নতুন ইতিহাস রচিত হওয়া পথে, মিশরের সাম্প্রতিক আবিষ্কারে তাজ্জব পুরাতাত্ত্বিকরাই

মমির দেশ মিশর এখনও অনেকের কাছে ‘অজানা’। আজও সেখানে লুকিয়ে রয়েছে হাজার হাজার রহস্য। যার সমাধান হয়নি কোনো। সেই মিশরই চমকে দিল আবার। রবিবার কায়রোর নিকটবর্তী সাকারায় বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারে অবাক ঐতিহাসিকরা। কারণ এই প্রাচীন পুরাতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলিই যেন বলছে প্রয়োজন ইতিহাস পুনর্লিখনের।

বর্তমান সাকারায় প্রাচীন মিশরের রাজধানী মেমফিসের কাছে খুঁজে পাওয়া গেছে এই সংগ্রহগুলি। খ্যাতনামা মিশরবিদ জাহি হাবাসের নেতৃত্বে বেশ কিছুদিন আগেই শুরু হয়েছিল এই খননের কাজ। রবিবার খননের সময় খুলে যায় ভূগর্ভস্থ একটি বিশাল নেক্রোপলিশ। যার মধ্যে ছিল মোট ২২টি শ্যাফট। সেখান থেকে ৩০০০ বছরেরও বেশি পুরনো প্রায় ৫০টিরও বেশি সারকোফেগাস খুঁজে পান তাঁরা। তাছাড়াও মূল্যবান ধনসম্পদও, মুখোশ, কাঠের নৌকা, এবং প্রাচীন মিশরীয়দের বেশ কিছু খেলা উদ্ধার করেন গবেষকরা।

তবে আসল চমক অন্য জায়গায়। সংগ্রহগুলি পাওয়া গেছে মিশরের ওল্ড কিংডমের ষষ্ঠ রাজবংশের প্রথম ফ্যারাও তেতির পিরামিডের কাছে। সেখানে তেতির স্ত্রী রানি নেয়ারিতের মন্দির পাওয়া গেছে একটি। তাছাড়া বাকি সমস্ত সংগ্রহই প্রায় নিউ কিংডমের নিদর্শন। সংগ্রহগুলির কার্বন ডেটিং জানায় আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষোড়শ থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যেই সমাধিস্থ হয়েছিল সেগুলি। মিশরে নিউ কিংডম শুরু হয়েছিল আজ থেকে ৩ হাজার বছর আগে। অর্থাৎ, তারও প্রায় ৫০০ বছর আগেকার নিদর্শন এগুলি। এই আবিষ্কার যেন নতুন করে ধন্দে ফেলে দিয়েছে গবেষকদের। আর নতুন করে পাজল তৈরি করেছে স্বয়ং ইতিহাস। 

হাভাস জানান, তাঁরা শ্যাফট থেকে খুঁজে পেয়েছেন এক মিশরীয় যোদ্ধার মমি। পাশেই শায়িত ছিল তাঁর পাথরের কুঠারও। তাছাড়াও পাওয়া গেছে ‘বুক অফ ডেথ’ অর্থাৎ মৃত্যুর বইয়ের সপ্তাদশ অধ্যায় লেখা পাঁচ মিটার দৈর্ঘের একটি প্যাপিরাসখণ্ডও। যা নিশ্চিতভাবে সূচিত করে এটি নিউ কিংডমের সময়কার। 

রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশের সময় বেশ কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারকেই সামনে আনেন গবেষকরা। তবে হাবাসের মতে এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা গেছে মাত্র ৩০ শতাংশ। বাকি সংগ্রহের উদ্ধারের জন্য জারি থাকবে রহস্য-অন্বেষণ। 

তবে একদিকে যখন নতুন আবিষ্কারে অবাক প্রত্নতাত্ত্বিকরা, তখন অন্যদিকে মিশরের পুরাতত্ত্ব মন্ত্রক জানিয়েছেন আরও একটি সুসংবাদ। চলতি বছরের শেষেই খুলে যাচ্ছে বহু প্রত্যাশিত মিশরের গ্যান্ড মিউজিয়াম। ২০১১ সালেই এই মিউজিয়াম গঠনের কাজ শুরু হয়েছিল গিজার পিরামিডের কাছে। গত বছরই ছিল উদ্বোধনের কথা। কিন্তু করোনাভাইরাসের ধাক্কা কাটিয়ে শেষ হয়ে ওঠেনি কাজ। মিশরের এই বৃহত্তম মিউজিয়ামই ভবিষ্যতে দর্শকদের প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠবে বলেই আশাবাদী পুরাতত্ত্ব মন্ত্রক...

আরও পড়ুন
বিড়াল মারা যাওয়ার দুঃখে চোখের ভ্রু কেটে ফেলতেন প্রাচীন মিশরীয়রা!

Powered by Froala Editor

More From Author See More