মুঘল রাজপুত্র পাঠ করবেন উপনিষদ, বেনারস থেকে হাজির হয়েছিলেন পণ্ডিতরা

ফিরোজ খান। বিগত কয়েক দিন ধরে গোটা ভারত এই নামটার সঙ্গে পরিচিত হয়ে গেছে। সৌজন্যে, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি। হ্যাঁ, ফিরোজ খানই সেই ‘মুসলিম’ শিক্ষক, যাকে সংস্কৃত ও ধর্ম পড়ানোর জন্য নিয়োগ করেছিল বিএইচইউ। ছাত্রদের প্রতিবাদে, তাঁকে এই পদ থেকে সরে যেতে হয়। কোনও মুসলিম শিক্ষক হিন্দুদের সংস্কৃত ও ধর্ম শেখাবেন না— প্রতিবাদের যুক্তি ছিল এই।

বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি যখন উত্তাল এই নিয়ে, তখন প্রায় ৩৫০ বছর আগের এক ইতিহাস নিঃশব্দে রয়ে গেছিল। যেখানে একই ভাবে উঠে এসেছিল এই দুটি ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ। কিন্তু সেটা বিদ্বেষের ছিল না, ছিল পারস্পরিক সহাবস্থানের। সম্মানের।

সালটা ১৬৫৭। দিল্লির মসনদে তখন বিরাজ করছেন বাদশাহ শাহজাহান। সেই সময়, তাঁর ছেলে, শাহজাদা দারা শুকো ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা করতে শুরু করেন। শুধু ইসলাম ধর্ম, কোরান নয়। বরং গভীরভাবে পড়তে লাগলেন বৈদিক গ্রন্থগুলি। পড়তে শুরু করলেন উপনিষদ। বারবার বুঝতে চেষ্টা করলেন এর গভীর বিষয়গুলো। আর তাঁর এই কাজেই সাহায্য করতে বেনারস থেকে হাজির হলেন কয়েকজন পণ্ডিত। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন কবিন্দ্রাচার্য সরস্বতী।

এই পণ্ডিতদের কাছেই অধ্যায়ন করতে আরম্ভ করলেন দারা শুকো। এই কাজে সম্মতি দিলেন শাহজাহানও। আর এই সমস্ত কাজে তাঁর পাশে ছিলেন কবিন্দ্রাচার্য সরস্বতী। ধীরে ধীরে মুঘল রাজপরিবারের সঙ্গে তৈরি হল সখ্য। পরবর্তীকালে দারা শুকো ফারসি ভাষায় উপনিষদের অনুবাদ করেছিলেন। নাম দেন ‘শির-ই-আকবর’।

ইতিহাসের দিকে তাকালে, এমন সহাবস্থানের উদাহরণ আরও অনেক আছে। স্বয়ং মুসলিম রাজপুত্রকে উপনিষদ শিক্ষা দেওয়ার জন্য এই বেনারস থেকেই পণ্ডিতরা পৌঁছে গিয়েছিলেন। সেখানে আসেনি কোনও ধর্মের বাধা-নিষেধ। আজ, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির পরিস্থিতি, সেই সঙ্গে গোটা দেশের পরিস্থিতি এই ইতিহাসগুলোকে বড্ড বেশি জীবন্ত করে দিচ্ছে।

Latest News See More