ব্রাজিলের ক্লাবে ফুটবল খেলেন মহাত্মা গান্ধী!

অহিংস আন্দোলনেই ভরসা ছিল তাঁর। আজীবন প্রেরণ করেছেন শান্তির বার্তা। মহাত্মা গান্ধী। ভারত তো বটেই, গোটা বিশ্বজুড়েই তিনি পরিচিত শান্তির দূত হিসাবে। অথচ, তাঁর নামের আগেই যদি ‘আক্রমণাত্মক’ শব্দবন্ধটি ব্যবহৃত হয়, তবে খানিক চমকে উঠতে হয় বৈকি। 

তবে এমন খবর হামেশাই দেখা যায় ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমে। না, আমাদের জাতির জনক গান্ধীজি নন। এখানে যে মহাত্মা গান্ধীর (Mahatma Gandhi) কথা বলা হচ্ছে, তিনি ব্রাজিলের পেশাদার ফুটবলার। খেলেন ব্রাজিলের প্রথম শ্রেণির ফুটবল ক্লাব আইপোরায়। অবশ্য বর্তমানে তাঁকে লোন নিয়েছে ব্রাজিলের আরেক প্রথম সারির ক্লাব অ্যাথলেটিকো গোয়ানিজ।

মহাত্মা গান্ধী হেবেরপিও মাত্তোস পাইয়ার। ১৯৯২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ব্রাজিলের গোয়ানিয়ায় জন্ম মহাত্মার। ছোটো থেকেই ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ ছিল মহাত্মার। বাড়িতেও খেলাধুলোর পরিবেশ ছিলই। ফলে, অল্পবয়সেই পেশাদার ফুটবলে হাতেখড়ি হয় মহাত্মার। কেরিয়ার শুরু হয়েছিল অ্যাথলেটিকো গোয়ানিজেই। ২০১১ সালে এই ক্লাবের হয়েই প্রথম শীর্ষ ডিভিশনের ক্লাব প্রতিযোগিতা খেলেন তিনি। ব্রাজিলের শীর্ষ লিগ সিরি-এ-তে বেশ কিছু নজরকাড়া গোল রয়েছে ৩১ বছর বয়সি এই ব্রাজিলিয়ান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের। সেইসঙ্গে চকিতে আক্রমণ, তাঁর বড়ো হাতিয়ার। আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে মাঝেমধ্যেই সংবাদপত্রে জায়গাও করে নেন ব্রাজিলের মহাত্মা। আসলে শুরুতে স্ট্রাইকার হিসাবেই অভিষেক হয়েছিল তাঁর। প্রথম সিজনে ১১ ম্যাচে ১০টি গোলও করেছিলেন তিনি। পরে স্থান বদল করে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে নেমে আসেন মহাত্মা। ব্রাজিলের প্রথম শ্রেণির ফুটবলে নিজের দলকে একবার চ্যাম্পিয়ন ও একবার রানার-আপও করেছেন তিনি। 

তবে যে প্রশ্নটা সকলের মনেই আসা স্বাভাবিক, সেটা হচ্ছে এত নাম থাকতে এমন আদ্যন্ত বাঙালি নাম রাখতে গেলেন কেন ‘ফুটবলার মহাত্মা’-র বাবা-মা? হ্যাঁ, এর পিছনেও লুকিয়ে রয়েছে ভারতের জাতির জনক গান্ধীজি। আসলে কর্মসূত্রে মহাত্মার বাবা দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে থাকার সময়ই, গান্ধীজির অহিংস আন্দোলন সম্বন্ধে জানতে পারেন তিনি। উদ্বুদ্ধ হন গান্ধীজির মতাদর্শে। এও জানতে পারেন, গান্ধীজির হাত ধরেই নাকি দক্ষিণ আফ্রিকায় গড়ে উঠেছিল অ-শ্বেতাঙ্গদের প্রথম ফুটবল ক্লাব— ‘ট্রান্সভাল ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন’। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এই ক্লাবের মাধ্যমেই সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করেছিলেন তিনি। গান্ধীজির এই কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ হয়েই, তাঁর নামানুসারে সন্তানের নাম ‘মহাত্মা গান্ধী’ রেখেছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের বাবা। 

তবে এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ব্রাজিল তো বটেই, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও বহু মানুষ রয়েছেন, যাঁদের নাম ‘মহাত্মা’ কিংবা ‘গান্ধী’। গান্ধীজির মতাদর্শ ও যাপন যে আজও অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছে বহু মানুষকে, তারই প্রমাণ দেয় সন্তানের এধরনের নামকরণ…

Powered by Froala Editor