মরচে পড়ছে পৃথিবীর অভ্যন্তরে? ইঙ্গিত বিজ্ঞানীদের

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় কাস্ট আয়রন বা কাঁচা লোহার তৈরি কোনো সামগ্রীর রং। লোহার সামগ্রীর ওপরে জমতে থাকে বাদামি রঙের এক বিশেষ পদার্থের প্রলেপ। হ্যাঁ, মরচের কথাই হচ্ছে। যা আদতে লোহারই একপ্রকার অক্সাইড। আর্দ্র বাতাসের সঙ্গে লোহার জারণ বিক্রিয়ার তৈরি হয় এই বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ। তবে শুধুই কি ব্যবহারিক সামগ্রী? পৃথিবীর কেন্দ্রকও (Earth's Core) তো নির্মিত লোহা এবং নিকেল আয়নের সংমিশ্রণে। সেখানেও কি মরচে (Rust) পড়তে পারে?

হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আনলেন গবেষকরা। শুধু খোলা হাওয়াতেই নয়, পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের ২৯০০ কিলোমিটার নিচে উত্তপ্ত, আয়নিত ও গলিত অবস্থাতেও লোহার মধ্যে মরচের আস্তরণ তৈরি হতে পারে। ল্যাবরেটরিতে তা পরীক্ষার মাধ্যমেই প্রমাণ করলেন গবেষকরা। 

সরাসরি জল ও অক্সিজেন ছাড়াও মরচে তৈরি হতে পারে কিনা, তা নিয়েই মূলত গবেষণা চালাচ্ছিলেন ফ্লোরিডা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিমভাবে ১০ লক্ষ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ তৈরি করে, তাঁরা গলিত লোহার সঙ্গে বিক্রিয়া করান বিভিন্ন অক্সাইড জাতীয় বিভিন্ন খনিজ আকরিকের। আর তাতেই লোহার ওপর তৈরি হয় মরচের আস্তরণ। তবে আমরা সাধারণত যে মরচেকে চিনি, তার থেকে খানিকটা আলাদা এই বিশেষ মরচের রাসায়নিক গঠন। সরাসরি জল ও অক্সিজেন না পাওয়ায়, অক্সাইড-হাইড্রোক্সাইড গোত্রের উপাদান তৈরি হয় এই বিক্রিয়ায়।উল্লেখ্য, পৃথিবীর অভ্যন্তরেও এই একই পরিস্থিতি তৈরি হয় ভূপৃষ্ঠের চাপে। ফলে, সেখানেও লোহার ওপর মরচে তৈরির ঘটনা ঘটছে বলেই দাবি গবেষকদের। 

গবেষকদের এই অনুমান সঠিক হলে, তা নিঃসন্দেহে আশঙ্কাজনক। কারণ, পৃথিবীর কেন্দ্রে থাকা গলিত ও আয়নিত লোহা ও নিকেলই প্রাণ পৃথিবীর। এই আয়নিত কণার ঘূর্ণনের কারণে তৈরি হয় পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র। ক্রমাগত মরচে তৈরির ফলে, পৃথিবীর কেন্দ্রক বা কোর কঠিনে পরিণত হলে চৌম্বকক্ষেত্র হারাতে পারে পৃথিবী। তাতে যেমন টেকটোনিক পাতের গতি বন্ধ হয়ে যাবে, তেমনই চৌম্বকক্ষেত্রও হারাতে পারে পৃথিবী। পরিণতি হতে পারে মঙ্গলগ্রহের মতো। 

আরও পড়ুন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম, ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পৃথিবী

যদিও এই সবটাই অনুমান। পৃথিবীর কেন্দ্রে আদৌ এই বিক্রিয়া চলছে কিনা, সে-ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলা বেশ কঠিন। আর যদি এমনটা হয়েও থাকে, তবে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র নষ্ট হতে সময় লাগবে কয়েক লক্ষ বছর। গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা জলবায়ু পরিবর্তনকে হারিয়ে আদৌ কি ততদিন টিকে থাকবে মানব সভ্যতা? কে জানে!

আরও পড়ুন
মিশর নয়, পৃথিবীর প্রাচীনতম মমিদের বাসস্থান চিলি

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পৃথিবী থেকে জল 'চুরি' করছে চাঁদ! দাবি বিজ্ঞানীদের