‘বাধ্য’ হয়েই লিভ-ইন করেন ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীরা, কী সেই কারণ?

আজও দুই অবিবাহিত পুরুষ ও মহিলার একসঙ্গে থাকার ঘটনায় সমাজে নানারকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। আর সেই দম্পতির যদি সন্তান থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। সেই সন্তানকেও নানারকম সামাজিক বিদ্রূপের শিকার হতে হয়। এমনকি লিভ-ইন সম্পর্ক নিয়ে ভারতের আইন ব্যবস্থাতেও স্পষ্ট কোনো অবস্থান পাওয়া যায় না। সামাজিকভাবে এখনও অনেকেই মনে করেন, এই সবই পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব। অথচ ভারতের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, পাশ্চাত্য প্রভাবের অনেক আগে থেকেই ভারতে লিভ-ইন সম্পর্কের স্বীকৃতি ছিল। মধ্যযুগে অভিজাত সমাজের মধ্যে প্রচলিত ছিল মৈত্রী-করর প্রথা। এমনকি বৈদিকযুগে গান্ধর্ব বিবাহেও সামাজিক স্বীকৃতি ছাড়াই স্বেচ্ছায় দাম্পত্যযাপনের (Live In) স্বীকৃতি পাওয়া যায়।

তবে ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) আদিবাসী সমাজের (Tribal Community) মধ্যে প্রচলিত পদ্ধতি কিছুটা অন্যরকম। স্বেচ্ছায় নয়, বরং অর্থনৈতিক কারণে তাঁরা বাধ্য হন বিবাহ না করে দাম্পত্যযাপনে। মুণ্ডা, ওঁরাও এবং হো উপজাতির মধ্যে দেখা যায় এই বিশেষ বিবাহ পদ্ধতি। স্থানীয় মানুষরা একে দুকু বিবাহ বলেন। আর এই দম্পতির পুরুষকে দুকুয়া এবং মহিলাকে দুকুনি বলা হয়। যদিও আদিবাসী সমাজে এই ধরনের সম্পর্কের জন্য কাউকে সামাজিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় না। কিন্তু সামাজিকভাবে এই বিবাহকে স্বীকৃতিও দেওয়া হয় না। ফলে সম্পত্তি হস্তান্তর থেকে শুরু করে সন্তানের স্বীকৃতি, কিছুই মেলে না।

তাহলে কেন বিবাহ না করে থাকতে বাধ্য হন আদিবাসী পুরুষ ও মহিলারা? তার কারণ আদিবাসী সমাজের নিয়ম অনুযায়ী বিবাহ করতে গেলে সমাজের সবাইকে আপ্যায়ন করে ভোজ দিতে হবে। আর এই সামর্থ্যটাই থাকে না সকলের। শুধু তাই নয়, কোনো পরিবারে একবার দুকু বিবাহ হলে সেই পরিবারের কাউকেই আর প্রথাগত বিবাহের সুযোগ দেওয়া হয় না। এই সমস্ত কারণেই মুদ্রাষ্ফীতি যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে দুকু বিবাহের ঘটনা। বিবাহের সামাজিক বিধিনিষেধ থেকে বেরিয়ে আসার প্রগতিশীল মানসিকতা থেকে নয়, বরং বিবাহের সামর্থ্য না থাকাতেই এই পথ বেছে নিচ্ছেন তাঁরা। তবে এর মধ্যেই ঝাড়খণ্ডে গড়ে উঠেছে নিমিত্ত নামের একটি সংগঠন। কোল ইন্ডিয়া, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক বা পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের মতো সংস্থা অর্থনৈতিক সাহায্য করছে ‘নিমিত্ত’ সংগঠনটিকে। আর গত কয়েক বছর ধরে দুকু বিবাহিত দম্পতিদের প্রথাগত গণবিবাহের আয়োজন করে চলেছেন তাঁরা। সেখানে কারোর বয়স হয়তো ৭০-এর কোঠা পেরিয়েছে। কারোর ৫-৬ জন সন্তানেরও জন্ম হয়ে গিয়েছে। তাঁরা সবাই নতুন করে বিবাহ করছেন। আর কিছু না হোক, তাঁদের মৃত্যুর পর সন্তান তো সম্পত্তির অধিকারটুকু পাবে। শেষ জীবনে এটুকুই চাহিদা সকলের।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বহু দাম্পত্যজীবন নষ্ট করেছে পৃথিবীর বৃহত্তম মুক্তো— কার অভিশাপে?