অস্বাভাবিক পথ-পরিবর্তন কোশী নদীর, কেন?

হিমাচল, উত্তরাখণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশ-জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে গঙ্গার অসংখ্য উপনদী (Tributary)। যার মধ্যে অন্যতম কোশী। তবে বিগত দেড় দশকে ক্রমাগত পথ বদলে চলেছে এই নদী। আর তার জন্য গৃহহীন হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। শুধু কোশীই নয়, ভূ-প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে সব নদীই তাদের গতিপদ বদল করে থাকে। তবে কোশীর ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু অন্যরকম। তার এই গতিপথ বদল স্বাভাবিক নয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় এমনটা দাবি করলেন গবেষকরা।

২০০৮ সালের কথা। সেবার বন্যায় ভেসেছিল উত্তর ভারত। আর তারপরেই কোশী (Koshi) তার পুরনো গতিপথ বদল করে প্রবাহিত হতে শুরু করে নতুন গিরিখাতে। বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন ৩০ লক্ষাধিক মানুষ। প্রাণ গিয়েছিল প্রায় আড়াইশো মানুষের। টেক্সাসের অস্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের অভিমত, এমন আকস্মিক গতিপথ পরিবর্তনের ঘটনা মরুভূমি অঞ্চল এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলের নদীতে দেখা গেলেও, পার্বত্য অঞ্চলে তা বিরল বললেই চলে। কারণ, নির্দিষ্ট গিরিখাতের মধ্যে দিয়েই প্রবাহিত হয় পাহাড়ি নদী। তবে হঠাৎ কেন গতিপথ বদল করল কোশী? 

খ্যাতনামা ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে অস্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গবেষক পাওলা প্যাসালাকোয়া এবং অ্যান্ড্রু যে মুডি-র এই সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ঘটনাকে মূলত তিনটি গোত্র— অ্যাভালসন, এক্সট্রিম সেডিমেন্টেড জোন এবং ব্যাকওয়াটার ফ্লো-তে ভাগ করেছেন তাঁরা। তার মধ্যে প্রথম ঘটনাটির জন্য গতিপথ বদল করছে কোশী। আর তার নেপথ্যে রয়েছে মানুষের কার্যকলাপ। সাধারণত, যে কোনো খরস্রোতা নদীর ক্ষেত্রেই পলি তৈরির প্রক্রিয়া চলে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। নদীর দ্রুত প্রবাহই তার অন্যতম কারণ। তার ওপরে হিমালয় আগ্নেয়শিলা দিতে তৈরি নয়, ফলে সেখানকার ভূপ্রাকৃতিক গঠনও তুলনামূলকভাবে বেশি ভঙ্গুর। ফলে, অধিক পরিমাণে পলি তৈরি করে হিমালয়ের পাহাড়ি নদীগুলি। 

কোশীর ক্ষেত্রেও ঘটে এই একই ঘটনা। আর এই পলির অধিকাংশটাই জমা হয় নদীর গতিপথের দু’ধারে। গঙ্গার মূল প্রবাহে পৌঁছানোর আগেই তা থিতিয়ে পড়ে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে। বিগত দু-তিন দশকে বন্যা প্রতিরোধের জন্য কোশীর দুই ধারেই তৈরি করা হয়েছে বাঁধ। পর্যটন শিল্পের উন্নতির জন্য তৈরি করা হয়েছে কংক্রিটের ভিউ স্পট। এই ঘটনাই পারতপক্ষে গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য করছে কোশীকে। 

আরও পড়ুন
মানুষের মতোই পরিচয়, অধিকার নদীর; অভিনব উদ্যোগ কানাডায়

সমীক্ষা বলছে, আগে প্রায় ২০০ কিলোমিটার অঞ্চলজুড়ে পলি ছড়িয়ে দিতে পারত কোশী। এখন সেই জায়গা কমে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ কিলোমিটারে। ফলে, মূল খাতের দু’ধারে পলি জমা না হয়ে, তা জমা হয়েছে কোশীর মূল খাতের গর্ভে। কমেছে কোশীর নাব্যতা। পরবর্তীতে সমগ্র অঞ্চল বন্যায় ভাসলে, নিম্নতর কোনো গিরিখাতকে নতুন গতিপথ হিসাবে বেছে নিয়েছে কোশী। 

আরও পড়ুন
একের পর এক ভাসমান নরদেহ, কেনিয়ার নদী ঘিরে রহস্য

তবে এখানেই কি সমস্যার শেষ? না, গবেষকদের মতে নতুন গতিপথের দু’ধারেও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প। কাজেই এই গতিপথও আগামীদিনে বদলে ফেলতে পারে কোশী। অন্যদিকে কোশী ছাড়াও একাধিক উত্তর-ভারতীয় নদীর ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে একই ঘটনা, সে-ব্যাপারেও সতর্ক করছেন গবেষকরা… 

আরও পড়ুন
মৃতপ্রায় সরস্বতী নদীকে বাঁচাতে বাঁধের পরিকল্পনা

Powered by Froala Editor