সমুদ্রের তলদেশে লুকিয়ে ঘাতক পুল, সাঁতার কাটলেই অবধারিত মৃত্যু!

ডেড সি বা মৃত সাগরের কথা সকলেরই অল্পবিস্তর জানা। জর্ডন সংলগ্ন এই সাগর আদতে একটি হ্রদ। তবে সে যাই হোক না কেন, ডেড সি-র জলে লবণের পরিমাণ প্রায় ৩৪.২ শতাংশ। অর্থাৎ, সমুদ্রের জলের থেকেও প্রায় সাড়ে ৮ গুণ লবণাক্ত এই জল। আর সেই কারণেই এই হ্রদ কোনো প্রাণীর জন্যই বসবাসযোগ্য নয়। তবে শুধু ডেড সি-ই নয়, এবার লোহিত সাগরের তলদেশেও প্রাণঘাতী এক পুলের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। লোহিত সাগরের (Red Sea) এই বিশেষ অংশে জলের লবণাক্ততা ডেড সি-এর সমতুল্য। 

হ্যাঁ, অবাক লাগলেও সত্যি। প্রকাণ্ড সাগরের তলায় যেন এক টুকরো নরককুণ্ড। সম্প্রতি মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দৌলতে সামনে এল এমনই এক বিচিত্র আবিষ্কার। শুধুমাত্র এই অংশটুকুতেই কেন লবণের আধিক্য— তা এখনও স্পষ্ট নয় গবেষকদের কাছে। তার অন্যতম কারণ হল, এমন একটি অঞ্চল যে লুকিয়ে রয়েছে লোহিত সাগরের তলায়, সে-ব্যাপারে কোনো ধারণাই ছিল না গবেষকদের। বলতে গেলে এই আবিষ্কারও আকস্মিকভাবেই। 

মূলত, লোহিত সাগরের বাস্তুতন্ত্র নিরীক্ষণের জন্যই মাঠে নেমেছিলেন মায়ামির গবেষকরা। দূর-নিয়ন্ত্রিত আন্ডারওয়াটার ভেহিকলের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করছিলেন সমুদ্রের তলদেশের প্রাণী ও অন্যান্য অণুজীবদের। সেই সময়ই তাঁদের নজর কাড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠেরর প্রায় ১.৭ কিলোমিটার নিচে অবস্থিত এই ব্রাইন পুলটি। প্রাথমিকভাবে বেশ অবাকই হয়েছিলেন গবেষকরা। কারণ, এই বিশেষ অঞ্চলটিতে জীবিত প্রাণীর চিহ্নমাত্র নেই। বরং সেখানে ভেসে বেড়াচ্ছে মাছ ও অন্যান্য প্রাণীদের মৃতদেহ। 

তবে লোহিত সাগরের তলদেশে একটি বিশেষ ক্ষেত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এই লবণাক্ত জল। তার ঠিক বাইরে দিব্যি বেঁচে-পরতে আছে ইল, চিংড়ি-সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী। পুলে মৃত প্রাণীদের দেহ সমুদ্রের স্রোতে ভেসে বাইরে চলে এলে, সেগুলিই রীতিমতো মহার্ঘ্য খাদ্য হয়ে ওঠে তাদের। 

দূর-নিয়ন্ত্রিত রোবটের মাধ্যমেই গবেষকরা জল সংগ্রহ করেছিলেন এই বিশেষ পুলটির। আর তার বিশ্লেষণেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জলে লবণের মাত্রা রীতিমতো অবাক করে দেয় গবেষকদের। বিজ্ঞানীদের অভিমত, কোনো বিশেষ ভূগর্ভস্থ প্রক্রিয়ার কারণেই লবণের পরিমাণ এত বেশি এই বিশেষ অংশটিতে। তবে তা সত্ত্বেও বেশ কিছু অণুজীবের উপস্থিতি রয়েছে এই জলে। এই ঘটনাই নতুন করে আশা যোগাচ্ছে গবেষকদের। পৃথিবীর বাইরে বৃহস্পতি ও শনি গ্রহের বেশ কয়েকটি উপগ্রহে রয়েছে বরফের সমুদ্র। সেখানে এহেন লবণাক্ত ব্রাইন পুলের অস্তিত্ব থাকলে, প্রাণের উপস্থিতিও সম্ভব বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এই প্রথম নয়। এর আগে ভূমধ্যসাগর ও মেক্সিকো উপসাগরেও লবণাক্ত পুলের হদিশ পেয়েছিলেন গবেষকরা। তবে পূর্ববর্তী সমস্ত আবিষ্কারের লবণাক্ততাকেই ছাপিয়ে গেছে লোহিত সাগরের এই ঘাতল পুল… 

Powered by Froala Editor