জমি অধিগ্রহণ, প্রকৃতি-নিধন করে নির্মাণকাজ; প্রতিবাদে লং মার্চ ম্রো জনগোষ্ঠীর

বহুবার দেওয়া হয়েছে লিখিত দরখাস্ত। হয়েছে প্রতিবাদও। কিন্তু কোনো কিছুতেই ইতিবাচক কোনো ইঙ্গিত দেয়নি বাংলাদেশ প্রশাসন। এখনও চলছে প্রকৃতি ধ্বংস করে পাঁচ-তারা হোটেলের নির্মাণকাজ। ফলে আবার রাস্তায় নামলেন প্রকৃতির ভূমিপুত্ররা। বেছে নিলেন লং মার্চের পথ। গত রবিবার ‘উন্নয়ন’-এর প্রতিবাদে চিম্বুক পাহাড় থেকে ৩০ কিলোমিটার পথ হাঁটলেন ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। 

তবে আগে থেকে এই লং মার্চের বিষয়ে কোনো পূর্বঘোষণা করেননি তাঁরা। আকস্মিক প্রতিবাদে প্রশাসনকে অস্বস্তিতে ফেলে দেওয়াই ছিল লক্ষ্য। আর বলাই বাহুল্য সফল হয়েছে সেই উদ্দেশ্য। কয়েক মাইল পথ অতিক্রম করার পরেই পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় তাঁদের। তবে ঠেকানো যায়নি স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ। চিম্বুক পাহাড় থেকে ৩০ কিলোমিটার হেঁটে বান্দারবন শহরে গিয়ে শেষ হয় মিছিলটি। বোমাং রাজার মাঠে একটি জনসভাও আয়োজন করেন ম্রো জনগোষ্ঠীর নেতারা।

এদিন লং মার্চে অংশ নিয়েছিলেন স্থানীয় পুরুষ-মহিলারা। তাছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ম্রো সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীরাও যোগ দেন আন্দোলনে। বেজে ওঠে ম্রো জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বাঁশি ‘প্লুং’। 

বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষিত করতেই চিম্বুক পাহাড়ে শুরু হয়েছিল পর্যটনকেন্দ্র তৈরির কাজ। তাতে আপত্তি ছিল না কিছু। তবে পর্যটনকেন্দ্রকে বাণিজ্যিকভাবে সফল করতেই পাঁচ তারা হোটেলের নির্মাণ শুরু করে সিকদার গ্রুপ। ছাড়পত্র দিয়েছিল বাংলাদেশের সেনা কল্যাণ ট্রাস্টও। প্রাথমিকভাবে ৩০ একর জমি নেওয়ার কথা থাকলেও প্রায় হাজার একর জমির ওপরে নির্মাণ চলছে এই প্রকল্পের। যার কারণে অধিগৃহীত হয়েছে ৭০ থেকে ১১৬টি ম্রো গ্রামের চাষের জমি, সমাধিস্থল, মন্দির এবং পাহাড়ি ঝর্নাও। ঝুমচাষে অভ্যস্ত ম্রো উপজাতির ক্ষেত্রে যা ছাড়া অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কার্যত অসম্ভব। তাছাড়াও তাঁদের অনুমতি না নিয়েই ‘নীলগিরি’ ও ‘চাঁদের পাহাড়’-এর নাম পরিবর্তনেও যথেষ্ট আপত্তি ছিল তাঁদের।

বেশ কয়েকবছর আগে একইভাবে উন্নয়নের জন্য উচ্ছেদের শিকার হয়েছিলেন বাংলাদেশেরই খুকি সম্প্রদায়ের মানুষেরা। ম্রো জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতিও যেন সেই দিকেই যেতে চলেছে। তবে এবার আর মুখ বুজে সহ্য নয়। প্রতিবাদের মাধ্যমেই সরকারের কাছে কড়া বার্তা পৌঁছে দিলেন তাঁরা। অন্যদিকে আন্দোলনের ফলে বেশ অস্বস্তিতে বাংলাদেশ প্রশাসন। অনুমতি না নিয়ে লং মার্চ করায় খানিক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। তবে এতকিছুর পরেও গঠনমূলক কোনো সিদ্ধান্তের কথাই শোনাতে পারেননি তাঁরা। পুনরায় জমা দিতে বলা হয়েছে লিখিত অভিযোগ। প্রশ্ন উঠছে আইনের বেড়াজালেই কি আটকে রাখা হবে চিম্বুকের এই আদিম ভূমিপুত্রদের?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
খিদে মেটাত মাটির তৈরি বিস্কুট ‘ছিকর’, প্রচলন ছিল প্রতিবেশী বাংলাদেশেই

More From Author See More