একের পর এক ভাসমান নরদেহ, কেনিয়ার নদী ঘিরে রহস্য

ভোরের স্নিগ্ধতা উপভোগ করতে হাজির হয়েছিলেন শান্ত নদীতটে। কিন্তু সেখানে হাজির হতেই বিকট এক দুর্গন্ধ ঝাপটা দিল নাকে। হ্যাঁ, প্রাণীদেহ পচনের দুর্বিষহ ঘ্রাণ। কুকুর, বিড়াল মরল নাকি? নদীর আরও কাছে এগিয়ে যেতেই নজরে এল দৃশ্যটা। নদীরে চরে আটকে রয়েছে এক পচা-গলা মানুষের মৃতদেহ! আর তার ওপর আহারাদি সারছে কাক-পক্ষী-শকুন।

এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্যই ‘স্বাভাবিক’-এর রূপ পেয়েছে পশ্চিম কেনিয়ার (Kenya) ইয়ালা নদীতে (Yala River)। হ্যাঁ, বিগত কয়েক বছর ধরে হামেশাই ইয়ালা অঞ্চলে নদীবক্ষে ভেসে যেতে দেখা যায় মানুষের লাশ। স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাদের সাহায্যে সেসব মৃতদেহ উদ্ধার করা হলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুযোগ থাকে সেই মৃতদেহ শনাক্তকরণের। কেননা, পচে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুখমণ্ডল চেনাই দায় হয়ে উঠেছে ততদিনে। আর জিন টেকনোলজির মতো উন্নতমানের প্রযুক্তি ততটাও উপলব্ধ নয় কেনিয়ার মতো দেশে। কাজেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির পরিবার খোঁজ না করলে, সমাধিস্থ করা হয় সেই দেহ। ধামা চাপা পড়ে যায় এইসব অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ ও রহস্যও।

কিন্তু কোথা থেকে আসে এইসব মৃতদেহ? আর তাঁদের এই মৃত্যুর কারণই বা কী? স্থানীয় স্বেচ্ছসেবী সংস্থা ‘হাকি আফ্রিকা’-র অভিমত, প্রতিটি মৃত্যুই অস্বাভাবিক। এবং আরও আশ্চর্যকর বিষয় হল, তাদের অনুমান ঘটনারগুলির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রশাসনই। হ্যাঁ, অবাক লাগলেও এমনটাই সত্যি। এই ‘গণহত্যা’ আদতে কেনিয়ার পুলিশ এবং সেনাবাহিনীরই কাজ। কারণ, পুলিশ প্রশাসন বা সেনাবাহিনী ছাড়া এত নিপুণভাবে নরহত্যা সম্ভব নয় বলেই বিশ্বাস তাদের। স্বাভাবিকভাবে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই মৃত ব্যক্তির শরীরে অত্যাচার কিংবা নির্যাতনের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন সংস্থার কর্মীরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বস্তাবন্দি কিংবা ভারী পাথরের সঙ্গেও বাঁধা ছিল সেইসব মৃতদেরহ। অথচ, সেই দেহে আঙুলের ছাপের লেশ মাত্র নেই। কিন্তু কেন নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে অগণিত মানুষকে?

এক কথায় উত্তর বৈষম্য। গুটি কয়েক যেসকল মৃতদেহকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে তাঁদের পরিবারের লোকজনের সূত্রে, সেখান থেকেই জানা গেছে তাঁদের বাসস্থান কেনিয়ার বস্তি অঞ্চলে। তাঁরা প্রত্যেকেই অর্থনৈতিক পিরামিডের নিচুর তলার মানুষ। আবার কিছু ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিরা ছিলেন জেলের আসামি। সেখান থেকে উধাও হয়ে যাওয়ার পর তাঁদের মৃতদেহ মেলে নদীর জলে। 

আরও পড়ুন
পৃথিবীর সবচেয়ে ‘পৈশাচিক’ হাতের লেখা, কী রহস্য লুকিয়ে এই হস্তাক্ষরে?

যদিও এই রহস্যের নির্দিষ্ট কোনো সমাধান মেলেনি এখনও। অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গেছে প্রশাসনও। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিদের বাড়ি থেকে অন্ততপক্ষে ২০০ কিলোমিটার দূরে তাঁদের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ায়, হত্যার সুযোগ্য কোনো প্রমাণও নেই হাতের মুঠোয়। 

আরও পড়ুন
পৃথিবীর একমাত্র চলমান জিপ কোড, কী রহস্য আমেরিকার এই নৌকার?

কিছুদিন আগে, কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় গঙ্গাবক্ষে ভাসতে দেখে গিয়েছিল সার সার মানব মৃতদেহ। তার সঙ্গেও প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে ছিল দারিদ্র। মহামারীর কঠিন পরিস্থিতিতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ভার বহন করতে না পেরে প্রিয়জনদের এভাবেই বিদায় জানানোর পথ বেছে নিয়েছিলেন মানুষজন। কিন্তু দারিদ্রও যে এভাবে অপরাধ হয়ে উঠতে পারে, তারই জ্বলন্ত উদাহরণ কেনিয়া। এমন আরও কত অস্বাভাবিক মৃত্যু দেখতে হবে কেনিয়াকে? সেই উত্তর নেই কারোর কাছেই। উদ্বেগ বাড়ছে গোটা দেশজুড়ে। আর এই রহস্যের ইন্দ্রজালের মধ্যে ‘মৃতের নদী’ তকমা নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে ইয়ালা…

আরও পড়ুন
কোনো কাজ না-করেই পদোন্নতি! রহস্য ফাঁস করলেন তথ্যপ্রযুক্তিকর্মী

Powered by Froala Editor

Latest News See More