মাদককাণ্ডে উঠে আসছে দীপিকা-সারার নাম; কেন তলব পাননি কঙ্গনা? টালমাটাল বলিউড

মাদক ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত আরও কারা? বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকেই সেই মামলায় তোলপাড় হয়েই চলেছে। মাদক কাণ্ডে জড়িত অভিযোগে নাম উঠে আসছে বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির তাবড় তাবড় নক্ষত্রদের। এখনও অবধি সাতজনকে সমন পাঠিয়েছে ‘নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো’ বা এনসিবি। এর মধ্যে নাম আছে বলিউডের বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন থেকে শুরু করে সারা আলি খান, শ্রদ্ধা কাপুর অথবা রকুল প্রীত সিংহের মতো বলিউড অভিনেত্রীর। এখন অবধি এই মামলায় ১৮ জনকে গ্রেফতারও করে ফেলেছে এনসিবি।

সারাক্ষণ যে হারে চর্চা হয়ে চলেছে এই ব্যাপারে, তাতে মাঝেমধ্যেই মনে পড়ে যাচ্ছে সেই পুরনো প্রবাদ : যা রটে তার কিছুটাও কি সত্যিই কি ঘটে? আর যদি ঘটেই থাকে, তাহলে বলতেই হবে যে, এই মামলায় অনেক পরত খুলতে বাকি এখনও। মিডিয়ায় উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, দীপিকা বা সারা সমেত যেসব বলিউড নক্ষত্রদের নাম এই মাদকদ্রব্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে উঠে এসেছে, তাঁদের অবিলম্বে ডাকা হতে পারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। কিন্তু অভিযোগটা ঠিক কী?

জানা যাচ্ছে যে, দীপিকা পাড়ুকোনের পুরনো কথোপকথন থেকে মাদক যোগের তথ্য পাওয়া গিয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালের সেই পুরনো চ্যাটে কথোপকথন হয়ে চলেছে ‘ডি’ এবং ‘কে’ নামক দু’জন ব্যক্তির মধ্যে। কথোপকথনের মূল বক্তব্য গাঁজা পাওয়া যাবে কিনা সেই নিয়ে। অভিযোগ উঠেছে যে, এই ‘ডি’ হলেন স্বয়ং দীপিকা পাড়ুকোন আর ‘কে’ হচ্ছেন দীপিকার ম্যানেজার করিশ্মা। এই ঘটনা নিয়েই নড়েচড়ে বসেছে এনসিবি। খতিয়ে দেখা হচ্ছে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কতটা সঠিক। এনসিবি নজরে রাখছে বছর তিনেক আগে দীপিকা সহ বলিউডের বেশ কয়েকজন নামজাদা অভিনেতার আয়োজন করা একটি পার্টিকেও। সেই পার্টির জন্যই কি তাহলে গাঁজার খোঁজ করছিলেন চ্যাটে উল্লেখিত ব্যক্তি ডি? সন্দেহ বাড়ছে।

তদন্তে উঠে আসছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রাক্তন ম্যানেজার জয়া সাহার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন করিশ্মা। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন তাঁর বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী। রিয়ার সঙ্গে জয়ার বিতর্কিত একটি চ্যাট সামনে এসেছিল কিছুদিন আগেই। সেখানে জয়া রহস্যজনকভাবে রিয়াকে লিখেছিলেন সুশান্তের চায়ের সঙ্গে কিছু একটা চার ফোঁটা মিশিয়ে দিতে, যার ফল টের পাওয়া যাবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যেই। তারপরেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয় জয়া সাহাকে। লাগাতার জেরায় জয়া একসময় স্বীকার করেন তিনি রিয়া, শ্রদ্ধা এবং সুশান্তের জন্য ক্যানাবিডিয়ল বা সিবিডি অয়েল কিনে দিয়েছিলেন, যা কিনা আদতে তৈরি হয় গাঁজা থেকেই।

নারকটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো সূত্রে জানা যাচ্ছে যে, এই মাদক কান্ডের রাকুল এবং সারার নাম তুলে এনেছেন রিয়া চক্রবর্তীই। সারা আলি খানের ডেবিউ সিনেমা ‘কেদারনাথ-এ তাঁর বিপরীতে ছিলেন সুশান্ত। সেই সময় তোলা একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল কিছুদিন আগেই, যেখানে একসঙ্গে ধূমপান করতে দেখা গিয়েছিল সারা এবং সুশান্তকে। রিয়ার অভিযোগ অনুযায়ী ওই সিনেমার শুটিংয়ের সময় থেকেই গাঁজার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন সুশান্ত।

যদিও এই প্রসঙ্গে এখনও অভিযুক্ত বলিউড অভিনেতাদের তরফে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সূত্র অনুযায়ী, বর্তমানে গোয়াতে শুটিংয়ের কাজে ব্যস্ত দীপিকা। দিন কয়েক আগে করিশ্মাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলে, তিনি শারীরিক সমস্যার অজুহাতে এড়িয়ে গিয়েছিলেন তা। কিন্তু বর্তমানে তিনিও গোয়াতেই আছেন বলে জানা গিয়েছে। মা অমৃতা সিংয়ের সঙ্গে গোয়াতে আছেন সারা আলি খানও। কথা হচ্ছে, কেন এনসিবির সমন এড়িয়ে যাচ্ছেন কোনো কোনো বলিউড তারকা?

আরও পড়ুন
সম্মানজনক কাজ নেই; ড্রাগ পাচার চক্রে জড়িয়ে পড়ছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মহিলারা

এনসিবির তরফে জানানো হয়েছে যে, অহেতুক ডেকে পাঠানো হচ্ছে না এই বলিউড স্টারদেরকে। এদের বিরুদ্ধে প্রমাণ জড়ো করার আগেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বহু ড্রাগ পাচারকারীদের। এমনকি এনসিবির নিশানায় রয়েছে আদিত্য রায় কাপুর থেকে সোনাক্ষী সিনহার মতো অভিনেতার নামও। কিন্তু সেখানেই উঠে আসছে কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন।

বলিউডের বিরুদ্ধে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আজকের নয়। বেশি দূর না গিয়েও, অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত কীভাবে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন, তা এমনকি দেখানো হয়েছে তাঁর উপর নির্মিত চলচ্চিত্রেও। সেখানে এমন একটি চরিত্রকে দেখানো হয়েছিল যিনি নিজেও প্রখ্যাত অভিনেতা এবং তিনি সঞ্জয় দত্তকে নিয়ে গিয়েছিলেন এই ড্রাগের নেশায়। সেই সময় বিতর্ক হয়েছিল যে, বলিউডের এক অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতার আদলেই নাকি তৈরি হয়েছিল ওই চরিত্রটি। তাহলে ঘুম ভাঙতে এত দেরি কেন হয়ে গেল এনসিবির? নাকি সবকিছু জেনে বুঝেও এতদিন চুপ করে ছিল তারা?

সাম্প্রতিক অতীতে বারবার বলিউডের বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রী সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। জেএনইউ-এর ঘটনায় দীপিকা পাড়ুকোন পৌঁছে গিয়েছিলেন ক্যাম্পাসেও। খোলাখুলি পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ছাত্র-ছাত্রীদের। তাহলে এইবার এই অভিযোগকে ঢাল করে কি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকার? বহুদিন আগে অভিযোগ উঠলেও তাই কি এখনই এর নিষ্পত্তি করতে উঠে-পড়ে লেগেছে তারা?

আরও পড়ুন
উপ-সাহারা অঞ্চলে ক্রমশ বাড়ছে মাদক-নির্ভরশীলতা, দায়ী নগরায়ন?

বলিউড অভিনেতাদের মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকায় প্রসঙ্গে বহুদিন ধরেই সরব হয়েছেন আর এক প্রখ্যাত অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত। কিন্তু মাদক নেওয়ার কথা নিজের মুখেই স্বীকার করেছিলেন কঙ্গনাও। হ্যাশ অথবা কোকেনের মতো ভয়ঙ্কর মাদকদ্রব্য গ্রহণে তিনি রীতিমতো অভ্যস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন কঙ্গনার প্রাক্তন প্রেমিক অধ্যয়ন সুমনও। কিন্তু এখনও অবধি কঙ্গনাকে তলব করা হয়নি এনসিবির দফতরে। প্রশ্ন উঠছে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশংসায় সর্বক্ষণ পঞ্চমুখ থাকার কারণেই কি তাহলে রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন কঙ্গনা?

দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, দেশের যে কোনও মেগা ইন্ডাস্ট্রি অথবা ইভেন্টের বারবারই জড়িয়ে গেছে মাদকদ্রব্য ব্যবহারের অভিযোগ; সেটা বলিউডই হোক কিংবা আইপিএল। এটা স্বীকার করতে কোনো অসুবিধা নেই যে, একটি দেশের যুবসমাজকে ভেতর থেকে ঝাঁঝরা করে দিতে পারে মাদকের মতো ভয়ঙ্কর ব্যাধি। তাই সর্বক্ষণ প্রচারের আলোয় থাকেন যে মানুষগুলো, যাঁদের অনেককেই আইডল বা অনুপ্রেরণা মনে করে দেশের যুব সম্প্রদায়, তাঁদের সঙ্গেই যদি খুল্লামখুল্লা মাদক ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে, তাহলে অবশ্যই একটা ঋণাত্মক প্রভাব পড়তে বাধ্য সেই যুব সম্প্রদায়ের উপর।

তাই অবশ্যই খুঁজে বের করা হোক এর সঙ্গে জড়িত সমস্ত ব্যক্তিদেরকেই। এক্ষেত্রে যেন রাজধর্ম পালন করা হয় যথার্থভাবে। কে বা কারা শাসকদলের কতটা ঘনিষ্ঠ, তা যেন অভিযোগ প্রমাণের মানদণ্ড না হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, বলিউডের সঙ্গেই জড়িত অনেকেই তো বলছেন, এসব তো আর আজকে নতুন কিছু নয়! সব জায়গাতেই সব সময়েই চলে এসেছে এটা। তাই শুধু বলিউডের দিকে আঙ্গুল তাক করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না; বরং এক্ষেত্রে বলিউডকেই ‘সফট টার্গেট’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই।

আরও পড়ুন
মাদকের নেশায় সর্বস্বান্ত মারাদোনার সহ-ফুটবলার, দিন কাটছে রাস্তায়

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

Powered by Froala Editor

More From Author See More