রবীন্দ্র সরোবরে স্থাপিত নতুন তিনটি ফোয়ারা, বিঘ্নিত হচ্ছে রোয়িং অনুশীলন

মাত্র কয়েকদিন আগেই প্রমাণ মিলেছিল, আশঙ্কাজনকভাবে কমছে রবীন্দ্র সরোবরের (Rabindra Sarobar) অক্সিজেন মাত্রা। লেকের জলে ভেসে উঠেছিল মাছের মৃতদেহ। আর তারপরেই টনক নড়ে প্রশাসনের। জলের দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য তড়িঘড়ি বসানো হয় তিনটি ফোয়ারা। তবে আদৌ কি উপযুক্ত পরিকল্পনা অবলম্বন করেছিল কেএমডিএ (KMDA)? এবার সেই প্রশ্নই তুললেন কলকাতার রোয়িং ক্লাবের (Rowing Club) সদস্যরা। হ্রদের মাঝে এই ধরনের স্থাপত্য ক্রীড়াচর্চাকে ব্যাহত করবে, এমনটাই অভিযোগ তাঁদের।

গত মঙ্গলবার লেক কর্তৃপক্ষ এবং কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির যৌথ উদ্যোগে ফোয়ারাগুলি স্থাপিত হয়। কিন্তু এই সম্পর্কে কোনোরকম আলোচনাই করা হয়নি রোয়িং ক্লাবের সঙ্গে। বুধবার সকালে রোয়িং-এর অনুশীলন চলার সময়ই ক্লাব কর্তৃপক্ষ এবং রোয়ারদের চোখে পড়ে বিষয়টি। এদিন বিকালে কলকাতার তিনটি রোয়িং ক্লাব— ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাব, লেক ক্লাব এবং বেঙ্গল রোয়িং ক্লাবের কর্মকর্তারা যৌথভাবে শামিল হন প্রতিবাদে।  

সাধারণত রোয়িং বোট পিছনের দিকে চালিত করার সময়, চালকদের দৃষ্টি থাকে গতির বিপরীতে। ফলত, গতিপথে যেকোনো ধরনের বাধাই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে রোয়ারদের জন্য। শুধুমাত্র নৌকারই ক্ষতি নয়, ভয়ঙ্করভাবে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে রোয়ারদের। 


আরও পড়ুন
‘বাধ্য’ হয়েই লিভ-ইন করেন ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীরা, কী সেই কারণ?

রবীন্দ্র সরোবরে রোয়িং-এর ইতিহাস বেশ সুপ্রাচীন। আজ থেকে প্রায় ৯ দশক আগে রবীন্দ্র সরোবরেই স্থাপিত হয়েছিল কলকাতা তথা বাংলার প্রথম রোয়িং ক্লাব। তারপর ধীরে ধীরে উন্নত হয়েছে পরিকাঠামো। গড়ে উঠেছে একাধিক রোয়িং অ্যাকাডেমি। শুধুমাত্র অনুশীলনই নয়, গোটা বাংলার রোয়ারদের একমাত্র প্রশিক্ষণের জায়গাই হল রবীন্দ্র সরোবর। সরোবর-কেন্দ্রিক অ্যাকাডেমি থেকেই উঠে এসেছে একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তারকাও। সেখানে এই ধরনের স্থাপত্য, বাংলার ক্রীড়াচর্চার প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন ক্লাবকর্তারা।

আরও পড়ুন
বসন্তের বিকেল, ঢাকার রবীন্দ্র সরোবর ও বাংলার প্রথম ‘বই বিনিময় উৎসব’

মহামারীর কারণে, রবীন্দ্র সরোবরে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ ছিল রোয়িং অনুশীলন। কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রকোপ খানিকটা কমার পর ফের অনুশীলনে ফিরেছিলেন রোয়াররা। আগামী নভেম্বরে ভোপালে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আন্তর্জাতিক জুনিয়ার টুর্নামেন্ট। সেই প্রতিযোগিতার বাছাই স্লটে অংশ নেওয়ার কথা বাংলার ছ’জন রোয়ারের। ফলে, পুরোদমেই চলছিল অনুশীলন। এমন একটা সময়ে, এই ধরনের স্থাপত্যের প্রতিষ্ঠা যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রীড়াবিদদের।

আরও পড়ুন
রবীন্দ্র সরোবরে ফিরছে পাখি, আমফানের তাণ্ডব কাটিয়ে সুস্থতার পথে শহরের ফুসফুস

তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও মেনকা সিনেমার ঠিক উল্টোদিকেই ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’-এর জন্য বিশালাকার একটি ফোয়ারা স্থাপিত করেছিল রাজ্য সরকার। তার দৌলতেই ব্যাহত হয়েছিল লেকের জলে ২০০০ মিটার রোয়িং-এর অনুশীলন। এবার আরও তিনটি ফোয়ারার প্রতিষ্ঠা ৫০০ মিটারের অনুশীলনকেও কঠিন করে তুলবে বলেই জানাচ্ছেন ক্রীড়াবিদরা।

অন্যদিকে গতকাল কেএমডিএ-র পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়, ফোয়ারাগুলি সরিয়ে হ্রদের জলে অক্সিজেন লেভেল বাড়ানোর বিকল্প পথের সন্ধান করা হচ্ছে। তবে নিশ্চিতভাবে জানানো হয়নি, কত দ্রুত সরিয়ে ফেলা হবে সাম্প্রতিক নির্মাণগুলিকে…

Powered by Froala Editor

More From Author See More