প্রয়াত পাপুয়া নিউগিনির ‘জাতির জনক’ মাইকেল সোমারে

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র পাপুয়া নিউগিনি। প্রথমে জার্মানি তারপর অস্ট্রেলিয়া— দীর্ঘ পরাধীনতার ছায়ায় থাকার পর ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা পেয়েছিল ওশিয়ানিয়া মহাদেশের এই দেশ। আর ‘মুক্তি’-র ঠিক আগের পর্বে অস্ট্রেলিয় শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করে তোলার মূল উদ্যোক্তাই ছিলেন তিনি। মাইকেল সোমারে। শুক্রবার ৮৪ বছর বয়সে মারা গেলেন পাপুয়া নিউ গিনির ‘জাতির জনক’ হিসাবে পরিচিত মাইকেল।

গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই ধরা পড়েছিল অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার। চিকিৎসাও চলছিল তাঁর। তবে কেমোথেরাপির যন্ত্রণা খুব বেশিদিন সহ্য করতে পারলেন না তিনি। পাপুয়া নিউগিনির স্বাধীনতার পর প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন মাইকেল। তারপরেও আরও তিন বার প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন দীর্ঘ ১৭ বছর।

তবে প্রাথমিকভাবে কোনো দলীয় রাজনৈতিক দলের অংশ ছিলেন না তিনি। স্বাধীনতার পর ইস্ট সেপিক প্রদেশের সাধারণ মানুষই নির্বাচিত করেন তাঁকে। যদিও তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার ১৯৬৮ সাল থেকেই শুরু হয় বলে ধরে নেওয়া হয়। সেই সময় থেকেই তিনি নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন নিউগিনির স্বাধীনতা আন্দোলনে। 

প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও, কেবিনেট মন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী, বিরোধীদলের প্রধান এবং সেপিক প্রদেশের রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন সোমারে। ২০১৭ সালে রাজনীতি থেকে অবসর ঘোষণা করেন তিনি। তারপর একান্তেই পরিবারের সঙ্গে কাটিয়েছেন বাকি জীবন।

আরও পড়ুন
কথা বলেন আর মাত্র ৫০ জন, মৃত্যুর পথে পাপুয়া নিউ গিনির আদিমতম ভাষা

পাপুয়া নিউগিনির পার্বত্য অঞ্চল সমৃদ্ধ খনিজ তেল, গ্যাস, সোনা এবং তামায়। আন্তর্জাতিক বাজারে এই সম্পদকে কাজে লাগিয়েই বাণিজ্যের রাস্তা প্রশস্ত করেছিলেন তিনি। তাছাড়াও দেশের ভাষাগত বৈচিত্র এবং অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নেও তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৯৮ সালে বোগেনভিল অঞ্চলে দীর্ঘকালীন চলতে থাকা গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি আয়ত্তে আনাতেও অবদান ছিল তাঁর।

জাতির জনকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পাপুয়া নিউগিনি জুড়ে। শোক প্রকাশ করেছেন সকল রাজনৈতিক নেতাই। সেইসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ট্যুইট করে মাইকেল সোমারেকে বিশেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। অভিহিত করেন ‘নিউগিনির প্রতিষ্ঠাতা’ ও ‘অস্ট্রেলিয়ার পরম বন্ধু’ হিসাবে। ওশিয়ানিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রের ইতিহাসের মূর্ত প্রতীক তিনি। ছিলেন জীবন্ত ইতিহাস। সোমারের মৃত্যুতে উল্টে গেল সেই ইতিহাসেরই একটা পাতা…

আরও পড়ুন
সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে বিষাক্ত বর্জ্য, আইনি লড়াই পাপুয়া নিউগিনির গ্রামবাসীদের

Powered by Froala Editor

More From Author See More