দূষণমুক্ত শীততাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র, ‘এসি’-র বিকল্প খুঁজতে অতীতে ফিরলেন মার্কিন ডিজাইনার

কার্বন নির্গমন, জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা বিশ্ব উষ্ণায়ন— আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি চর্চা চলছে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি নিয়েই। কিন্তু শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে এই আলোচনায় আদৌ কতটা লাভবান হচ্ছি আমরা? হ্যাঁ, যত তাপমাত্রা বাড়ছে পৃথিবীর, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বৃদ্ধি পাচ্ছে এয়ার কন্ডিশনার বা শীততাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের ব্যবহার। বাড়ছে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণও। ত্বরান্বিত হচ্ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming)। এবার এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে অতীতে ফিরলেন মার্কিন ডিজাইনার। তৈরি করে ফেললেন দূষণমুক্ত শীততাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র। 

আজ থেকে তিন চার দশক আগেও ভারতে চল ছিল না রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজের। সে-সময় পানীয় জলকে ঠান্ডা রাখার জন্য ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হত মাটির কলসি বা জালা। পোড়া মাটির (Terracotta) কলশির গায়ে থাকা সূক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে ধীর গতিতে বাষ্পীভূত হত জল। আর সেই বাষ্পীভবনের লীনতাপ ঠান্ডা করত কলশি বা কুঁজোর জলকে। ভৌতবিজ্ঞানের এই অতিসাধারণ ঘটনা আমরা সকলেই পড়েছি ছোটোবেলায়। এয়ার কন্ডিশনারের বিকল্প হিসাবে এই বিশেষ পদ্ধতিকে বেছে নিয়েছেন মার্কিন ডিজাইনার। 

‘নেভ’-খ্যাত (Nave) এই যন্ত্র পোড়ামাটির তৈরি শীততাপ নিয়ন্ত্রণের এমনই একটি বিশেষ ব্যবস্থা। যা হাজার দুয়েক বছর আগে বাড়ি ঠান্ডা করার কাজে ব্যবহৃত হত প্যালেস্তাইনে। সাধারণ টাইলস বা ফলকের মতোই দেখতে এই যন্ত্রকে। তবে ইটের মতো পুরু নয় নেভ। বরং, জল ধারণের জন্য নেভের মধ্যবর্তী অংশ ফাঁপা। নির্দিষ্ট সময় পর পর সেখানে জল ঢাললেই প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা হবে ঘর। ঘরের অভ্যন্তরে কিংবা বাইরের দেওয়ালেও অনায়াসেই সংযুক্ত করা যাবে এই বিশেষ ব্যবস্থা— এমনটাই জানাচ্ছেন মার্কিন শিল্পী। সেইসঙ্গে টেরাকোটার কাজ দৃষ্টিনন্দন করে তুলবে ঘরের দেওয়ালকেও।

এসি-র পরিবর্তে এই যন্ত্রের ব্যবহারে যেমন গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন কমবে, তেমনই কমবে শক্তির অপচয়ও। সাধারণ আলো কিংবা পাখার থেকেও বহুগুণ বেশি বিদ্যুৎ লাগে এসির জন্য। নেভ-এর ব্যবহার বাড়লে চাহিদা কমবে বিদ্যুতের। সেদিক থেকেও বাঁচবে পরিবেশ। পাশাপাশি এই যন্ত্র স্থাপন করার এককালীন খরচ এসির থেকে বেশি হলেও, দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবেন ব্যবহারকারীরাও। সবমিলিয়ে প্রাচীন প্রযুক্তিকে ফিরিয়ে এনেই পরিবেশ বাঁচানোর পথে হাঁটছেন মার্কিন শিল্পী ও হলন ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষক ইয়ায়েল ইসাচারোভ। সম্প্রতি তাঁর তৈরি এই নকশা প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত বাণিজ্যিক পত্রিকা ‘ফাস্ট কোম্পানি’-য়। অবশ্য এখনও পর্যন্ত কোনো বিনিয়োগকারী সংস্থাই আগ্রহ দেখায়নি তাঁর এই পরিবেশবান্ধব ‘এসি’ যন্ত্রের বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য…

Powered by Froala Editor