছিলেন, দুষ্টুমির মানে হল বড়দের মুখে মুখে কথা বলা! দুষ্টুমি করলে কী হবে? ‘‌পুলিস ধরে নিয়ে যাবে/খুব সাবধান’। সেই ‘দুষ্টুমি’র শাস্তিই কি পাচ্ছেন ভারভারা?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অন্তঃসত্ত্বা হয়েও কারাবন্দি সফুরা, খারিজ জামিনের আবেদন, ‘গণতন্ত্র’ কি এমনই?