মেক্সিকোয় উদ্ধার মায়া সভ্যতার প্রাচীনতম স্থাপত্য, আয়তনে গিজার পিরামিডের দেড়গুণ

আজ যেখানে আমেরিকা মহাদেশ, একসময় সেখানেই ছিল প্রাচীন মায়া সভ্যতা। আজও সেদেশের মাটির নিচে, জঙ্গলের মাঝে পড়ে আছে সেইসব বসতির চিহ্ন। তেমনই একটি মন্দির ছিল মেক্সিকোর জঙ্গলে। ছিল না বলে বলা উচিত আজও আছে। তবে এখন আর আলাদাভাবে সেই মন্দির চেনা যায় না। প্রত্নতাত্ত্বিকরাও হয়তো খেয়াল করতেন না। কিন্তু এখন তাঁদের হাতে আছে আধুনিক একটি প্রযুক্তি। যার নাম লাইডার বা লাইট ডিটেকটিং অ্যান্ড রেঞ্জিং। আর এই প্রযুক্তির সাহায্যেই সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া গেল মায়া সভ্যতার সবচেয়ে পুরনো এবং বৃহত্তম স্থাপত্যের নমুনা।

পৃথিবীর বৃহত্তম স্থাপত্যগুলির কথা বললে আমাদের প্রথমেই মাথায় আসে মিশরের গিজার পিরামিডের কথা। এর আয়তন ২৬ লক্ষ কিউবিক মিটার। তবে আশ্চর্য হলেও সত্যি, মেক্সিকোয় পাওয়া এই মন্দিরের আয়তন প্রায় তার দেড়গুণ। ৩৮ লক্ষ কিউবিক মিটার জায়গার উপরে তৈরি স্থাপত্যটি কোথাও কোথাও ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু। আর এই গোটাটাই তৈরি হয়েছে আনুমানিক ১০০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে। 

মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে জেড পাথরের কুঠার এবং আরও কিছু মূল্যবান সম্পদ। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, মন্দিরের মধ্যে কোথাও কোনো প্রথম সারির দেবতার উল্লেখ নেই। যেসব দেবদেবীর কথা আছে, তাদের পরবর্তীকালের মায়ানরা খুব উঁচুতে স্থান দিতেন না। তবে ঐতিহাসিক তাসেকি ইনোমাটার অনুমান, সেই প্রাচীনকালে হয়তো দেবদেবীর মধ্যে উচ্চ-নিচ বিভাজন হয়নি। মানুষের মধ্যেও হয়তো ছিল না কোনো ভেদাভেদ। প্রত্যেকে মিলেমিশেই গড়ে উঠত আদিম সাম্যবাদী সমাজ। পরবর্তীকালে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ গড়ে উঠলে দেবদেবীর চরিত্রেও তার ছায়া পড়ে।

মায়া সভ্যতার এই প্রাচীন এবং সুবৃহৎ মন্দিরটি যে প্রত্নতাত্ত্বিকদের আকর্ষণ করবে, তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে! তবে তাঁরা উচ্ছ্বসিত লাইডার প্রযুক্তির এই সাফল্য দেখে। ৪০এর দশকে রেডিও কার্বন ডেটিং প্রযুক্তির সাহায্যে আমূল বদলে গিয়েছিল প্রত্ন গবেষণার ধ্যানধারণা। সেটা একধরনের বিপ্লব বৈকি। আর লাইডার প্রযুক্তি যেন দ্বিতীয় একটি বিপ্লব ঘটিয়ে দিল। অনেক সময়েই প্রত্ন গবেষণার জন্য নিসর্গ প্রকৃতিকে ধ্বংস করে ফেলতে হয়। গভীর জঙ্গল বা পাহাড়ের প্রতিকূল অবস্থানে অনুসন্ধান চালানোর আর কোনো উপায় এতদিন ছিল না। কিন্তু এবার লেজার রশ্মির সাহায্যে সেই অবগুণ্ঠিত ইতিহাস পুরোটাই হাজির হবে প্রত্নতাত্ত্বিকদের সামনে। ঠিক যেভাবে এই বিরাট মন্দিরের আঁতিপাতি অনুসন্ধান করার জন্য মেক্সিকোর বনভূমির কোনো ক্ষতি হয়নি। পরিবেশ রক্ষাই তো আজকের সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। কিন্তু গবেষণার প্রয়োজন তো উপেক্ষা করা যায় না। সেই দ্বন্দ্বের অবসানের সময় এবার উপস্থিত।

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More