জায়গা নেই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে, গ্রামে ঢুকতে বাধা, জঙ্গলই ঠিকানা পরিযায়ী শ্রমিকের

সুদূর চেন্নাই থেকে ঘরে ফিরছেন যুবক। অন্যান্য পরিযায়ী শ্রমিকদের মতোই কোনোরকমে কেটেছে লকডাউনের দুমাস। অবশেষে প্রথমে স্পেশাল ট্রেন এবং পরে বাস ধরে নিজের গ্রামের কাছে এসে পৌঁছোলেন বারিক নায়ক। সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে পরিবার। এই গল্পও মিলনাত্মক হতে পারত। কিন্তু সময়টা যে বড় অদ্ভুত। করোনা তো শুধু একটা ভাইরাস নয়, সেইসঙ্গে সমাজের মধ্যেও ঢুকিয়ে দিয়েছে এক অসুখ। সন্দেহ আর অবিশ্বাসের অসুখ। এতদিন পর বাড়ি ফিরছে যে, তার শরীরেই যদি থাকে ভাইরাস! অবশ্য এই সচেতনতার চেহারা অনেক ক্ষেত্রেই হয়ে দাঁড়াচ্ছে নিছক কুসংস্কার। আর তার প্রকাশ স্বাভাবিকভাবেই অমানবিক। ঠিক তাই ঘটল ওড়িশার গঞ্জাম জেলার বাসিন্দা বারিকের সঙ্গেও।

ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ সরকার আগেই দিয়েছিল। এক্ষেত্রে হোম-কোয়ারেন্টাইন সম্ভব না হলে আছে সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। কিন্তু বারিকের ভাগ্যে সেসব কিছুই জুটল না। সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থেকে তাকে বিদায় জানানো হল। অজুহাত, সেখানে থাকার জায়গা নেই। অন্যদিকে গ্রামের পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে সন্দেহপ্রবন প্রতিবেশীরা। আর তাদের নেতৃত্বে স্থানীয় সর-পঞ্চায়েত। অতএব গ্রামে ঢোকাও সম্ভব হল না তাঁর পক্ষে। বাধ্য হয়েই আস্তানা গাড়লেন কাছের একটি জঙ্গলে। যেন সেই তাঁর কোয়ারেন্টাইন সেন্টার।

দুদিন জঙ্গলের মধ্যে দিন কাটানোর পর অবশেষে খবর পৌঁছয় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। পুলিশ এসে সেই অবস্থায় উদ্ধার করেন তাঁকে। তারপর নিয়ে যাওয়া হয় অন্য একটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। এখন সেখানেই আছেন বারিক। তবে এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে এমন ঘটনা ঘটেছে বারবার। কিছুদিন আগে ওড়িশার ব্রহ্মপুর জেলার মাধব পাত্র নামের এক ব্যক্তিকে তাঁর গাড়ির মধ্যে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ্য করা হয়। তাঁকেও অবশেষে উদ্ধার করে পুলিশ। 

এর মধ্যে করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে আসার ঘটনায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে ওড়িশায় ৫ লক্ষের বেশি শ্রমিক ফিরে এসেছেন। অবশ্য লকডাউনের শুরুতেই শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা গেলে পরিস্থিতি এতটা জটিল হত না বলে মনে করছেন অনেকেই। কিন্তু কোনোভাবেই এমন অসহনশীল ব্যবহারকে স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব নয়। করোনা ভাইরাস এখনও সারা দেশজুড়ে তার আক্রমণ বজায় রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র মানুষের মানবিক ব্যবহারই সবকিছুকে পরাজিত করতে পারে। তাই সমস্ত সতর্কতা মেনে মানুষকেই মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

Powered by Froala Editor