মোৎজার্টের সুরেই এপিলেপ্সির চিকিৎসা, অবাক করা আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের

এপিলেপ্সি (Epilepsy) বা মৃগীরোগ আজও সারা পৃথিবীর স্নায়ুবিদদের কাছে একটা বড়ো সমস্যা। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসা সম্ভব। তবে একটু দেরি হয়ে গেলেই আর চিকিৎসকদের কিছু করার থাকে না। না, এক্ষেত্রেও চিকিৎসার উপায় রয়েছে। অন্তত সাম্প্রতিক গবেষণায় তেমনটাই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। আর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধটি তৈরি হয়েছে অষ্টাদশ শতকেই। অস্ট্রিয়ার প্রখ্যাত সুরকার ওলফগ্যাং আমেদিউস মোৎজার্ট (Wolfgang Amadeus Mozart)। হ্যাঁ, মোৎজার্টের একটি সোনাটাই এপিলেপ্সি আক্রান্তদের সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করতে পারে বলে দাবি গবেষকদের।

গত বৃহস্পতিবার ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্ট’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এপিলেপ্সি রোগীদের উপর সঙ্গীতের প্রভাব নিয়ে একটি দীর্ঘ গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। আর তাতে দেখা গিয়েছে কেবলমাত্র মোৎজার্টের একটি সোনাটাই আশানুরূপ প্রভাব ফেলতে পেরেছে। এই গবেষণার জন্য ইউরোপজুড়ে ১৬ জন রোগীকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। তাঁরা প্রত্যেকেই বর্তমানে চিকিৎসার সীমা পেরিয়ে গিয়েছেন। সাধারণ ওষুধে তাঁদের মস্তিষ্ক কার্যক্ষমতা ফিরে পায় না। কিন্তু মোৎজার্টের ‘সোনাটা ফর টু পিয়ানোজ ইন ডি মেজর কে-৪৪৮’ অসাধ্য সাধন করেছে। মাত্র ৩০ সেকেন্ড এই সুর শুনলেই রোগীদের মস্তিষ্কে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মানসিক স্থিতাবস্থা ফিরে এসেছে একটু একটু করে। আর সেইসঙ্গে দেখা গিয়েছে এপিলেপ্সির কারণে মস্তিষ্কে আইইডি নামক যে স্নায়বিক প্রক্রিয়া চলতে থাকে, তাও ক্রমশ বন্ধ হয়ে এসেছে। আর একটানা ১০ মিনিট এই সুর শুনলে তার প্রভাব থেকে যাচ্ছে কয়েকদিন পর্যন্ত।

তবে কীভাবে এই ঘটনা ঘটছে, তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি গবেষকরা। গবেষণাদলের প্রধান ডার্টমাউথ কলেজের গবেষক রবার্ট কুয়োন জানিয়েছেন, সঙ্গীতের মাধ্যমে মস্তিষ্কের অনেক সমস্যার মোকাবিলাই করা সম্ভব। এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাব নেই। সেই পদ্ধতিকেই এপিলেপ্সি মোকাবিলার কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন তাঁরা। যদিও পরীক্ষার সামগ্রিক ফলাফল খুব একটা আশাব্যাঞ্জক নয়। মোৎজার্টের কে-৪৪৮ সোনাটায় সাফল্য পেয়ে বিজ্ঞানীরা একইরকম আরও নানা সুর প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই সাফল্য পাওয়া যায়নি। ফলে মোৎজার্টের সুরে এমন কী আছে, যা মানুষের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলতে পারে, তা এখনও অজানা। ফলে এটুকুর ওপর নির্ভর করে অ্যান্টি-এপিলেপ্টিক কোনো সঙ্গীত ঘরানা তৈরি করাও সম্ভব নয়। অবশ্য মোৎজার্টের কে-৪৪৮ সোনাটার প্রভাব সম্পর্কে আগেও অবহিত ছিলেন বিজ্ঞানীরা। ১৯৯৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল এই সুর মানসিক স্থিতাবস্থা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু তার পিছনের ব্যাখ্যা আজও অজানাই থেকে গিয়েছে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পিয়ানোয় ব্রিটিশ শিল্পী, শ্রোতা থাইল্যান্ডের হাতি – অরণ্যে রূপকথার জন্ম দিলেন পল বার্টন