চলতি বছরে ৭টি মানুষখেকো চিতা শিকার রুদ্রপ্রয়াগে, ফিরছে করবেটের স্মৃতি?

একজন, দু’-জন নয় সব মিলিয়ে প্রায় ১২৮ জন মানুষের প্রাণ নিয়েছিল ঘাতক চিতা। তার আতঙ্কে বাড়ি থেকে বেরনোও দুষ্কর হয়ে উঠেছিল গ্রামবাসীদের কাছে। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁদের ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এক শিকারি সাহেব। রাতের পর রাত গভীর জঙ্গলে ছুটে শিকার করেছিলেন সেই মানুষখেকো চিতাকে।

হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। জিম করবেটের ‘দ্য ম্যান ইটিং লেপার্ড অফ রুদ্রপ্রয়াগের কথাই হচ্ছে। গ্রামের মানুষদের প্রাণ রক্ষা করতে সেবার বন্দুক তুলেছিলেন ‘কর্পেট সাহিব’। সেটা ছিল ১৯১৮ সাল। তার ঠিক একশো বছর পেরিয়ে এসে যেন পুনরাবৃত্তি হল সেই ঘটনার। সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগেই বন-দপ্তরের শিকারিরা হত্যা করতে বাধ্য হলেন একটি চিতাকে। আশ্চর্যের বিষয় হল, গত ২৫ তারিখেই পেরিয়ে গেছে জিম করবেটের জন্মদিন। আর ঠিক পরের দিনই ঘটল এই ঘটনা। এ যেন এক অদ্ভুত সমাপতন।

গত ২৪ জুলাই রুদ্রপ্রয়াগ জেলার জাখোলি তেহসিলের সিল্লা-বাহমান গ্রামের একটি বছর দেড়েকের এক শিশুকে টেনে নিয়ে যায় চিতাটি। ঘটনার অভিযোগ পেয়েই নড়ে চড়ে বসেন বন দপ্তরের আধিকারিকরা। তবে প্রাথমিক অনুসন্ধান চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর বাধ্য হয়ে শ্যুটার নিয়োগ করা হয় চিতাটিকে হত্যার জন্য। 

গভীর জঙ্গলে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষার পর শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে মানুষখেকো চিতাটি। বন দপ্তরের সূত্রে জানানো হয়েছে, চিতাটি আধিকারিকদের আক্রমণ করলে বাধ্য হয়েই গুলি করা হয় তাকে। তবে এখনও পর্যন্ত ছোট্ট শিশুটির দেহাবশেষ খুঁজে পাননি বনকর্মীরা। সংশ্লিষ্ট পরিবারকে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বন দপ্তর। মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত হলে আরও ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ওই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন রেঞ্জার অফিসাররা।

আরও পড়ুন
শিকারি হয়েও ব্যাঘ্র-সংরক্ষণের পক্ষে সওয়াল! জীবদ্দশাতেই বিতর্কে জিম করবেট

বনকর্মীদের অনুমান, মহিলা চিতাটির বয়স হয়েছিল ৮ বছর। তবে মানুষখেকো চিতা শিকারের ঘটনা এই প্রথম নয়। চলতি বছরে উত্তরাখণ্ডে এই নিয়ে ৭টি মানুষখেকো চিতাকে হত্যা করা হল। সব মিলিয়ে চিতার আক্রমণে এবছরে মৃত্যুর সংখ্যা ১৯। জখম হয়েছেন তারও বেশি সংখ্যক মানুষ। এমনকি শেষ ১০ দিনে ৫টি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে রুদ্রপ্রয়াগে। যা যথেষ্ট উদ্বেগের ঘটনাই বটে। 

আরও পড়ুন
স্বাধীনতার বছরেই বিলুপ্ত এশিয়াটিক চিতা, আনা হচ্ছে আফ্রিকা থেকে

তবে বার বার কেন ঘটছে এমন ঘটনা? বনকর্মীদের মতে, ৭টি চিতাই কোনো না কোনোভাবে আহত হয়েছিল। প্রতিক্ষেত্রেই হয় ক্যানাইন দাঁতের ক্ষয়, নয়তো থাবার ক্ষতের চিহ্ন শনাক্ত করেছেন বনকর্মীরা। স্বাভাবিক শিকারের ক্ষমতা লোপ পাওয়ার কারণেই বার বার জনবসতিতে হানা দিচ্ছে আহত চিতারা। কিন্তু একমাত্র শিকারেই কি সমাধান হবে এই সমস্যার? প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদরা। আহত চিতাদের সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাই বা নেই কেন এত বছর পরেও, উঠছে সেই প্রশ্নও। তবে নিরুত্তর প্রশাসন…

আরও পড়ুন
গত দু’শতকে ভারত থেকে বিলুপ্ত ৯০ শতাংশ চিতাবাঘ, জানাচ্ছে বাঙালির ববেষণা

Powered by Froala Editor