১০ বার এভারেস্ট-জয়ের বিশ্বরেকর্ড, ‘মোস্ট পাওয়ারফুল উইম্যান’ খেতাব লাকপা শেরপার

২২ বছর আগের কথা। ২০০০ সালে প্রথম নেপালি মহিলা অভিযাত্রী হিসাবে সফলভাবে মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণ এবং অবতরণ করেছিলেন তিনি। সম্প্রতি তাঁর মুকুটে জুড়েছে আরও এক পালক। গত ১২ মে প্রথম মহিলা হিসাবে দশমবার এভারেস্ট-জয় করে গিনেস বুকের পাতায় নাম তুলেছিলেন লাকপা শেরপা (Lhakpa Sherpa)। এবার এই কৃতিত্বের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোস্ট পাওয়ারফুল উইম্যান’ (Most Powerful Woman) খেতাব পেতে চলেছেন তিনি। আগামী অক্টোবর মাসে তাঁকে এই বিশেষ সম্মাননা প্রদান করবেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। 

প্রথম মহিলা হিসাবে এভারেস্ট-জয়ের বিশ্বরেকর্ডেই সীমাবদ্ধ নয় লাকপার কৃতিত্ব। তাঁর বৈচিত্রময় জীবন যে-কারোর কাছেই অনুপ্রেরণাদায়ক। এভারেস্টের গা ঘেঁষা মাকালু শৃঙ্গের দুর্গম এক নেপালি জনপদে বড়ো হয়ে ওঠা লাকপার। ছিল না বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য পরিষেবা। কোনোদিন প্রথাগত শিক্ষারও সুযোগ পাননি লাকপা। কারণ, ছোট্ট প্রাথমিক স্কুল থাকলেও, সেখানে কেবলমাত্র ছেলেরাই অনুমতি পেতেন পড়াশোনা করার। 

তবে জীবন অন্য পাঠ দিয়েছে দিয়েছে তাঁকে। বাবা ছিলেন পশুপালক। সেইসঙ্গে পর্বতারোহণের মরশুমে অভিযাত্রীদের গাইড হিসাবে সামিল হতেন নানান অভিযানে। তাঁর থেকেই লাকপা শিখেছিলেন পাথর ঠুকে আগুন জ্বালানোর কৌশল, বাঁশের মাধ্যমে পর্বতাভিযানের প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি থেকে পর্বতারোহণ। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনোটাই তাঁকে শেখাননি তাঁর বাবা। কারণ? ওই যেন তিনি মেয়ে…

প্রতিটি এভারেস্ট অভিযানেই অভিযাত্রীদের সঙ্গ দেন শেরপারা। তাঁরা মূলত নেপালেরই বাসিন্দা। কিন্তু তা সত্ত্বেও, একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পর্বতাভিযান নিষিদ্ধ ছিল নেপালের মহিলাদের ক্ষেত্রে। ১৯৯৩ সালে প্রথম নেপালি মহিলা হিসাবে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান পাসাং লামু শেরপা। তবে জীবিত অবস্থায় ফিরতে পারেননি তিনি। অবতরণের পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনার পর নেপালে আরও জাঁকিয়ে বসেছিল সেই মিথ। 

আরও পড়ুন
এভারেস্টের চূড়া থেকে প্যারাগ্লাইডিং, নজির দক্ষিণ আফ্রিকার পিয়ের কার্টারের

এইসব প্রতিবন্ধকতা, বিশ্বাস-কুসংস্কারের বেড়াজাল পেরিয়েই ২০০০ সালে এভারেস্টে পাড়ি জমিয়েছিলেন লাকপা। তৈরি করেছিলেন ইতিহাস। এরপর ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই ধারাবাহিকভাবে এভারেস্টের চূড়ায় নেপালের পতাকা উড়িয়েছেন তিনি। বিজয়রথ থামেনি ২০২২-এও। তাছাড়াও প্রথম নেপালি মহিলা হিসাবে ঝুলিতে পুরেছেন মাকালু এবং মানসলু জয়ের রেকর্ড। ভেঙেছেন সমাজের প্রচলিত ট্যাবু।

আরও পড়ুন
ডাক্তার-দম্পতির এভারেস্ট জয়

২০০৫ সালে এক মার্কিন পর্বতারোহীকে বিবাহ করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রই তাঁর ঠিকানা। সেখানে ট্রাকে পণ্য লোডিং-আনলোডিং কাজ করেন লাকপা। না, প্রথাগত শিক্ষার অভাব বলে এই কাজ নয়। নিজের শরীরকে সুস্থ-সতেজ রাখতেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত। তাঁর বক্তব্য, এই কাজের জন্য পর্বতাভিযানের বাড়তি কোনো অনুশীলনের প্রয়োজন পড়ে না তাঁর। পাশাপাশি এই আয় থেকে সঞ্চয় জমিয়েই কয়েক বছর অন্তর তিনি পাড়ি দেন নেপালে। মাউন্ট এভারেস্টের ডাকে। এই জীবনযুদ্ধই কোথাও গিয়ে যেন অনন্য করে তুলেছে ৪৮ বছর বয়সি পর্বতকন্যাকে। তিনিই যে ‘মোস্ট পাওয়ারফুল উইম্যান’— তাতে আর সন্দেহ কই?

আরও পড়ুন
মহারাষ্ট্রের বস্তি থেকে পায়ে হেঁটে এভারেস্ট, অনটনকে হারিয়ে নজির তরুণের

Powered by Froala Editor