প্রথম ট্রায়াল সফল, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন আসতে পারে সেপ্টেম্বরেই

সারা বিশ্বে ছেয়ে গেছে করোনা ভাইরাস। এই মুহূর্তে পৃথিবী জুড়ে আক্রান্ত প্রায় দেড় কোটি মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৬ লক্ষের বেশি। এই কঠিন পরিস্থিতিতেই আশার আলো দেখাল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন। চলছিল এই ভ্যাক্সিনের হিউম্যান ট্রায়াল বা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। এবার হাতে এল তার ফলাফল। ইতিবাচক সেই রিপোর্টই নতুন করে ভরসা যোগাচ্ছে সারা পৃথিবীকে।

পৃথিবীতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে প্রথম যে সংস্থাগুলি উদ্যোগ নিয়েছিল, তার মধ্যেই অন্যতম অক্সফোর্ড। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও জানিয়েছিল তাঁদের ভ্যাকসিন তৈরির কাজ বাকিদের থেকে এগিয়ে রয়েছে অনেকটাই; অন্যদের থেকে আগেই সাফল্য পেতে পারে এই ভ্যাকসিন। ‘ChAdOx1- nCov-19’ নামের এই ভ্যাকসিনটি প্রাথমিকভাবে দুটি পর্যায়ে মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা। প্রথম ধাপে ১০৭৭ জনের দেহে প্রয়োগ করেছিলেন তাঁরা। এই ফলাফল তারই। 

বিজ্ঞানীরা জানান, এই ভ্যাক্সিনের যে বেশ কার্যকারী তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে ফলাফল। অবশ্য রয়েছে সামান্য পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও। কিছুক্ষেত্রে এই ভ্যাক্সিনের প্রয়োগের পর হালকা জ্বর বা মাথা ব্যথার মত উপসর্গ দেখা গেছে। যা সাধারণ প্যারাসিটামল প্রয়োগেই সেরে যায়। এছাড়া তেমন কোনোই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখেননি চিকিৎসকরা। পাশাপাশি এই ভ্যাক্সিনের জন্য দেহে গঠিত অ্যান্টিবডি ভ্যাকসিন প্রয়োগের দীর্ঘদিন পরেও প্রতিরক্ষা করবে ভাইরাসের থেকে। তবে এই ভ্যাকসিন মানুষের জন্য কতটা নিরাপদ বা কতদিন তা মানুষকে নিরাপত্তা দেবে, সে ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে নারাজ বিজ্ঞানীরা। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রয়োগে এই ভ্যাক্সিনের আরও ভালোভাবে চরিত্র বোঝা যাবে বলেই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

এই বিশেষ ভ্যাকসিন জেনেটিক-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এটি এমন একটি ভাইরাসের থেকে তৈরি যা শিম্পাঞ্জীর দেহে সাধারণ ফ্লুয়ের সৃষ্টি করে। এই ভাইরাসের সঙ্গেই বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের সংমিশ্রণ করান। ফলে যা মানবদেহ করোনা ভাইরাসের ইম্যিউন সিস্টেমকে তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে। পাশাপাশি স্পাইক প্রোটিনকে চিহ্নিত করে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলছে রক্তের শ্বেত কণিকারাও। উল্লেখ্য মানবদেহে প্রয়োগের আগে এই ভ্যাকসিন শূকরের দেহে প্রয়োগ করেও সাফল্য পেয়েছিলেন তাঁরা।

দ্বিতীয় পর্যায়ে এই ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হবে যুক্তরাজ্যের ১০ হাজার, যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ হাজার, আফ্রিকার ২ হাজার এবং ব্রাজিলের ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবীদের ওপরে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বাজারে আসতে পারে এই ভ্যাকসিন। তবে ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্য সরকার প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে চুক্তি আবদ্ধ হয়েছে। ভ্যাকসিন প্রস্তুতির পর প্রথম ২০কোটি ডোজ বরাদ্দ থাকবে কেবল ইংল্যান্ডের জন্যেই। এখন দেখার আগামী পরীক্ষায় কত দ্রুত সাফল্য পায় অক্সফোর্ড...

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
করোনার লড়াইয়ে চিকিৎসকদের সাহায্যে এগিয়ে এলেন বাংলার চার পড়ুয়া