সংস্কার শেষ, বেলেঘাটার গান্ধীভবনের দরজা খুলবে শীঘ্রই

১৯৪২ সালে গান্ধীজির হাত ধরে শুরু হয়েছিল ভারত ছাড়ো আন্দোলন। সেই আন্দোলনের সূত্র ধরেই সেই সূত্র ধরে ভারতের স্বাধীনতা এল ঠিকই, কিন্তু দেশের মধ্যে দিয়ে উঠে গেল কাঁটাতারের বেড়া। দেশভাগের আবহে সারা ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল সাম্প্রদায়িক হিংসা, হানাহানি। স্বাধীনতার প্রাক্কালে এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে গান্ধীজি চলে আসেন কলকাতায়। আশ্রয় নেন বেলেঘাটার হায়দারি মঞ্জিল ভবনে। দিনটা ছিল ১২ আগস্ট। সাম্প্রদায়িক হিংসার বিরুদ্ধে সেদিন থেকেই তিনি শুরু করেছিলেন ২৫ দিন ব্যাপী অনশন প্রতিবাদ।

হ্যাঁ, পরবর্তী এই ঐতিহাসিক বাড়িটিই পরিচিতি পায় ‘গান্ধীভবন’ নামে। বছর দুয়েক আগে ২০১৮ সালে গান্ধীজির স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়িটির সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এবার জনসাধারণের জন্য খুলে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটির দরজা। চলতি বছরে গান্ধীজয়ন্তীর দিনই উদ্বোধন হবে নতুন রূপে সজ্জিত গান্ধী আশ্রমের। 

তবে গান্ধীভবনের সংস্কার হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে বাড়ির মূল কাঠামো। কেবলমাত্র বাড়ানো হয়েছে ঘরের সংখ্যা। বাড়ির ঐতিহ্যকে নষ্ট না করেই তৈরি করা হয়েছে সুদৃশ্য প্রবেশদ্বার, ফুলের বাগান। সেইসঙ্গে খোলা হয়েছে একটি সংগ্রহশালা। গান্ধীজির ব্যবহৃত চরকা, লাঠি, চশমা, ঘড়ি, বিছানা-সহ বহু চিঠিপত্রের সংরক্ষণ হচ্ছে এই নবনির্মিত মিউজিয়ামে। থাকছে ডিজিটাল লাইব্রেরিও। আগামীতে এই মিউজিয়ামে পর্যটকদের প্রবেশের জন্য থাকবে টিকিটের বন্দোবস্ত। 

ঐতিহাসিক এই গান্ধীভবন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দীর্ঘদিন পালন করেছে অলাভজনক সংগঠন কলকাতা গান্ধী স্মারক সমিতি। ২০০৭ সালে এই দায়িত্ব স্থানান্তরিত হয় কলকাতার পূর্তদপ্তরের হাতে। তবে তারপরেও খানিক অযন্তেই পড়ে ছিল ঐতিহ্যবাহী ভবনটি। এমনকি বছর কয়েক আগে বাড়িটি নিলামে বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপনও প্রকাশ করেছিল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। জমির দখল নেওয়ার ইঁদুর দৌড়ে নেমেছিল একাধিক প্রোমোটার, জমি মাফিয়া এবং নির্মাণ সংস্থা। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর নড়ে চড়ে বসে রাজ্য সরকার। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয় সংস্কার কর্মসূচি। 

আরও পড়ুন
শান্তি দেবী কি সত্যিই জাতিস্মর? গবেষণায় আগ্রহী খোদ গান্ধীজিও

২০১৮ সাল থেকে সংস্করণের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল গান্ধীভবনের দরজা। বছর তিনেক পর এবার নতুন রূপেই পর্যটকদের সামনে আসছে ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটি। তরুণ প্রজন্মকে কলকাতার এই বিস্মৃত ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দিতে এই সংস্করণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলেই মনে করছেন ঐতিহাসিক থেকে সমাজের বিশিষ্টজনেরা…

আরও পড়ুন
বিনা-চিকিৎসাতেই চলে গেলেন কিংবদন্তি ঝুমুরশিল্পী গান্ধীরাম মাহাতো

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
নিঃশব্দেই বিদায় নিলেন ‘আফ্রিকার গান্ধী’ কেনেথ কুন্দা

More From Author See More