সত্যজিতের গল্প থেকেই যেন উঠে এসেছে এই বাদুড়, মানুষপ্রমাণ দৈর্ঘ্যে চমক

এই লেখাটি একটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। গল্পের মূল চরিত্র দুজন- প্রথমজন স্বয়ং গল্পটি বলছেন; আর দ্বিতীয়জন একজন সাধারণ বাঙালি ব্যক্তি। কিন্তু খ্রিস্টান। তাঁর এক অদ্ভুত স্বভাব। দিনের বেলা ঘুমোন, আর রাত হলেই বাইরে বেরিয়ে পড়েন। বিশেষ করে রাতের বেলায় গির্জার গোরস্থানই তাঁর প্রিয় জায়গা। এসবের পাশাপাশি পোশাকেও অদ্ভুত বৈচিত্র্য তাঁর। ‘বেঁটেখাটো, কোট-প্যান্টুলুন পরা, গায়ের রং ময়লা’। গল্প যিনি বলছেন, তাঁর ভীষণ বাদুড়ের ভয়। অনেকেরই এমন ভয় থাকে। কিন্তু কাজের সূত্রে একটা পুরনো বাড়িতে থাকার সময় একটা ঘটনা প্রায়শই তাঁর সঙ্গে ঘটতে থাকে। একটা বাদুড় সকাল হলেই তাঁর ঘরের ছাদ ধরে ঝুলতে থাকে। আর সন্ধে হলেই দেখা হয় ওই খ্রিস্টান ভদ্রলোকটির সঙ্গে।

কথায় কথায় উঠে আসে ভ্যাম্পায়ার বাদুড়ের প্রসঙ্গ। এমন সময়ই একদিন রাতের বেলা ঘুম ভেঙে দেখেন, সেই বাদুড়টা বারবার তাঁর গলা লক্ষ্য করে নেমে আসছে। খাতা দিয়ে বাদুড়টার মাথায় আঘাত করতেই ছিটকে চলে যায় ঘরের বাইরে। পরেরদিন তিনি দেখেন, গোরস্থান থেকে খ্রিস্টান ভদ্রলোকটিকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হচ্ছে। তাঁর মাথায় নাকি চোট লেগেছে! স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, ভদ্রলোক নাকি পাগল। গোরস্থানে সন্ধে হলেই নাকি মাথা নিচু করে ঝুলে থাকেন— ঠিক যেন বাদুড়ের মতো! 

গল্পটা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন? হ্যাঁ, সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘বাদুড় বিভীষিকা’। গল্পের খ্রিস্টান ভদ্রলোকটিকেও নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছেন, জগদীশ পার্সিভ্যাল মুখার্জি। ভদ্রলোক কি সত্যিই একটি রক্তচোষা বাদুড়ের রূপ নিতে পারতেন, কমিকসের মিউট্যান্টদের মতো? সত্যজিৎ সেই জায়গাটা পাঠকদের কল্পনার ওপরেই ছেড়ে গেছেন। কিন্তু মানুষপ্রমাণ বাদুড়ের নিদর্শনও কিন্তু রয়েছে পৃথিবীতে। ছোটো-খাটো নয়, রীতিমতো লম্বা একটি কিশোর চাদর মুড়ি দিয়ে ঝুলে আছে— এমনটাই দেখে মনে হবে। আর তা দেখে ভয় তো আসবেই; জগদীশ পার্সিভ্যাল মুখার্জির কথাও মনে হতে পারে আপনার। 

জায়েন্ট গোল্ডেন-ক্রাউন্ড ফ্লাইং ফক্স। নামে ফক্স, আদতে বাদুড়। তবে বাদুড় বলে অবহেলা করবেন না! এদের চেহারা দেখলে রীতিমতো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। দিনে দুপুরে বেরোচ্ছেন, হয়ত দেখলেন আপনার বাড়ির ছাদ থেকে ঝুলে আছে এই বাদুড়। ডানা মেলে ধরলে এই বাদুড়ের উচ্চতা হয়ে যায় প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট! বাকিটা নিশ্চয়ই কল্পনা করতে পারছেন। ঠিক যেন জগদীশ পার্সিভ্যাল ঝুলে আছেন গাছ থেকে। এই ধরণের বাদুড়ের কথা জেনেই কি এমন গল্প লিখেছিলেন সত্যজিৎ? জানা নেই… 

তবে চেহারাটাই বিশাল। আপাতভাবে ডুমুর জাতীয় ফল খেয়েই এরা জীবন কাটায়। ভারতে নয়, এদের নিবাস ফিলিপিন্সে। মুখটা দেখলে শিয়ালের মতো মনে হয়, আর মাথার কাছটায় সোনালি লোম, আর ওই দশাসই চেহারা— এতকিছুর জন্য নাম হয়েছে ‘জায়েন্ট গোল্ডেন-ক্রাউন্ড ফ্লাইং ফক্স’। তবে মানুষের রোষ থেকে এরাও রক্ষা পায়নি। দীর্ঘদিন ধরে চোরাশিকারীদের হাতে বলি হয়েছে এই বিশেষ বাদুড়। তার ওপর বন জঙ্গল কেটে ফেলায় থাকার জায়গাও কমে গেছে। ফলে আজকে এদের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। জগদীশবাবুর মতো এদের বেঁচে থাকাতেও আঘাত পড়েছে। ছবি হয়ত ভাইরাল হয়, কিন্তু এদের বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ খুব কম মানুষই নিচ্ছেন। 

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বাদুড়ের পাশাপাশি করোনার বিস্তারের কারণ প্যাঙ্গোলিনও, সন্দেহ বিজ্ঞানীদের