লকডাউনে খাবারে টান, ধুঁকতে থাকা ঘোড়াদের পাশে কলকাতা মাউন্টেড পুলিশ

‘মহীনের ঘোড়াগুলি ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে’— বাংলার সঙ্গে ঘোড়াদের সম্পর্কের কথা বললে এই লাইনটিই সবার আগে মাথায় আসে। তবে কলকাতার ময়দানের ঘোড়াগুলো কার্তিক কেন, সবসময়ই ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। অপেক্ষা থাকে মানুষের একটু ছোঁয়ার; পিঠে চড়িয়ে ময়দান ঘোরাবে তারা। সামনে রাখা খড়-বিচালি, কখনও খায় কখনও তাকিয়ে থাকে। হাড় জিরজিরে শরীরগুলো যেন কলকাতার চলমান ইতিহাস। ওই মহীনের ঘোড়াগুলির মতোই শহরের বুকে বেঁচে আছে তারা।

চারিদিকে এখন রোগের হাহাকার। করোনার জেরে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। লকডাউনে স্তব্ধ সারাটা শহর। বিকেলের ময়দানও খাঁ খাঁ করছে। আর তার একান্ত আপন ঘোড়াগুলো? ওরাও ভালো নেই। মালিক, সহিসদের রোজগার হচ্ছে না। আর রোজগার না হলে, ঘোড়াদের জন্য বার্লি, গমের খোসা ও অন্যান্য খাদ্যশস্য কী করে আনবেন? তাঁদের আর্থিক অবস্থা যে সেরকম মজবুত নয়! ময়দানের ঘোড়াগুলির জীবনে তাই জ্যোৎস্না নেই; রয়েছে এপ্রিলের খটখটে রোদ। হাড় বেরনো শরীরগুলো আরও নুয়ে পড়ছে। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঘোড়ার গাড়িগুলোও যেন শ্মশানের মতো স্তব্ধ।

এমনই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এল পুলিশ। কলকাতা মাউন্টেড পুলিশের একটি টিম ময়দান ও হেস্টিংস মাজার এলাকায় ৪১ জন ঘোড়ার মালিকের কাছে ঘোড়াদের প্রয়োজনীয় খাবার তুলে দিল। এর ফলে প্রায় ১৫০টি ঘোড়া শহরের বুকে খেতে পারবে। এই পুরো ব্যবস্থার সহযোগিতায় ছিল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাব। শুধু এখানেই নয়, শহরের পথে থাকা আরও বেশ কিছু ঘোড়ারও খাবারের যোগান দেওয়া হয়েছে। যাতে এই প্রাণীদেরও স্বাস্থ্য ভালো থাকে, কষ্ট না পায়, সেটাই দেখা হচ্ছে। এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে সবাই যাতে ঠিক থাকে, সেটাই তো আমাদের প্রার্থনা!

ছবিঋণ- কলকাতা পুলিশ

Latest News See More