চলতি বছরের শুরুতেই পৃথিবীব্যাপী চিকিৎসকদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল করোনা ভাইরাসের বেশ কিছু ভ্যারিয়েন্ট। অতিমারীর প্রথম তরঙ্গে যে সমস্ত চিকিৎসা পদ্ধতি কাজে এসেছিল, দ্বিতীয় তরঙ্গে আর সেইসমস্ত পদ্ধতি কাজে দিচ্ছে না। প্রশ্ন উঠেছিল, ইতিপূর্বে তৈরি হওয়া প্রতিষেধকগুলিও কি কাজ করবে এই নতুন প্রজাতির উপর? দ্বিতীয় তরঙ্গ মিটতে না মিটতেও আবারও নতুন ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। ইতিমধ্যে ভারতেও তার প্রকোপ শুরু হয়ে গিয়েছে। নতুন এই ‘ডেল্টা প্লাস’ ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আতঙ্কিত অনেকেই। কিন্তু পূর্ববর্তী স্ট্রেইনগুলির থেকে ঠিক কোথায় কোথায় আলাদা এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট?
চিকিৎসকরা বলছেন, এই ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট মোটেও নতুন নয়। ইউরোপের বেশ কিছু দেশে গত মার্চ মাস থেকেই এই ডেল্টা প্লাস বা এওয়াই.১ স্ট্রেইনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তবে ভারতে এর প্রকোপ একেবারেই নতুন। সম্প্রতি দেশের মোট ৩৬ জন আক্রান্ত রোগীর শরীরে সন্ধান মিলেছে এই নতুন স্ট্রেইনের। তবে এই নতুন প্রজাতিটি ইউরোপ থেকে সংক্রমণের সূত্র ধরে এসেছে, নাকি ভারতেই স্বাভাবিক মিউটেশন ঘটেছে তা এখনও জানা যায়নি। আর আশঙ্কার বিষয় হল, নতুন এই স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে কার্যকর নয় মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ককটেল চিকিৎসাও।
এখনও অবধি করোনা চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হিসাবে গণ্য করা হয়েছে মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ককটেলকেই। সম্প্রতি রসে এবং সিপ্লার উদ্যোগে ভারতের বাজারেও এসে গিয়েছে এই ইনজেকশন। তবে নতুন এই স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে কি কোনো কার্যকর চিকিৎসাই নেই? তেমনটা অবশ্য মনে করছেন না চিকিৎসকরা। তাঁদের মতে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করার মতো কোনো ওষুধই ইতিপূর্বে আবিষ্কার হয়নি। তাই চিকিৎসকদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসাই একমাত্র কার্যকরী। আর এক্ষেত্রেও সেই পথই নিতে হবে। তাছাড়া শুধুমাত্র এই অ্যান্টিবডি ককটেল কার্যকর নয় বলেই এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে এটি পূর্ববর্তী স্ট্রেইনগুলির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। রোগীর শরীরে কতটা ক্ষতি করতে পারে এই নতুন স্ট্রেইন, তা জানার জন্য আরও পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তাঁরা মনে করিয়ে দিতে চাইছেন, প্রথম তরঙ্গের চেয়ে দ্বিতীয় তরঙ্গের ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে কার্যকর চিকিৎসার সুযোগ অনেক কম থাকলেও মৃত্যুহার মোটের উপর কমই ছিল।
পাশাপাশি উঠছে আরও একটি প্রশ্ন। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কি আগের প্রতিষেধকগুলি কার্যকর হবে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগেরবারের মতো এবারেও ভাইরাস বদলেছে কেবল তার স্পাইক প্রোটিন। অন্যদিকে প্রতিষেধকগুলি কাজ করে সরাসরি জিন সিকোয়েন্সের মধ্যে গিয়ে। ইতিমধ্যে দেখা গিয়েছে নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও প্রায় সমান কার্যকর ফাইজার এবং স্পুটনিক ভ্যাকসিন। অন্যান্য ভ্যাকসিনগুলির কার্যকারিতা এখনও পরীক্ষাধীন। তবে সেখানেও হতাশাজনক ফল আসবে না বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। সব মিলিয়ে তাঁদের বক্তব্য একটাই। আপাতত আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু এত দ্রুত রূপ বদলাতে থাকা করোনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইটাও যে আরও অনেক দীর্ঘ হবে, সেটা আলাদা করে বলাই বাহুল্য।
আরও পড়ুন
করোনা কেড়ে নিল ভারতের প্রথম এশিয়াডজয়ী সুরত সিং মাথুরকে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বাদুড়ের শরীরে করোনার নতুন প্রজাতি, আবার আঁতুড়ঘর চিন