ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে মাছের গণমৃত্যু, কারণ কী?

গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ফারাক্কার গঙ্গায় ভাসতে দেখা গিয়েছিল হাজার হাজার মাছের (Fish) মৃতদেহ। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, তেলেঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্রের মালাবার হিল-এও। বৃহন্মুম্বাই মিউনিসিপ্যালিটির দাবি, শুধু মালাবার হিলের বনগঙ্গা জলাধার থেকে মিলেছে চার ট্রাক মৃত মাছ! সেখান থেকে সহজেই অনুমান করা যায় মোট পরিসংখ্যানটা। মাছের এই অস্বাভাবিক গণমৃত্যুই (Mass Death) ভাবিয়ে তুলেছে গবেষক এবং পরিবেশবিদদের। 

খুব সহজ কথায় বলতে গেলে জলে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবই মৃত্যু ডেকে আনছে মাছেদের। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, বাংলা কিংবা উত্তরপ্রদেশের এই সকল ঘটনাগুলি আদৌ কি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা? নাকি কোনো যোগসূত্র রয়েছে প্রতিটি ঘটনার মধ্যে?

প্রাকৃতিকভাবে গণমৃত্যু ঘটে কোনো অঞ্চলের আকস্মিক নৃতাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটলে। তবে ভারতের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ঘটনা দায়ী নয়। বরং, পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের বদলই এই গণমৃত্যুর কারণ। হ্যাঁ, ক্রমশ ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে জলজ বাস্তুতন্ত্রের। আর সেই কারণেই মাছ, কচ্ছপ-সহ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীদের বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে বহু ভারতীয় পরিবেশে। 

সাধারণত, প্রতিলিটার জলে ৯.৫ মিলিগ্রাম বা তার বেশি মাত্রায় অক্সিজেনের উপস্থিতি মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য আদর্শ হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। প্রতি লিটারে ১ মিলিগ্রামের কম অক্সিজেন থাকলে বাঁচতে পারে না কোনো প্রাণীই। অন্যদিকে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ৩-৪ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার হলে, সেই পরিবেশে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে বিভিন্ন শৈবাল গোত্রের অণুজীব। 

২০১৯ সালে ভারতের ২১৫টি জলাশয়ের মধ্যে এক বিশেষ সমীক্ষা চালায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড। সেই রিপোর্টেই উঠে আসে এক বিচিত্র তথ্য। গোটা ভারত জুড়ে এমন কোনো জলাশয় কিংবা নদী নেই যেখানে দ্রবীভূত অক্সিজনের পরিমাণ ৯.৫ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অক্সিজেনের মাত্রা ৪-৭ মিলিগ্রামের মধ্যে। বিশেষত কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ুর মতো দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে এই মাত্রা প্রায় ৪-এর কাছাকাছি।

স্পষ্টই এই ঘটনার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে মানুষের কর্মকাণ্ড। একদিকে রাসায়নিক দূষণে যেমন জলের অম্লতা, ক্ষারীয় চরিত্রের পরিবর্তন হচ্ছে; তেমনই জৈব বর্জ্য ও সার জলে ফেলার কারণে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে শৈবাল। দিনের বেলায় সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরির জন্য ব্যাপক মাত্রায় অক্সিজেন শোষণ করে এই ধরনের শৈবালগুলি। আর সেই ঘটনার জেরেই ক্রমশ কমছে অক্সিজেনের মাত্রা। ২০১৯ সালের পর এই ধরনের কোনো সমীক্ষা করা হয়নি সর্বভারতীয় স্তরে। তেমনটা করা হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে আরও ভয়াবহভাবে বেড়েছে মানুষের কার্যকলাপের প্রভাব। আর তার জেরেই বদলে গেছে প্রাকৃতিক সমীকরণ। যার মাশুল দিতে হচ্ছে মাছ কিংবা কচ্ছপের মতো জলজ প্রাণীদের…

Powered by Froala Editor

Latest News See More