দাবদাহে বিপর্যস্ত বাদুড়রা, রক্ষাকর্তার ভূমিকায় ওড়িশার ‘ব্যাট ম্যান’

ওড়িশার বারিপদ শহর। দুপুরবেলায় এই শহরের যে কোনো পার্কে গিয়ে হাজির হলেই দেখতে পাবেন এক অদ্ভুত দৃশ্য। সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য বাদুড়। তার মধ্যে হাতে জলের বোতল নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন এক ব্যক্তি। মাটির ওপর ঝুঁকে পড়ে বসে জল ছিটিয়ে দিচ্ছেন তাদের গায়ে। যত্ন করে জলও খাওয়াচ্ছেন হাতে তুলে। আর খানিক বাদেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে উড়ে যাচ্ছে তারা আবার।

২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসের কথা। ভারতে তখন বেশ জাঁকিয়ে বসেছে করোনা। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছিল, এই নোভেল ভাইরাসের আরও বেশ কিছু প্রজাতির অস্তিত্ব রয়েছে বাদুড়ের মধ্যে। আর তারপরেই শুরু হয়েছিল নির্মম বাদুড়-হত্যা। এবার আরও একবার অস্তিত্বের সংকটে এই 'খেচর' স্তন্যপায়ী। এপ্রিলে পা দিতে না দিতেই উষ্ণতা পৌঁছে গেছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই তাপদাহ সহ্য করতে না পেরেই গাছ থেকে পড়ে যাচ্ছে বাদুড়। কখনও মারাও যাচ্ছে মাটির সঙ্গে সংঘর্ষে। আর অন্যতম এই পলিনেটরদের সংকটের মুহূর্তে এখন ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন ওড়িশার ডেভিড মহম্মদ। একক প্রচেষ্টায় চালিয়ে যাচ্ছেন বাদুড়-উদ্ধারকার্য।

এমন অদ্ভুত কর্মসূচির কারণে বারিপদ শহরের ৫২ বছরের বাসিন্দা ডেভিড এলাকায় পরিচিত হয়ে উঠেছেন ‘ব্যাট ম্যান’ নামে। বাদুড়-রক্ষার জন্যই অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন তিনি। সারা দুপুর ধরেই চলছে তাঁর অভিযান। লক্ষ্য বারিপদ শহরের অন্যতম দুটি বাগান— গান্ধী পার্ক এবং জুবিলি পার্ক।

তবে একা নন তিনি। তাঁর এই কর্মকাণ্ড দেখে এগিয়ে এসেছেন আরও এক সমাজকর্মী, ভানু মিত্র আচার্য। ব্যক্তিগতভাবে তিনি পার্কের গাছে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। সারাদিনে দু'বার পাইপের জলে সিক্ত করে রাখছেন গাছের শরীর। তবে এভাবে যে সমস্যার সমাধান হবে না সে-কথাই জানাচ্ছেন ওড়িশার ‘ব্যাট ম্যান’। তাঁর কথায়, বৃহত্তরভাবে দমকল বা স্থানীয় প্রশাসন এই উদ্যোগে সাহায্য করলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। তবে একাধিকবার পৌরসভা এবং বনদপ্তরে আবেদন করেও লাভ হয়নি কোনো। 

আরও পড়ুন
অন্ধ হয়েও দেখতে পায় ভবিষ্যৎ, বাদুড়ের অদ্ভুত ক্ষমতার কথা জানালেন বিজ্ঞানীরা

পাশাপাশি তাঁর অনুপস্থিতিতে অনেক সময়ই মাটিতে পড়ে থাকা বাদুড়গুলিকে কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তারপর তা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এই ঘটনার বিরুদ্ধেও স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তাঁর বিশ্বাস, শাস্তি নয় একমাত্র জনসচেতনতাই সমাধান হতে পারে এই সমস্যার। ডেভিড আশাবাদী, ভানু মিত্রের মতোই একাধিক মানুষ বাদুড় সংরক্ষণের কাজে এগিয়ে আসবেন ধীরে ধীরে। তবে আপাতত একাই এই লড়াই চালাতে মরিয়া তিনি। চালাচ্ছেনও। কারণ, এমন একটি পরিবেশ-বান্ধব প্রাণীর অস্তিত্ব মুছে যাওয়া নিঃসন্দেহে নষ্ট করবে প্রকৃতির ভারসাম্য…

আরও পড়ুন
সত্যজিতের গল্প থেকেই যেন উঠে এসেছে এই বাদুড়, মানুষপ্রমাণ দৈর্ঘ্যে চমক

Powered by Froala Editor