শিল্পের খিদে মেটাতে ভিন্নপথে আত্মানুসন্ধান কে-পপ গায়কদের

আজ থেকে বছর পাঁচেক আগেও বিদেশি গান বলতে কেবলমাত্র ইংরাজিকেই বুঝত বাঙালি। ফ্রেঞ্চ কিংবা স্প্যানিশ গানের ভক্তের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে চলতি দশকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে কে-পপ বা কোরিয়ান পপ’-এর জনপ্রিয়তা। মুখে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিটিএস, সুপার জুনিয়র, উইনার-এর মতো ব্যান্ডের নাম। কিন্তু শুধুই কি গান? না, বরং সঙ্গীত দুনিয়ার বাইরে সমসাময়িকতাকে ধরতে শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমগুলিকেও বেছে নিচ্ছেন দক্ষিণ কোরিয়ার পপ-তারকারা (K-pop Artists)। নতুন করে জন্ম দিচ্ছেন ‘শিল্প’-বিপ্লবের।

দক্ষিণ কোরিয়ার এই অভিনব শিল্প বিপ্লবের অন্যতম তিন কাণ্ডারি হলেন— কে-পপ ব্যান্ড ‘সুপার জুনিয়র’-এর গায়ক হেনরি লাউ, কে-পপ গ্রুপ-এর সদস্য ও র‍্যাপার ওহনিম ওরফে মিনো এবং সেউং-ইউন। তিন শিল্পীই পৃথক পৃথকভাবে সফল তাঁদের সঙ্গীত-কেরিয়ারে। অভিনয়তেও কম যান না কেউ-ই। কিন্তু এসবের বাইরে নিজেকে প্রকাশ করতে কেউ বেছে নিয়েছেন চিত্রশিল্প, কেউ বার আলোকচিত্রকে। 

এবার তাঁদের শিল্পই প্রদর্শিত হল লন্ডনের খ্যাতনামা সাচি গ্যালারিতে। ১০ থেকে ১৪ অক্টোবর টানা পাঁচদিন চলল ‘স্টার্ট’ নামাঙ্কিত এই প্রদর্শনী। আর তা নিয়ে ব্রিটেনের মুলুকেও উত্তেজনা কম ছিল না। প্রদর্শনীর আগে থেকেই হাজার হাজার ডলারের বিনিময়ে গায়কদের আঁকা কিংবা ক্যামেরাবন্দি ছবি সংগ্রহ করতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন কে-পপ ভক্তরা। শুধু মিনো, ইউন কিংবা হেনরি লাউ-ই নন, সব মিলিয়ে প্রায় ৭০-এর বেশি কোরিয়ান পপ-শিল্পীর কাজ প্রদর্শিত হয় লন্ডনের এই প্রদর্শনীতে।

আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী পাপিয়ার-মাশে শিল্প

তবে এই প্রথম নয়। এর আগে গতবছর জুন মাসে সিওলেও আয়োজিত হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ান সঙ্গীত শিল্পীদের আঁকা ছবির প্রদর্শনী। দক্ষিণ কোরিয়ার অভ্যন্তরে সেখানকার তারকাদের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী যে সফল হবে, তা আর নতুন করে বলার দরকার নেই। তবে সেই সাফল্যই যেন এবার ভিন্ন মাধ্যমের ক্ষেত্রেও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তাঁদের পৌঁছে দিল আন্তর্জাতিক স্তরে। 

আরও পড়ুন
শেষ মুহূর্তের বায়নায় হিমশিম খাচ্ছে বর্ধমানের 'শোলা শিল্পগ্রাম'

প্রশ্ন থেকে যায়, হঠাৎ পেইন্টিং কিংব ফটোগ্রাফিকেই বেছে নিচ্ছেন কেন কোরিয়ান সঙ্গীত তারকারা? ইউনের কথায়, নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার জন্যই এই ভিন্ন মাধ্যমকে বেছে নেওয়া। ক্রমশ জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি যেন সঙ্গীতের দুনিয়াতে তাঁদের কোণঠাসা করে তুলেছে। ফুরিয়ে আসছে নিজেকে প্রকাশ করার ফুরসৎটুকুও। জনপ্রিয়তার স্বার্থে কেবলমাত্র কে-পপের রীতি মেনেই প্রেম-বিচ্ছেদের গান লিখতে হচ্ছে তাঁদের। তৈরি করতে হচ্ছে ‘হিট’ গান। সেখানে নিজেকে প্রকাশ করতে চাইলেও আটকা পড়তে হচ্ছে প্রযোজকদের কাছে। আর সেই জন্যই চিত্রশিল্প কিংবা অন্য মাধ্যমকেই বেছে নিচ্ছেন তাঁরা। কোভিড মহামারী চলাকালীন সময়ে তাঁদের মধ্যে যেন আরও বেড়ে গিয়েছে নিজেকে প্রকাশ করার খিদে।

আরও পড়ুন
টাকা নিয়েও পাঠালেন ‘ফাঁকা ফ্রেম’, অভিনব প্রতিবাদ ড্যানিশ শিল্পীর

তবে অস্বীকার করার জায়গা নেই, এই ঘটনা সামগ্রিকভাবে ঋদ্ধ করছে কোরিয়ান সংস্কৃতিকে। এমনকি কোরিয়ান সঙ্গীত-ব্যক্তিত্বদের আঁকা ছবি দেখলেও বিশ্বাস করা দায় যে এই ছবি কোনো পেশাদার চিত্রশিল্পীর হাতের আঁকা নয়। বিগত এক দশকে সঙ্গীতের পাশাপাশি সাহিত্য এবং চলচ্চিত্রেও গোটা বিশ্বে বেশ ভালো মতোই প্রভাব বিস্তার করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। এবার কে-পপ আর্টিস্টরা যেন শিল্পজগতে আরও একটা দিগন্ত খুলে দিলেন বিশ্বের সামনে… 

Powered by Froala Editor