পৃথিবী থেকে জল 'চুরি' করছে চাঁদ! দাবি বিজ্ঞানীদের

যে জ্যোৎস্নার জন্য চাঁদের পরিচয়, তাও আসলে চুরি করা। সূর্যের আলোকেই যে চাঁদ পৃথিবীতে পাঠায়, তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু শুধু সূর্য থেকেই নয়, পৃথিবী থেকেও নির্দ্বিধায় চুরি করে চলেছে চাঁদ। এমনটাই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, চন্দ্রপৃষ্ঠে এবং চাঁদের গর্ভে যতটুকু জল আছে তার অনেকটাই নাকি পৃথিবী থেকে চুরি করা।

অভাব মেটাতে মানুষ যেমন নানা পথ বেছে নেয়, চাঁদও বেছে নিয়েছে চুরির পথ। শুষ্ক প্রাণহীন এই উপগ্রহে নিজে থেকে জল সৃষ্টির কোনো উপায় নেই। কিন্তু চাঁদের পাথরের ফাঁকে ফাঁকে যে কয়েক জায়গায় জল রয়েছে, এমন কথা বিজ্ঞানীরা নানা সময়ে আন্দাজ করেছেন। এর মধ্যেই নাসার লুনার রেকোনেসাঁ প্রেরিত ছবি থেকে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা গিয়েছে সেই জায়গাগুলি। শুধু চন্দ্রপৃষ্ঠেই নয়, চাঁদের গর্ভেও জল সঞ্চয়ের কিছু পকেট শনাক্ত করা গিয়েছে। কিন্তু কোথা থেকে এল এই জল? এবার তারই সম্ভাব্য উত্তর দিল সায়েন্টিফিক রিপোর্টস পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র।

বিজ্ঞানীদের দাবি, চাঁদের জলের অন্যতম উৎস পৃথিবীর ম্যাগনেটোস্ফিয়ার। প্রত্যেক চান্দ্রমাসের মধ্যে অন্তত ৫ দিন চাঁদ পৃথিবীর ম্যাগনেটোস্ফিয়ারের মধ্যেই অবস্থান করে। তবে সবসময় যে জল তৈরির প্রক্রিয়া ঘটে, এমন নয়। যখন কোনো সৌরঝড় এসে পড়ে, তখনই শুরু হয় সেই প্রক্রিয়া। ম্যাগনেটোস্ফিয়ারের অন্যতম কাজই হল সৌরঝড়ের হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করা। তবে সৌরঝড়ের ধাক্কায় ম্যাগনেটোস্ফিয়ারের চৌম্বক রেখাগুলি খানিকটা নষ্ট হয়ে যায়। আর তখনই চাঁদ তার কাজ শুরু করে। চাঁদই এই ক্ষতিগ্রস্ত চৌম্বক রেখাগুলিকে সারিয়ে তোলে। এই প্রক্রিয়ার সময় হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন আয়ন জুড়ে গিয়ে জলের অণু তৈরি হয়। আর চাঁদ তার দুর্বল অভিকর্ষ শক্তি দিয়েও সেই জলের অণু টেনে নেয় নিজের দিকে।

শুধু সৌরঝড়ের প্রভাবেই নয়, কখনও কোনো বড়ো উল্কা বা ধূমকেতুর আঘাতেও ম্যাগনেটোস্ফিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখনও একই প্রক্রিয়া চলে বলেই অনুমান বিজ্ঞানীদের। এছাড়া চাঁদের বুকেও উল্কা এবং ধূমকেতুর সঙ্গে কিছু জল জমে বলে অনুমান করছেন তাঁরা। যদিও মূল উৎস যে পৃথিবীই, এমনটাই দাবি তাঁদের। বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতিকে যে নামই দিন, সাধারণ চোখে অবশ্য একে চুরি ছাড়া অন্য কিছু বলা চলে না।

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More